• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৮ | জানুয়ারি ২০০৭ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : বন্দনা সান্যাল

    সুনামির লাইটহাউস

    তীক্ষণ, শীতল ঝোড়ো হাওয়া
          উথালপাথাল ঢেউ,
    অন্ধকারে অন্তরীপে
          বন্ধুরা নেই কেউ ।
    শুধুই আছে ভাঙা পাথর
          নিথর ডাঙা জুড়ে
    রাতজাগা কোন পাখির কান্না
          মিলায় সমুদ্দুরে ।
    তবুও আছে আলোক চক্ষু
          লম্বা বাতিদান
    লাইটহাউস ঘোরায় আলো
          করতে পরিত্রাণ ।
    দাঁড়িয়ে থেকো লাইটহাউস
          প্রলয় পয়োধিতে
    আলো ফেলো ঢেউয়ের মাথায়
          ওই তরণীটিতে ।

    ওতে আছে কিছু মানুষ
          ভালো মানুষ যারা
    তলিয়ে যাবে অন্তরীপও
          বন্ধু মানুষ ছাড়া ।
    আমরা সবাই অন্ধকারে
          অন্তরীপের শেষে
    দাঁড়িয়ে আছি হাত বাড়িয়ে
          ওরা নামুক এসে ॥



    মনে পড়া

    মনে তো পড়বেই !

    যদিও এখন
    মনে পড়া মানে আর কাছে যাওয়া নয়,
    ছুটে গিয়ে হাত ধরা,
    চোখে চোখ রেখে বলা--
    এই তো এলাম !

    কোথায় পাগল হয়ে
    পিউ কাঁহা ডেকে চলে
    হাওয়া ছোটে মালতীর সৌরভমদির,
    পূবের আকাশে উঠি উঠি করে চাঁদ,
    না ফিরে কি থাকা যায় ?

    যদিও এখনো ওঠে চাঁদ
    হাওয়া ছোটে, ডেকে চলে পাখি
    পায়ে পায়ে এসে শুধু
    যায় না দু'হাত ধরা,
    বুকে কান রেখে
    এখন যায় না শোনা
    প্রাণের স্পন্দন ।

    সময় দু'মুঠো ভিক্ষে
    মাঝে মাঝে তবু দিয়ে যায় --
    কিছু গান, কিছু কথা বলা,
    কিছু মনে পড়া
    যার কোনও মানে নেই
    শুধু মনে পড়া ছাড়া ।



    ঝড়ের চোখ

    মনের মধ্যে জ্বলছে ঝড়ের চোখ,
    বাইরে হাওয়া বইছে এলোমেলো
    তোর নৌকোয় নোঙর বাঁধা আছে-
    ঝড়ঝাপটায় তোর কি এলো গেলো !

    তবু একটা সময় কখন ছিলো
    দু:সাহসের সঙ্গী ছিলাম দু'জন,
    ঝড়কে নেহাৎ তুচ্ছ মনে করে
    আকাশটাকে লুঠতে পেরেছিলাম ।

    কোঁচড় ভরা নানা রঙের মেঘ,
    বিনি সূতোয় তারা গেঁথেছিলাম
    কাকে পরাই কাকে পরাই ভেবে
    ঘুরেছিলাম অবুঝ অভিসারে ।

    অথবা খুব মাটির কাছাকাছি
    পদ্মাপারে ভাটিয়ালির গান
    মুঠোর মধ্যে ঝলসে উঠেছিলো
    বানে ভাসা রুপোর খল্সে পুঁটি ।

    কখনও বা ইচ্ছামতী হয়ে
    নিরিবিলি বয়ে চলে ছিলাম,
    কালবোশেখির বজ্রনাদের ভয়ে
    কখনও বা কেঁপে উঠেছিলাম
    আবার কখন ঝড়ের শেষের আলোয়
    একই সঙ্গে গাহন করেছিলাম ।
    কারণ তখন একই অঙ্গে দু'জন
    তখনও ঝড় ভাঙেনি সব কিছু ।

    সময় গেলো, সময় এলো কতো
    বইলো যখন এলোমেলো হাওয়া
    আমি তখন একলা ঘরে বসে,
    তোর নওকো দুলছে ছলোছলো ।
    কবে চলবি নোঙর তুলে ফেলে
    কবে চলবি সাগর ছুঁয়ে ছুঁয়ে
    আমাকে তোর সঙ্গে নিয়ে যা না !
    আসলে তো আমরা একই ছিলাম !
    টুকরো হয়ে ভেঙে গেছি কখন
    সেই কথাটা সময় লিখে রাখে,
    হিসেব রাখে ভাঙা গড়ার খাতায় ।

    ওর সঙ্গে করবো মোকাবিলা
    তুই যদি নিস নোঙর তোলা নায়ে ।


    (পরবাস-৩৮, ডিসেম্বর, ২০০৬)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)