• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৩৮ | জানুয়ারি ২০০৭ | কবিতা
    Share
  • দু'টি অপ্রকাশিত কবিতা : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়



    মরু-হরিণ



    (সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি)

    প্রদীপের শিখা আর নীরব আকাশ
    তারাগুলি মোর মুখে চায় ;
    কালো জলে কী যে ছায়া কাঁপে
    কাঁপে দূর বন ।

    আমি শুধু ভাবি :
    জীবনের আলো আর ছায়া মোহানায়
    বারে বারে পথ ভুল করি ।
    এবার ভুলের বোঝা যাক নেমে যাক -------
    তুলে নিই মুঠি ভরে
    যা পেয়েছি পথের পাথেয় ।
    হয়তো সে সোনার ফসল
    হয়তো সে কিছু নয়-------শুধু ফাঁকি; শুধুই বঞ্চনা,
    হয়তো সে স্বপ্ন-অবসানে -------
    মধ্যাহ্ন কিরণ দীপ্ত উলঙ্গ পৃথিবী ।

    তবু কি ভুলের খেলা হয়ে যায় শেষ ?
    ভুলিতেই যারা ভালোবাসে -------
    তরু ঘেরা নীড় হতে মরুভূমি যাহাদের ডাকে -------
    মনের হরিণ যার চায় শুধু মায়া-মরীচিকা
    তার পথ কোথা অবসান ?
    হেথায় আমার ঘরে প্রদীপের মৃদুশিখা জ্বলে -------
    ছোট প্রেম ভীরু ভালোবাসে ;
    বাতায়ন পর পারে তারাগুলি হাসে লীলাভরে-------
    কাজলা জলে কালো চোখ করে ছলোছল-------
    ছোট ছোট বাহুপাশ বাঁধে -------
    জীবন জড়ায়ে ধরে ঘুমের মতোন-------
    নেশাতুর মৃত্যুর মতোন ।
    তবু তো জাগিয়া উঠি ------- শুনি কোথা বাজে বহুদূরে
    পথহারা বিবাগীর রুদ্র মন্দ্র কোন্‌ একতারা
    রক্তে শুনি দীপক-ঝঙ্কার -------
    বনচারী হরিণেরে কোথা ডাকে মরু-অভিযান ।

    প্রদীপ নিভিয়া আসে ------- তারাদল ঢাকে কালো মেঘে-------
    তমোমগ্ন চক্রবালে আলেয়ার মরণ-সংকেত-------
    কোথা নিয়ে যায় ;
    জানি হোথা কিছু নেই - জানি সব মিছে,
    হয়তো শ্মশান-কোলে শেষ চিতা নিবেছে হোথায়
    হয়তো বা নিশাচরী প্রেতিনীর বিষাক্ত নিশ্বাস-------
    শিহরিছে কোনো কালো জলে ।

    আলেয়ার আলো তবু বারে বারে আমারে ভুলায় -------
    তীর ছাড়া - নীড়হারা ------- মরুচারী একাকী হরিণ, -
    আপনার মোহ দিয়ে আপনারে ছলি -------
    আমারি প্রেমেরে বাসি ভালো ;
    তবু জানি এরও আছে শেষ -------
    নিষাদের খরশরে এই চলা হবে অবসান -------
    হৃদয়ের রক্ত দিয়ে ভুলের ফসল -------
    সেই দিন ফুটাইবে ফুল ॥


    (১লা কার্তিক, ১৩৫০ ; ১৮।১০।৪৪)






    যে নদীতে



    (সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি)


    যে নদীতে ভেসে যেতো ভোরের শিমূল
    ঝুরু ঝুরু বালি নিয়ে ঝিরি ঝিরি গানে ভরা কূল
    যেখানে উদাস হতো বদূদের সকালে-বিকেলে ;
    দূরযাত্রী পালে হাওয়া দূরচারী সুর নিয়ে এলে
    ঘনালে তারার ছায়া--সাড়া দিলে আমলকি বন
    প্রদীপ ভাসাতে এসে কে যেন ভাসিয়ে যেতো মন :

    সে নদী আমারো ছিল ; ভেসে যাওয়া ভোরের শিমূল,
    কখনো পূজোর মালা--কখনো বা শেফালী-বকুল-------
    বলেছি ভাসিয়ে দিয়ে আমারো সে কাগজের নাও
    `মধুমালা যেথা আছে, সেই দেশে সেই ঘাটে যাও'-------
    রাঙা শিমূলের সাথে, জবা-চাঁপা বকুলের দলে
    আমারো ময়ূরপঙ্খী সেই কথা নিয়ে গেছে চলে ।

    তারপরে চেয়ে দেখি, জমে ওঠে সময়ের বালি
    সে নদী পাতালধারা-------দিন গুলো ধূ-ধূ করে খালি
    কাঁটা গাছে অকারণে খুঁজে ফিরে ফুলের ফসল :
    তখন আকাশ ঘিরে কোথা থেকে মেঘ দলে দল !

    সেই নদী মেঘ হলো, সে নদীর স্রোতে হারা ফুল
    বিদ্যুৎ মালায় জ্বলে ------- জ্বলে ওঠে রক্তিম শিমূল-------
    মধুমালা লেখে চিঠি ------- ছুটে চলে বকের পাখায়
    আমারি ঠিকানা খুঁজে হারানো নদীর দেশে যায় ।


    (পরবাস-৩৮, ফেব্রুয়ারি, ২০০৭)


    (পাণ্ডুলিপি ও ছবি : অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)