এই ধরনের ধরতাইগুলো গাংলু গ্যাঞ্জাম সহজে মিস করে না, গাংলু চটপট বলে উঠল,
-- চলুন স্যার, বাইরের ঘরে যাওয়া যাক, সবাই বোধহয় ওয়েট করছেন ।
বৈঠকখানায় বসতে না বসতেই বোঝা গেল অংকস্যার খেই হারাননি ।
-- কোনো নতুন ইংরেজি শব্দ শুনলেই সেটা দিয়ে একটা বাংলা বাক্য লেখার চেষ্টা করবি । ঠিক সেন্সটা ধরে লিখে ফেলতে পারলেই দেখবি আর কখনই ভুলবি না ওয়ার্ডের মানেটা ।
সত্যসাধনের সাথে অংকস্যারের মোলাকাত জমেনি বেশ কিছুদিন । তবে জমানোর ব্যাপারে সত্যসাধনের চেষ্টার ত্রুটি নেই কখনই ।
-- তা, আপনি তো জাগো-বাঙালি সংঘের সভ্য, সেই জন্যই কি ইংরেজি শেখার এই নতুন তরিকা ?
-- ধ্যাত, সভ্য-টভ্য আবার কি ? দুদিন গিয়েছিলাম, তার পর আর যাই না । কতগুলো উজবুক, রবীন্দ্রনাথে দীর্ঘ-ঈ দেয়নি বলে এক ছোঁড়াকে ধমকাতে সে তেড়িয়া হয়ে বলল, কেন কেন, রবি'তে হস্য-ই তো ।
-- তুমি বুঝি বানান শেখাতে ওখানে যেতে, মোহন ? মেজদাদুও রগড়ের চান্সটা ছাড়েলন না ।
-- না না বানান না, বানানো হচ্ছিল পোস্টার, মিছিলের জন্য, সেখানেই ... যতসব বোগাস । বাদ দিন ওসব কথা ।
-- আমার বাংলা নেমপ্লেটটা থাকলে কোনো ক্ষতি নেই তো ?
কংকাবতী সব রকম হুজ্জুত হাঙ্গামা এড়াতে চান ।
-- সে আপনার ব্যাপার, ইংরেজি বাংলা দুইই থাকতে পারে । আসলে আমাদের, মানে বাঙালিদের, এই বাই-লিঙ্গুয়াল ঐতিহ্যটা একটা বিরাট ব্যাপার, পৃথিবীতে বিরল ।
অংকস্যারের ফ্লো এসে গেলে কেউ থামাতে জো পান না, সবাই যে যার পানীয়ে চুমুক দিলেন, বড়রা চা, গ্যাঞ্জাম গাংলু হট চকোলেট ।
-- ট্রান্স্লেশন, মানে অনুবাদ, একটা ভাষা থেকে আরেকটায় নিয়ে যাওয়া, ভাব ভঙ্গি বক্তব্য সবই অটুট রেখে, এ বড় শক্ত জিনিষ । তাবড় কম্প্যুটারও হার মেনে যায় । একবার নাকি ইংরেজি-রাশিয়ান অনুবাদক একটা প্রোগ্রাম লেখা হয়েছিল । দ্য স্পিরিট ইজ্ উইলিং, বাট দ্য ফ্লেশ ইজ্ উইক্ অনুবাদ হল রাশিয়ানে ; তারপর ফিরতি অনুবাদ ইংরেজিতে দেখা গেল দ্য ভোদ্কা ইজ্ গুড্, বাট দ্য মীট ইজ্ স্টেল । বোঝো কান্ড ।
-- ভোদ্কায় তো শুনেছি নেশা বেশ গাঢ় হয়, আর গন্ধও নাকি মিষ্টি ।
সত্যসাধনের পানীয়প্রীতি নামকরা । উনি অবশ্য সবথেকে ভালবাসেন ঘোলের সরবত ।
-- ছোটদের সামনে এমন মদের গল্প কি উচিত ?
কংকাবতী সন্দিহান ।
-- আ: এটা তো একটা উদাহরণ, অনুবাদ কত শক্ত, ভোদকার কথা কে বলছে । অনুবাদ ব্যাপারটা যে আসলে কি সেই নিয়েও কিন্তু প্রচুর প্রশ্ন আছে । আমরা যখন একটা ভাষা থেকে আরেকটায় যাই, তখন আসলে ঠিক কী করি ? মানেটা বুঝে নিয়ে তারপর সেটাকে নতুন ব্যাকরণে ও বাক্যে চাপাই, না কতগুলো নিয়ম মেনে জাস্ট এধার থেকে ওধারে গিয়ে উঠি ?
ঘর নিস্তব্ধ, বিষয়ের গভীরতায় সবাই দিশেহারা । অংকস্যার বলে চলেন ।
-- জন সীর্ল'এর চাইনিজ রুম'এর নাম শুনেছেন কেউ ?
-- ঐ মোড়ের চাইনিজ রেস্তোরাঁটা কি ?
চাইনিজ ফুড'ও খুব পছন্দ সত্যসাধনের, মেজদিদার হাতের চিকেন মাঞ্চুরিয়ান খেয়ে মোহিত হয়েছিলেন । তবে রেস্তোরাঁর ব্যাপারটা অংকস্যারের মনে ধরল না, অন্তত এক্ষুণি । এ নিয়ে কোনো উচ্চ-বাচ্য না করে বলে চললেন,
-- সীর্ল সাহেব দেখিয়েছেন কি ভাবে একজন লোক একবর্ণও চীনা ভাষা না বুঝে একটা বন্ধ ঘরে বসে দিব্যি চীনাতে প্রশ্নোত্তর চালিয়ে যেতে পারে যদি তাকে ঘরের বাইরে থেকে কেউ চিরকুটে প্রশ্ন পাঠায় এবং ঘরের ভিতরে তার কাছে কোন বর্ণাবলীর উত্তরে কি বর্ণাবলী হতে পারে তার সঠিক ও বিস্তারিত নিয়ম দেওয়া থাকে । তাহলে ব্যাকরণ আর বোধ কি ভিন্ন, একে অপরের থেকে আলাদা ? এই নিয়ে তর্কের শেষ হয়নি । তবে এই সবের প্রথম শুরু সেই ট্যুরিং টেস্ট দিয়ে । যে সব সফ্টওয়ারের তালেবররা সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছে, ট্যুরিং'এর নাম'ও হয়ত শোনেনি ।
সত্যসাধন অনেক্ষণ বলার চান্স পাচ্ছিলেন না, আর পারলেন না ।
-- এ সব নিয়ে খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে লাভ নেই, এটা সরলীকরণের যুগ । গ্লোবিশ বলে একটা ভাষা তৈরি হয়েছে জানেন, মাত্র দেড় হাজার ইংরেজি শব্দ, সহজ বানান উচ্চারণ, যাতে সারা বিশ্বের লোক বলতে, বুঝতে পারে ।
-- দেড় হাজার শব্দের ইংরেজি, ছো: ! সেক্সপীয়র কবরে আড়ামোড়া ভাঙবেন । অবশ্য যাদের বলার কিছূ নেই তাদের শব্দ দিয়ে কি হবে ?
অংকস্যার তেতে উঠেছেন এবার । গ্যাঞ্জাম গাংলু নড়ে চড়ে বসল ।
হঠাৎ মেজদিদা এসে পড়লেন, ট্রেতে প্লেট বাটি আর ধূমায়িত সুগন্ধি ।
-- আজ কিন্তু, প্রন মাঞ্চুরিয়ান আর চাউমিয়েন ।
-- মাঞ্চুরিয়ান ওয়ার্ডটা তোমার দেড়-হাজারিতে আছে তো ?
অংক স্যার এখনো চেগে ।
সত্যসাধন খাওয়ায় মন দিলেন, এই ভাষাটা সত্যিই য়ুনিভার্সাল ।
পাশাপাশি | উপরনিচ |
(১) বাদশা'র শখের দেরাজ (৫) মল আর কফ দেওয়ার পরিণাম, কাজে (৮) এই রাগে ধরা দে মা (৯) নিয়ত মরি, নয়নে আঁধার (১১) পিছল এ তালে (১২) বড় গাছের ডালে বখাটে শালিক কেলি করে না (১৪) মুখোমুখি তাকিয়ে নামছি (১৬) শীতে হ্রদে জমক নেই (১৮) মাচায় কচি বাদুড় (২০) ঐশ্বর্য ভয় গদি (২২) কোন আরাম খাটো করা (২৪) কি আর বাকি ? (২৫) রাতে আকার দেয় বহু সে (২৭) নদীতে দিলেন ঠাকুরের তনুজা (২৯) বামুনের প্রিয় দেব (৩১) বাসরে, বন্ধু, হারাব জগত (৩৩) ধন বাতিল হ'লে ব'ল হরি বোল (৩৫) মনে যদি দিস প্রণামের অধিকারী (৩৭) চাঁদের সময়ে থাকি তিলধারণে (৩৯) কার আকারে পুরো চাঁদ ? (৪১) আনন্দ দিক্ রোদন (৪৩) জগতের প্রভু পান না পত্রের সাপ (৪৪) জন্তুর দাগে নি:স্বর গণেশ (৪৫) নীতির যুক্তি প্রচলিত নিয়মে | (১) লাভ ধরে দেবলা কানাই (২) কঠিন জটে আরাম (৩) এক'শ হার দেশে এক যে ছিল রাজা (৪) রমণে তিলমাত্র (৫) কত রকম চা খেয়ে কত ফল (৬) ফের তবে নাহি রবে সিদ্ধি (৭) লাল'টা কি তিলক ? (১০) বিনা লাভে বৃথা অকারণ মাছি (১৩) দেনাদার কত পাখা (১৫) মিনতি কত খায় নোনতা খাবার (১৭) নম্রতা শীত গেলে সুন্দর (১৯) চাবি দিবি দাঁতে দাঁতে ঘ'ষে ঘ'ষে (২১) সাত গুয়ে মরা (২৩) নুন হ'লে তো হয় না দিন (২৬) বন্ধ না হয়, শূন্য পেলে পাক (২৮) আদি ধীর আর নয় আরতি আলো (৩০) ব্রত পাপ গিলে দ্রুত (৩১) গদার আরব রোষ নয় যথাযথ (৩২) মনান্তরে কান-কাটা লাঠি (৩৪) মিথুন-ভক্ত নাম প্রামাণিক কাগজে (৩৬) না দিস যদি স্বরহীন বেগ (৩৮) কাজীর সংগীত (৪০) কে হাজার বিহারে করণীয় ? (৪২) মাখন নিছক |
প্রথম দুজন সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার দেওয়া হবে ।
দয়া করে এবার থেকে ডাকযোগে উত্তর পাঠালেও ই-মেল (যদি থাকে, তো) জানাতে ভুলবেন না ।
(পরবাস-৩৮, ডিসেম্বর, ২০০৬)