• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ২৭ | আগস্ট ২০০২ | রম্যরচনা
    Share
  • রাতের ট্রেন : মীজান রহমান

    মাঝে মাঝে এমন হয় । লিখতে বসেছি, অথচ কলম চলছে না । বলবার কিছুই নেই । যেন বোবা হয়ে গেছি । যেন কোন হাঙ্গরের মুখে প্রবেশ করে সম্বিৎ হারিয়েছি । মনে হয় যেন এই মুহূর্তে আমার মৃত্যু ঘটতে চলেছে এবং সেই মৃত্যুকে আমি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি । শিরায় শিরায় উপলব্ধি করতে পারছি এই মৃত্যুর স্রোত । এই মৃত্যু আমার হাত থেকে কলম কেড়ে নিয়েছে, আমার বুক থেকে উপড়ে নিয়েছে প্রেম ভালবাসা, আমার করোটি খুলে বের করে ফেলেছে আরাধ্য কবিতার প্রথম ছত্রগুলি । এ এক অদ্ভুত অনুভূতি - জীবনের ভেতরে এই মৃত্যু, মৃত্যুর ভেতরে এই জীবন । একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত । এমন দশাটা যেন ঘনঘনই আসছে আজকাল ।

    অথচ বাইরে প্রসন্ন বিকেল । এপ্রিলের কাদামাখা সিক্ত শরীর । পলাতক পাখিরা ফিরে এসে ছাদের ওপর বসতে শুরু করেছে । কাঠবেড়ালীর কাজলচোখের মতো করে পাতাগুলো উঁকি মারতে শুরু করেছে মরাগাছের পাঁজর থেকে । শুকনো নদীতে লেগেছে বান । শীতের স্তূপীকৃত বরফ গলে গলে প্রায় নি:শেষ হয়ে গেছে । বাচ্চা ছেলেরা তাদের বাবাদের সঙ্গে রাস্তায় নমে হকি খেলায় মেতেছে । অটোয়ার এপ্রিল আমার বরাবরই ভাল লাগে । এপ্রিল আমার প্রাচীন মনকে ভরে দেয় বিপুল আনন্দে । এপ্রিল আমাকে ভরে দেয় অপার বিষাদে । এপ্রিল আমাকে বোঝায় ক্ষণকাল কাকে বলে, এপ্রিল আমাকে প্রবল ঝাঁকুনিতে জাগিয়ে তোলে, আবার নরম আমেজে ঘুম পাড়িয়ে রাখে । বড় অদ্ভুত মাস, এই এপ্রিল । নবযৌবনা মোহিনী নারীর মত । এই মাসে তো কথার ঝরনা ছোটার কথা । তবু জানি না কেন মাঝে মাঝে আমি কথা হারিয়ে ফেলি এমন করে ।

    আমার অফিসের দীর্ঘ কাচের জানালা দিয়ে আমি বাইরে তাকিয়ে থাকি । হারিয়ে যাওয়া কথার খোঁজে । একফালি আকাশ দেখা দেয় দালানের ভিড় ঠেলে । একটা মরা গাছের ডালে বসে একটি একাকী কাক অলসভাবে চেয়ে থাকে আমার দিকে । হয়ত আমারই মতো সে খুঁজছে কিছু । ক্যাম্পাসের ভেতর একটা মরচেধরা রেলসড়ক পড়ে ছিল বহুবছর ধরে । রিডো নদীর ওপর একটা রেলওয়ে পুলও তৈরি করেছিল তারা । একসময় নাকি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করত । তারপর আধুনিক যুগ এসে যাত্রীদের তাড়িয়ে শুধু মাল বইতে শুরু করল শহরের এক কোনা থেকে আরেক কোনায় । এই মালের গাড়িগুলোকেই আমি দেখে এসেছি ত্রিশ বছর ধরে । মালের গাড়ি আমার কোনসময়ই ভাল লাগত না । মালের গাড়িতে ছন্দ নেই । কার্লটনের মালগাড়ির দিকে আমি কোনদিন চেয়ে থাকিনি । ছোটবেলার মতো করে গাড়ি গুনবার চেষ্টা করিনি । তারপর একদিন হঠাৎ করে মালের চলাচলও বন্ধ হয়ে গেল । রেলগাড়িতে বড্ড খরচ, বলল তারা । আস্তে আস্তে সড়কের ধারে বুনো ঘাস জমা হতে লাগল । বুনো ফুলও পাপড়ি মেলে দু:সাহসে ফুটতে লাগল এখানে ওখানে । সড়কের ইস্পাত বিগতদিনের দীর্ঘশ্বাস হয়ে বসে থাকল বিষণ্ণমুখে । অনেকদিন ভুলেই ছিলাম সড়কটার কথা । তারপর একদিন আচম্বিতে শুনি কোলাহল । বড় বড় যন্ত্র আসতে শুরু করেছে ওই মরা সড়কের দেহের ওপর । লোহালক্কড়ের ঝনঝনানি । খোঁচা খোঁচা দাড়িমোছওয়ালা রুক্ষ শ্রমিকেরা দলে দলে জড়ো হয়েছে মোটা মোটা রবারের জুতো আর ইস্পাতের ভারি ভারি শিরোধান পরে । কার্লটনের পুরনো সড়কের ঘাস আর ফুল পিষে যেতে লাগল সেই রবারের নীচে । চোখ মেলে বললাম, বিষয় কি মহাশয় । বলল, নতুন করে সাজানো হবে সড়ক । নতুন যুগের নতুন গাড়ি চলবে সেই সড়কের ওপর দিয়ে । যাত্রীরা আবার যাওয়া আসা শুরু করবে রেলগাড়িতে । নিরুদ্দেশ থেকে নিরুদ্দেশে । শহর থেকে বনে, বন পেরিয়ে আবার শহর, পথ থেকে পথের শেষে । গা’টা যেন আপনমনেই গুনগুন করে উঠল । রেলগাড়ির আমেজ এখনো কাটেনি আমার শরীর থেকে । সেই যে ছোটবেলায় টেলিগ্রাফের থামে কান পেতে ট্রেনের শব্দ শুনতাম, মনে হয় এখনো যদি পারতাম তেমনি করে কান পেতে থাকতে । পারি না, কারণ আমি পরিণত বয়সে পৌঁছেছি । এমনকি আমার ছাত্ররাও পরিণত বয়সে পৌঁছে গেছে । পরিণত বয়সে কখনো অপরিণত কাজ করতে নেই । তাই আমি পরিণত বয়সের চির-অপরিণত চোখদুটো মেলে ট্রেনের চলাপথের দিকে চেয়ে থাকি । আমার জানালা দিয়ে আর তো কিছুই দেখা যায় না তেমন । শুধু যখন ট্রেনের শব্দ শুনি এধার থেকে বা ওধার থেকে, আমি কাজের টেবিল থেকে ঘাড় ফিরিয়ে অকাজের রাজ্যে চলে যাই । নিজের অফিসের মুগ্ধ একাকীত্ব আমাকে সুযোগ দেয় কালের ভারে কুব্জ দেহের দুয়ার খুলে ছেলেবেলার অচিনপুরে চলে যেতে । আমি চোখ বুজে চলে যাই সেই লম্বা লম্বা টেলিগ্রাফের ধাতব থামের কাছে ।

    অটোয়ার এই নতুন ট্রেনের পাশে অবশ্য টেলিগ্রাফের থাম নেই । এই ট্রেন যেন দেখতেও ঠিক ট্রেনের মত নয় । যেন ডিজনীল্যাণ্ডের পুতুলগাড়ি । লালহলুদ আর সাদায় ভরা তার শরীর । ইঞ্জিন কোথায়, সামনে না পেছনে, সেটাও বঝতে পারি না আমি । দরজাগুলো যন্ত্রে বোজে । জানালা আছে, আবার নেই । বাংলাদেশের ট্রেনে যেমন এককালে কাঠের ফ্রেমে কাচের জানালা ছিল, এবং সেই জানালা খুলে মাথা বাইরে রেখে বাতাস, ধুলো আর কয়লার ঢেউ মাখা যেত সারা অঙ্গভরে, সারা অন্তরজুড়ে, সে-উপায় নেই এই আধুনিক যুগের জানালাতে । আধুনিক জানালাতে কাঠ নেই, কাচ নেই, বাতাস নেই, ধুলো নেই । আধুনিক মানুষ সভ্য মানুষ । তারা ধুলা চায় না, ধুঁয়া চায় না । কয়লা তো একেবারেই না । আজকের জানালাগুলো মজবুত সব ভাইনেলে তৈরি, কাঠের মত দেখতে জিনিসগুলোও সব কারখানায় বানানো । আজকের ট্রেনে করে কোথাও যাবার বাসনা আমার প্রাণ থেকে জাগে না । ছোটবেলায় আমি কোথাও যাবার জন্যে ট্রেনে উঠতাম না, ট্রেনের ধুলোবালি আর উদোম হাওয়াতে বিলীন হবার জন্যে উঠতাম । ছোটবেলায় গ্রামের মাঠ পেরিয়ে ছুটে যেতাম রেললাইনের পাশে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের যাত্রীদের হাত নেড়ে বিদায় বলতাম নিতান্ত অকারণে । আজকে আমার জীবনে সেই অকারণের কারণগুলো দূর হয়ে গেছে । আজকে আমি এক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সম্ভ্রান্ত অধ্যাপক । আজকে আমি শুধু পারি ভাইনেলে তৈরি জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে, দূর অতীতের সেই মায়াবী অকারণগুলোকে খুঁজে পাবার মিথ্যে আশাতে । সময় ও সভ্যতা আমাকে ছোট্ট একটা অফিসে ঢুকিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক শূন্য থেকে আরেক শূন্যে ।

    সেদিন হঠাৎ করে বড্ড গরম পড়ে গিয়েছিল এখানে । এপ্রিলে সাধারণত এরকম গরম পড়ে না অটোয়ায় । লোকজন দলে দলে সেদিন বেরিয়ে পড়েছিল হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরে । নতুন ঘাসের ওপর ছেলেরা মেয়েরা সূর্যের দিকে মেলে দিয়েছিল তাদের শরীর মন । যৌবনের কলকাকলি বা বেলেল্লাপনা দূর থেকে দেখতে আমার মন্দ লাগে না, কিন্তু গায়ের জামা খুলে ঘাসের ওপর শয্যা পাতার বয়স, রুচি বা স্পৃহা কোনটাই নেই । আসলে কতযুগ ধরে যে জানালা দিয়ে দেখলাম এই নদীটাকে, কত অজস্র হাঁস যে এই জলের ওপর খেলা করে রোজ আমার অজান্তে তার হিসেব রাখিনি আমি । তবু কি আশ্চর্য, সেদিন কিসের আকর্ষণে আমি নদীর ধারে পুলের নিচে একটি বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম । আকর্ষণটাকে জানি না বলে ভুল বললাম । জানি, অবশ্যই জানি । ওই পুলের সড়কে, ঠিক আমার মাথার ওপর দিয়ে, যাত্রীবাহী ট্রেন যাবে পনেরো মিনিট পরপর, সেই আকর্ষণে । পুলের ওপর দিয়ে ট্রেনের চলার যে শবদ তার একটা মাদকীয় শক্তি আছে । অন্তত আমার কাছে । জীবনের একটা সময় চলে আসে যখন এই ধ্বনিটাকে কেবল যন্ত্রের ধ্বনি মনে হয় না, মনে হয় নিজেরই মর্মধ্বনি । এক আশ্চর্য উপায়ে ওটা প্রাণের ভেতরে প্রবেশ করে যায় । মনে আছে মাছধরার ছিপ নিয়ে আমার এক চাচা আর আমি সকালের নাস্তা খেয়ে চলে যেতাম গ্রামের সেই পুলের নীচে । আড়িয়ালখাঁ নদীতে সেকালে মাঘের শীতেও প্রচুর পানি থাকত । আমাদের গ্রামের সিরসিরে একফালি খাল, যাকে আদর করে বলা হত মরাগাং, তাতেও ছিল অঢেল জল, প্রতুল মাছ, বিশেষ করে ওই পুলের ধারেকাছে । মাছের আকর্ষণ আমার ছিল বটে, কিন্তু তার চেয়েও বড় আকর্ষণ ছিল ট্রেন দেখা । সকাল দশটায় একটা ট্রেন যেত ভৈরবের দিকে, আবার বারোটার দিকে একটা যেত উল্টোদিকে । আপ্‌ অ্যাণ্ড ডাউন । ডাউন অ্যাণ্ড আপ্‌ । আমার কাছে কোন তফাৎ ছিল না তাদের । দুটোই সমান ছন্দময়, গীতিময় । দূর থেকে একটা গম গম শব্দ শুনে বোঝা যেত ট্রেন আসছে । ছিপ ফেলে ছুটতাম টেলিগ্রাফের থামের দিকে । থামের ভেতর দিয়েই যেন ছুটে আসত ট্রেনটা । ত্রক্রমেই যেন তার বেগ বাড়ছে, রোষ বাড়ছে, বাড়ছে তার মেঘগর্জন । সে যে কি অদ্ভুত শিহরণ সারা অঙ্গে আমার । তারপর যখন সত্যি সত্যি চলে আসত ট্রেনটা গর্জন করতে করতে, আমি উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম সেই মুহূর্তটির জন্যে যখন তার চাকাগুলো পুলের ওপর দিয়ে চলতে শুরু করবে । যেন কোন মায়াবী বাদ্যকারের অলৌকিক বাদ্য শুরু হতে যাচ্ছে । দেশ ছাড়ার পর ওই বাদ্য আর শুনিনি কোনদিন । সেবার দেশে গিয়ে ওই পুলের ধারে বসেছিলাম ট্রেনের অপেক্ষায়, কৈশোরের সেই কুহকী শব্দ শোনার আশায় । ট্রেন এল, ট্রেন গেল । শব্দ শোনা গেল বিস্তর । কিন্তু একই শব্দ নয় । বুঝলাম যে ছোটবেলার শব্দ কোনদিন ফিরে আসে না । শুধু শব্দ নয়, দৃশ্যও । দেখলাম, আড়িয়ালখাঁ শুকিয়ে প্রায় মরুভূমি হয়ে গেছে । মরাগাঙের মাছেরা চলে গেছে, পাখিরা চলে গেছে । যেখানে নৌকা বাইত চাষীরা সেখানে মাটির পাহাড় আর ঘাসের বন । আমার সেই পুলের নিচে গ্রামের উলঙ্গ বাচ্চারা গাছের ডাল আর কাঠের গুটি নিয়ে ক্রিকেট খেলে - হাড়সর্বস্ব গরু আর ছাগলেরা শুকনো মাটি শুঁকে বেড়ায় খাবারের খোঁজে । হয়ত আমারই চোখের ভুল । হয়ত চল্লিশ বছর বিদেশে থেকে থেকে আমারই চোখ শুকিয়ে গেছে, মন শুকিয়ে গেছে ।

    ক্যানাডাতে অনেকদিন থাকার পর যখন দেশে গেলাম বেড়াতে, আমার এক সুহৃদ বন্ধুমানুষ জিজ্ঞেস করেছিল দেশের কোন জিনিসটা আমি সবচেয়ে বেশি মিস্‌ করেছি এখানে । তার আশা ছিল আমি বলব তাকেই । কিংবা হয়ত বলব পুরনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, বা শীতের সকালে আখের রসে ভেজানো চিতল পিঠা, নয়তো বা রমনার মাঠেতে আগুনের ফুলকি ঝরানো কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল বা ওই জাতীয় কিছু । কিন্তু আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল এক অদ্ভুত শব্দ । অন্ধকার । বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের এই যে নিজ্ঝুম নিশ্চুপ অন্ধকার, অপরূপ রুপময়ী অন্ধকার, সে-অন্ধকারের জন্যে প্রাণ আমার হাঁপিয়ে ওঠে মাঝে মাঝে এই ঝলমলে আলোময় উন্নত দেশে । ছোটবেলায় গ্রামের অন্ধকার আমাকে যেমন করে টানত তেমন করে টানত না আর কিছু । সন্ধ্যা হলে আমি একা একা উঠোনে দাঁড়িয়ে বা বাড়ির পেছনে আমবাগানে গিয়ে অন্ধকারের শব্দ শুনতাম । ঝিঁঝিঁর ডাক, তুলাগাছের ডাল থেকে সঙ্গীহীন বাদুড়ের বিষন্ন গান, বর্ষাস্নাত ডোবার জলেতে অজস্র ভেকের উল্লাসিত কলতান । দেখতাম জোনাকিরা উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে আকাশের পথে । আসর বসিয়েছে তারাদের সাথে । সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল আমার রাতের ট্রেন । ট্রেনের শব্দ শোনামাত্র আমি ছুটে যেতাম রেললাইনের ধারে । আমাদের বাড়ি থেকে খুব কাছের পথ ছিল বলে রাস্তাটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল চোখ বুজেই চলে যেতে পারতাম । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি দেখতাম ট্রেনের আসার দৃশ্য । আলোজ্বলা বগিগুলো বড় অবাস্তব মনে হত আমার কাছে । যাত্রীগুলোকে একেবারেই বাস্তব মনে হত না । যেন কোন শিল্পীর আঁকা চলমান ছবি । বিপুল আঁধারের রাজ্যে ওই ট্রেনটাকে মনে হত যেন দূর - দূরান্তের অলীক পৃথিবী থেকে আগত আগন্তুক । আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম তার চলে যাওয়ার দৃশ্য । সেই পুল, সেই অতল আঁধারের শস্যেভরা গ্রামীণ মাঠ, আমার প্রাণে নিয়ে আসত এক অদ্ভুত শূন্যতার বোধ । ট্রেনটা দূরে, অনেক দূরে, বনবাদাড়ের আড়ালের মিলিয়ে যাবার পর এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা ফিরে আসত আঁধারের বুকে । আমার নিজেরই বুকে । ওই নিস্তব্ধতাটুকু আমি সারা গায়ে মেখে ফিরে আসতাম আমার আদিম ভিটাতে । পাগল বলে লোকে আমাকে । পাগল বলতেন আমার দাদী ফুফু আর চাচাচাচীরা । তবু, এই অন্ধকারই আমি মিস্‌ করেছি সবচেয়ে বেশি । অন্ধকার ছাড়া আমি তারাদের দেখতে পাই না, দেখতে পাই না চাঁদের আলো । অন্ধকারকে বাদ দিয়ে আমি বুঝি না আলোর মর্ম ।



  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments