• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | Shakti Chattopadhyay | কবিতা
    Share
  • 'অন্য ঘরে, নির্জনে, একাকী', শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি অগ্রন্থিত কবিতা : Shakti Chattopadhyay



    অন্য ঘরে, নির্জনে একাকী
    (একটি অগ্রন্থিত কবিতা)
    যখন যেখানে থাকি, অস্পষ্ট আলোর মতো মনে হয় এক
    সাপের নিজস্ব হিংসা শুয়ে থাকে আমার উপরে,
    ফণা মেলে...
    আমি নড়াচড়া করি, সেও নড়ে; অধিকন্তু, বুকে
    শরীরের ঠাণ্ডা ভার পাহাড়ের মতো মনে হয়
    আচ্ছন্ন বনজ গন্ধে আমি নিশিদিন শুয়ে থাকি।

    ভয়ে সে আসে না কাছে, যতো ডাকি, এক নিরুপায়
    ভালোবাসা তুলে দিয়ে সহযোগী দূরত্বসম্ভব
    একই গৃহে বসে থাকে, অন্যঘরে, নির্জনে একাকী।
    চতুর্ভাস (সম্পাদকঃ দত্তাত্রেয় দত্ত); প্রথম বর্ষ, আত্মপ্রকাশ অর্ঘ্য; শ্রাবণ, ১৩৭৭
    এই কবিতাটি দত্তাত্রেয় দত্তর সৌজন্যে পাওয়া গেছে। তাঁকে অনুরোধ করেছিলুম এই কবিতা ও কবিতার ব্যাপারে আরো কিছু জানাতে, যদি সম্ভব হয়। তিনি যা জানিয়েছেন তা নীচে রইল--—সম্পাদক।
    আমার সতেরো বছর বয়সে আমি ‘চতুর্ভাস’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতুম। দৈবাৎ তার প্রথম সংখ্যার একটি কপি খুঁজে পেয়ে অবাক হয়ে গেছি। তার একটি পাতার ছবি পাঠাচ্ছি। মনে হচ্ছে ঐ-লেখাটা আমার বাড়িতে অবনী কবিতার পিছনে অজ্ঞাত inspiration হয়ে কাজ করে থাকতে পারে— যদিও আমি কবিতাটা কোনোদিন মনে রাখার চেষ্টাও করিনি। কবিতাটা অ-সঙ্কলিত বলে সন্দেহ হয়।

    কবিতার সৃষ্টির ইতিহাস তো আর জানা সম্ভব নয়; তবে শক্তির এই কবিতা ঘিরে একটা সামান্য স্মৃতি পড়ে আছে মনের কোনায়। যখন আমরা কবিতা-শিকারে বেরিয়েছিলুম, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তখন ভারবিতে বসতেন। সেখানে তাঁর টেবিল-চেয়ার--সে এমন কিছু ব্যাপার নয়। সামনে আগন্তুকদের জন্য একটা চেয়ার ছিল; যদিও তাতে বসার ধৃষ্টতা আমাদের কারুর হয় নি। ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়েই ছিলুম তাঁর সামনে। শক্তি আমাদের খুব উৎসাহ দিচ্ছিলেন, এটুকু মনে আছে। আর আমাদের সঙ্গী গৌতম সেনগুপ্তর ঠিক গায়েই একটা দাঁড়ানো-পাখা হাঁইহাঁই করে ঘুরছিলো।

    হলো কি, এরই মধ্যে গৌতম উৎসাহিত হয়ে টেবিলের ওপর যেই ঝুঁকেছে, অমনি সেই পাখা ঘ্যাঁচ্‌ করে তার পাঞ্জাবির কোনাটা ভেতরে টেনে নিয়েছে। শক্তি লাফিয়ে উঠে ব্যাপারটা সামলাতে গেলেন; কিন্তু তার মধ্যেই আর এক বন্ধু সমান তৎপরতায় কাপড়টা পাকড়ে হ্যাঁচকা টানে বার করে আনলো। শক্তি হাঁপ ছেড়ে বললেন "উফ্‌! আর একটু হলেই একটা কেলো হচ্ছিল!"

    আমরা তখন সব ষোল-সতেরোর ছেলেপুলে। আমাদের মুখের লব্জো একজন মাননীয় কবি--মানে "কো-বী!" -- বলবেন, এ তো আমাদের কল্পনাতীত! কবির মুখে “কেলো”! হতভম্ব হয়ে মুখ-চাওয়াচাওয়ি করলুম সকলে। বলতে গেলে 'কবি' সম্বন্ধে আমাদের সযত্নলালিত ধারণাটাই একেবারে এক কথায় তছনছ হয়ে গেল। পরে আমরা ব্যাপারটা নিয়ে অনেক উত্তেজিত আলোচনা করেছি, হেসেছিও; এবং আরেকটু পরে যখন পড়েছি: কাব্য শুনে যেমন ভাবো/কবি তেমন নয় গো"--তখন অনিবার্যভাবে সেদিনের সেই ঘটনাই মনে এসেছে। আমাদের বোধহয় পরের দিন গিয়ে কবিতা নিয়ে আসতে বলেছিলেন।

    অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
    পরবাস, অক্টোবর, ২০২১
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments