• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • দু’টি বিচিত্র শহরের কাহিনী : ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা



    আমেরিকার কোণেকানাচে এমন অনেক অদ্ভুত শহর ছড়িয়ে আছে। একটু খোঁজ করলেই তাদের খবর পাওয়া যায়। এই যাকে বলে ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া.,.’। আজকাল কোভিড-দেবীর শাপে দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া দুষ্কর। তাই নিজেদের প্রদেশ নেব্রাস্কা-তেই এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াই, সেভাবেই আচমকা পাওয়া অখ্যাত ছোট্ট শহরগুলো। একটার গল্প আগেই লিখেছি-- মনওয়ি নামক ক্ষুদ্রতম শহর, যার বাসিন্দা মাত্র একজন। এবার আরও দুটো শহরের সম্বন্ধে লিখলাম। হ্যাঁ, মানতে হবে, আমার প্রতিবেশী নেব্রাস্কানরা একটু অদ্ভুত স্বভাবের বটে। কিন্তু দ্রষ্টব্য হিসেবে এগুলি বেশ মজার। হাতে সময় থাকলে নিশ্চয়ই ঘুরে দেখবেন।


    কারহেঞ্জ




    কারহেঞ্জ কথাটা শুনলেই ইংল্যান্ডের দুহাজার বছর পুরানো, বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের কথা মনে পড়বে, তাই না? ঠিকই ভাবছেন। নেব্রাস্কার ‘বিখ্যাত’ কারহেঞ্জ ওই স্টোনহেঞ্জেরই অনুকরণ। গ্রামীণ আমেরিকানরা তো অতদূর যেতে পারেন না তাই হয়তো তাদের মনোরঞ্জনের জন্য এই চেষ্টা।

    অ্যালায়েন্স (Alliance) পশ্চিম নেব্রাস্কায় মাঝারি সাইজের একটি শহর। সেখান থেকে মাইল তিনেক উত্তরে, প্রায় দশ একর জায়গা জুড়ে এই কারহেঞ্জ। ধু-ধু মাঠ ও ভুট্টা খেতের মাঝখানে, কাছাকাছি রাস্তা শুধু হাইওয়ে ৮৭। অ্যালায়েন্সের জনৈক বাসিন্দা জিম রেইনডারস তাঁর বাবার স্মৃতিতে ১৯৮৭ সালে এর পত্তন করেন। তারপর প্রায় পাঁচ বছর ধরে, ডেট্রয়েট থেকে ৩৯টা পুরনো, অকেজো গাড়ি আনিয়ে, সেগুলো মাটিতে পুঁতে বা ঢালাই করে স্টোনহেঞ্জের মতো একটা গঠন তৈরি করেন। স্টোনহেঞ্জের হিলস্টোনের মতো একটা গাড়ি আলাদা পোঁতা—১৯৬২-এর ক্যাডিলাক। সব কটা গাড়ি আমেরিকায় তৈরি আর সবগুলো আগাগোড়া ধূসর রঙে পেইন্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটা হলুদ, সাদা ও সবুজ রং করা গাড়িও আলাদাভাবে পোঁতা হয়েছে।




    স্টোনহেঞ্জ দেখতে গেলে আপনাকে পয়সা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে, কারহেঞ্জ কিন্তু একেবারে ফ্রি। জল, ঝড়, বরফের মধ্যেও প্রতিদিন চব্বিশঘণ্টা দর্শকের জন্য খোলা থাকে। কাছে গিয়ে হাত বুলোতেও মানা নেই। অনেক মোটরগাড়ি-ভক্তরা কোন গাড়িটার কি নাম বা কোন সালে তৈরি হয়েছিল এইসব অনুমান করার চেষ্টা করেন।

    প্রথম প্রথম লোকে খুব হাসিঠাট্টা করেছিল, কিন্তু আস্তে আস্তে কারহেঞ্জের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এখন দর্শকের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। ঠিক স্টোনহেঞ্জের মতই, ২০১৭ সালের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণও ঠিক এই কারহেঞ্জের ওপর দেখা গেছিল। ভীষণ ভিড়ও হয়েছিলো সেদিন। এখন একটা নতুন ভিজিটারস সেন্টার তৈরি হয়েছে। পুরনো গাড়ির সুভেনির ইত্যাদির সঙ্গে গরম কফিও পাওয়া যায়।


    নতুন বাসিন্দারা




    নেব্রাস্কার ঠিক মাঝখানে একটি ছোট্ট শহর, নাম ‘টেলর’ (Taylor), জনসংখ্যা—১৯০ (২০১০ আদমসুমারি অনুযায়ী)। সব শহরেরই জন্ম-মৃত্যু আছে। এই শহরটা জন্মেছিলো ১৮৮৩ সালে, এখন বার্ধক্যে পৌঁছেছে। শহরটা এমনিতে সাদামাটা, টুরিস্টদের আকর্ষণ করার মতো দ্রষ্টব্য বলতে বিশেষ কিছুই নেই। লোকজন কমে যাওয়ায় বাসিন্দারা নিশ্চয়ই একটু নিঃসঙ্গ বোধ করেছিলেন। কী করে লোকসংখ্যা বাড়ানো যায়? (না না, ওভাবে নয়!) একজন স্থানীয় শিল্পী, মারা স্যানডারস, (Mara Sanders) পরামর্শ দিলেন পাতলা কাঠ (plywood) কেটে মানুষ প্রমাণ সাইজের মূর্তি এঁকে রাস্তার ধারে ধারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হোক। দেখলে মনে হবে অনেকগুলো মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে।




    সেই প্ল্যান অনুযায়ী গত পাঁচ বছর ধরে প্রায় পঞ্চাশটি পূর্ণায়ত মূর্তি (এদের বলে villagers) শহরের এখানে সেখানে নানা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো বেশ কিছু টুরিস্টও আকর্ষণ করছে। এদের পোশাক-আশাক ১৮৯০ থেকে ১৯২০ সালের মাঝামাঝি। সেই সময়েই টেলর-এর সবথেকে নামডাক ছিল। এদের মধ্যে পুরুষ, মহিলা, ছোট ছেলেমেয়ে, পোষা কুকুর সবই আছে।




    আছে রাস্তার মোড়ে বন্দুক হাতে শেরিফ, পোস্ট অফিসের সামনে পোস্টম্যান, ছেলেমেয়েদের লুকোচুরি খেলা, পার্কে ভ্রমণরতা মা ও বাচ্চা, পেট্রোল-পাম্পের সামনে দুই বন্ধুর গল্পগাছা, ইত্যাদি। হঠাৎ দেখলে মনে হবে সত্যিই জীবন্ত কেউ। এরকম অদ্ভুত শহর আপনি কোথাও পাবেন না।




    শহরের টাউন হল-এ একটা ম্যাপ ফ্রি পাওয়া যায়, তাতে চিহ্ন দেওয়া আছে কোন মূর্তিটি কোথায় রাখা। এটা বেশ ট্রেজার হান্ট-এর মতো খেলা, সবাই ঘুরে ঘুরে দেখে ক’টা মূর্তি খুঁজে পেল। আমি অবশ্য অত চেষ্টা করিনি।




    বড়ো রাস্তায় সোজা গিয়ে যে কটা আশপাশে পেয়েছি তাই দেখেছি। শহরে ঢুকে প্রথমেই গাড়িতে পেট্রল ভরতে গিয়ে দেখা হল দুই কর্মচারি রালফ ও হ্যাঙ্ক-এর সঙ্গে।




    বেশ মিশুকে লোক! রাস্তার ওপারে পার্কে বাচ্চারা খেলছে দেখলাম, একটু এগিয়ে দেখা হল শেরিফ জর্জ-এর সঙ্গে। এইভাবেই আরও কয়েকটি মূর্তির ছবি তুলে আমরা ফিরলাম। আশা করি টেলর-এর নাগরিকদের নিঃসঙ্গতাটা একটু কমেছে।










    ভ্রমণকাল: অক্টোবর ২০২১


    অলংকরণ (Artwork) : ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments