• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯২ | অক্টোবর ২০২৩ | গল্প
    Share
  • বিস্মৃতির আড়ালে : চম্পাকলি আইয়ুব



    রাত্রের খাওয়াদাওয়া শেষ করে পৃথা বাকি খাবারগুলো গুছিয়ে তুলছিল। অন্যদিন তার স্বামী রাহুল হাতে হাতে এই কাজটুকু করে কিন্তু আজ ক্রিকেট ম্যাচের অবশিষ্টাংশটুকু দেখবার জন্য সে হাত ধুয়েই টিভির সামনে গিয়ে বসেছে। বাটির গায়ে লেগে থাকা একটুখানি মোচাঘন্ট ছোট বাটিতে তুলে রাখতে রাখতে নিজের মনে পৃথা গজগজ করে, ‘এটুকু মোচা খেয়ে ফেললেই হতো’! আসলে, দু’জনের সংসারে যত কমই রাঁধা হোক না কেন খাবার বেঁচে যায়! আর তাদের বয়সও তো ষাট পেরিয়েছে তাই খাবারের পরিমাণ আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। এইসব ভাবতে ভাবতে ফ্রিজে সব খাবার গুছিয়ে রেখে পৃথা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াচ্ছিল আর তখনই ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের পর্দায় নাম দেখাচ্ছে ‘মলি’ অর্থাৎ তাদের কন্যা মল্লিকার ফোন। গত তিনবছর ধরে সে পুণায় চাকরি করছে। মুম্বাই থেকে পুণার দূরত্ব মাত্র দেড়শ’ কিমি কিন্তু কর্মজগতের ব্যস্ততা এমনি যে কন্যা দু’মাসে একবার মা-বাবার কাছে আসতে পারে। তবে, দিনের শেষের এই ফোনটা করতে মলি কখনোই ভোলে না। তখন মায়ে-মেয়েতে সারাদিনের অনেক খুঁটিনাটি নিয়ে গল্প হয়। কোনো কারণে তাদের এই ফোনটা না হলে পৃথার কেমন যেন খালি-খালি লাগে।

    ফোনটা ধরে পাখার তলার একটা চেয়ারে গুছিয়ে বসে পৃথা রোজকার মতো শুরু করে, ‘হ্যাঁ, বল – এই উইক-এন্ড-এ আসছিস তো?’। অন্যদিক থেকে মলি বেশ খুশি খুশি গলায় বলে, ‘আসছি, আসছি। মা, তুমি সোহিনী ঘোষালকে চেনো’? মেয়ের কথায় পৃথার জগৎ যেন এক লাফে চল্লিশ বছর পিছিয়ে গেল। ঐ নামে এক জনকে সে যে চেনে তা বললে তো কম বলা হবে। স্মৃতির ঘরে এমন অতর্কিত নাড়া পড়ায় পৃথা কয়েক মুহূর্ত নিল নিজেকে সামলে নিতে। তারপর বলল, ‘সোহিনী ঘোষাল আমার স্কুলের বন্ধু – ক্লাস সিক্স থেকে এইট আমরা একসঙ্গে পড়েছি। তোকে ওর গল্প করেছি, মনে নেই আমার সেই বান্ধবী রে যে পড়াশুনোয় ভালো ছিল কিন্তু রোজ প্রেয়ার শুরু হবার পর স্কুলে আসত বলে শাস্তি পেতো? তুই কেন জানতে চাইছিস তার কথা’?

    --উনি আমার নতুন রুমমেট মধুরার মা। মধুরার সঙ্গে এসেছেন ওকে এখানে সবকিছু গুছিয়ে দেবার জন্য। কথায় কথায় সোহিনী মাসি যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কলকাতায় যাই কিনা, আমি বললাম যে চাকরি পাওয়ার আগে বেহালায় মামার বাড়িতে নিয়মিত যেতাম। তাই শুনে উনি বললেন যে ছোটবেলায় কয়েক বছর উনি বেহালায় থাকতেন ও সেখানকার ‘মনোরমা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে’ পড়তেন।

    মেয়ের কথা শুনতে শুনতে পৃথা হুঁ-হাঁ করে যাচ্ছে বটে কিন্তু অতীতের ভারে বর্তমান তার কাছে কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কোন্‌ সময়কে ফিরিয়ে আনছে মেয়েটা, মনে ভাবছে সে!

    --আমি যখন বললাম আমার মা-ও তো ঐ স্কুলে পড়তেন আর তোমার নাম বললাম মাসি আমার হাত দু’টো ধরে আমাকে বললেন ‘ওমা, তুমি পৃথা ব্যানার্জীর মেয়ে। আমরা তো এক ক্লাসে পড়তাম আর খুব বন্ধু ছিলাম। তারপর কোথায় যে কে ছিটকে গেলাম!’

    পৃথা কী বলবে ভেবে উঠতে পারছিল না। তারপর নিজেকে অবাক করে একটু জোরের সঙ্গে সে বলে ওঠে, ‘তোর সঙ্গে সত্যিই সোহিনীর দেখা হয়েছে?’

    --আরে, কী শুনছ তাহলে এতক্ষণ ধরে? আজ উনি এক বিয়েবাড়িতে গেছেন দু’দিনের জন্য। আমি বলে দিয়েছি পরশু মুম্বাই যাবার সময় আমি ওদের দুজনকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাব আর রোববার একসঙ্গে ফিরে আসব। মা তুমি কথা বলছ না কেন? তুমি শুনলে আমি কী বললাম?

    নিজের মাথায় আসা চিন্তার ঝাপটায় মেয়ের বাকি সব কথাগুলো পৃথার কাছে স্পষ্ট হলো না। কোনোমতে তার সঙ্গে আরো কয়েকটি কথা বলে সে ফোনটা ছাড়ল।

    রাহুলের দিকে তাকিয়ে পৃথা বুঝল যে তার মন পুরোটাই টিভির পর্দায়। সেটা অবশ্য এক রকমের ভাল কারণ তার এখন একটু একা থাকা দরকার। বসবার ঘরের লাগোয়া বারান্দায় অন্ধকারেই চেয়ার টেনে বসল সে। শহরতলির নতুন তৈরি আবাসনে এই এক সুবিধে যে সামনে যতদূর চোখ যায় খোলা জমি আর বারান্দা থেকে খোলা আকাশেরও অনেকটা দেখা যায়। পৃথা চোখ বন্ধ করে বসে আছে আর অনেকদিন আগে হারিয়ে যাওয়া এক কাহিনীকে মনে করবার চেষ্টা করছে। মনের পটে আস্তে আস্তে ভেসে উঠতে লাগল অনেকগুলো মুখ যাদের সে ভেবেছিল ভুলে গেছে কিন্তু আদতে ভুলে যায়নি। ছেলেবেলার সোহিনীর মুখটা তার স্পষ্ট মনে আছে। খানিকটা খেলার ছলেই সেই মুখে এই দীর্ঘ সময়ের পলি ফেলে পৃথা কল্পনা করতে চেষ্টা করে সোহিনীর বর্তমান চেহারা। আর অয়ন? সোহিনীর তুলনায় তাকে তো সামান্যই চিনত সে কিন্তু তাকে তো পৃথা ভুলেও ভোলেনি।

    সে ছিল এক উত্তাল সময়। একদিকে নকশাল আন্দোলনে পশ্চিমবাংলা রক্তাক্ত আর অন্যদিকে চলেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেখানে অগণিত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, স্বজনহারা-গৃহহারা মানুষ ভারতে ছুটে আসছে আশ্রয়ের খোঁজে। এমন আগুন-ঝরানো দিনে কৈশোরে পা রাখছিল পৃথা। স্কুল তার পাড়াতেই কিন্তু অনেকদিনই সেখানে ক্লাস হতে পারে না। কিছু ছেলে হইহই করে এসে যেই বলে ‘এই বুর্জোয়া শিক্ষার কোনো অর্থ নেই’ আর বড় দিদিমণিকে ভয় দেখায়, তিনি স্কুল ছুটি দিয়ে দেন। স্কুলে পৃথার প্রাণের বন্ধু বলতে তখন রঞ্জা আর সোহিনী। পাড়ার মেয়ে রঞ্জার সঙ্গে সে গোড়া থেকেই ঐ স্কুলে পড়ছে কিন্তু সোহিনী ক্লাস সিক্সে এসে ভর্তি হলেও কীভাবে যেন অল্প সময়েই তাদের বন্ধু হয়ে যায়।

    সোহিনীদের বাড়িটা স্কুল থেকে একটু দূরে – পৃথাদের ভাষায় ‘পাশের পাড়ায়’। ক্লাস এইট বলে পৃথা ও রঞ্জা মাঝে মাঝে মায়েদের অনুমতি নিয়ে সোহিনীদের বাড়িতে বেড়াতে যেত। সোহিনী তার বাবা-মা ও দাদার সঙ্গে ফ্ল্যাটে থাকত – পৃথা বা রঞ্জার মতো একটা গোটা বাড়িতে নয় বা তাদের মতো যৌথ পরিবারেও নয়। পৃথাদের ভালো লাগত ওদের ঝকঝকে সাজানো ঘরগুলো দেখতে – কেমন যেন কাচের দেওয়ালের পেছনে সাজানো বাহারি জিনিসের দোকানের মতো। তুলনায় পৃথা ও রঞ্জাদের বাড়িঘর ছিল ম্যাড়মেড়ে, প্রাচীনতার আস্তরণে ঢাকা। সোহিনীর মায়ের শাড়ি পরবার ধরন আধুনিক, সবসময় পরিপাটি সাজগোজ। ওর বাবা স্যুট পরে অফিসে যেতেন অফিসেরই গাড়িতে। বয়স কম হলেও পৃথা বুঝত যে সোহিনীরা তার বা রঞ্জার মতো আটপৌরে জগতের বাসিন্দা নয়। নেহাত সোহিনীর কোনো দেখনদারি ছিল না তাই বোধহয় অত সহজে ওরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিল।

    ক্লাসের যেকোনো পরীক্ষায় ওরা তিনজন প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে থাকত। অপূর্ব গান গাইত সোহিনী; ওর গলাতেই পৃথা প্রথম শুনেছিল ‘ঠুমক চলত রামচন্দ্র …’। স্কুলের সব অনুষ্ঠানে সোহিনীর গান থাকতই আর থাকত রঞ্জার আবৃত্তি। ক্লাসে পড়া বলবার সময় বিনুনির শেষটা আঙ্গুলে পাকানো ছিল সোহিনীর অভ্যাস; বন্ধুরা হাসাহাসি করলেও তার সেই মুদ্রাদোষ কখনো যায়নি। সময়ে স্কুলে আসা ছাড়া সোহিনীর আরেকটি সমস্যা ছিল – তা হল সেলাই ক্লাস; সে কোনো সেলাই করতে পারত না আর শেখার ইচ্ছেও তার ছিলনা। ওদিকে সেলাই দিদিমণি ছিলেন বড্ড রাগী। এহেন জটিল অবস্থা সামাল দিত রঞ্জা। কতোকটা ক্লাসে দিদিমণির চোখ এড়িয়ে আর বাকিটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, সোহিনীর সেলাইগুলো সে-ই করে দিত।

    তিন বান্ধবী যতক্ষণ স্কুলে থাকত, ওদের কথা যেন ফুরোতে চাইত না। কী এত কথা বলত তারা এখনকার পৃথা তা ভেবে পেল না। তার চিন্তায় ছেদ পড়ল রাহুল এসে যখন জিজ্ঞেস করল, ‘চা খাবে’? এহেন আপ্যায়নে ‘না’ বলে কোন মূর্খ? মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ বলতেই রাহুল ছোট ট্রে-র ওপর রাখা চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয় যাতে ডুবে আছে একটা গ্রীন টী-র ব্যাগ। ছোট করে হেসে ‘থ্যাঙ্ক য়্যু’ বলে ট্রে-টা হাতে নেয় পৃথা। তারপর, রাহুল ফিরে যায় তার খেলায় আর পৃথা ডুব দেয় তার পুরনো দিনের স্মৃতিতে।

    তাদের চারদিকের অশান্ত পরিবেশ পৃথারা টের পাচ্ছিল ক্লাস এইট-এ ওঠবার কিছুদিন পর থেকেই। খবরের কাগজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর আর তাদের অঞ্চল-সহ পুরো পশ্চিমবাংলায় নকশাল আন্দোলনের আঁচ – সেইসব খবরের সিংহভাগ তো মৃত্যুর খতিয়ান আর মানুষের দুর্দশার কাহিনী। কেমন যেন দমচাপা পরিস্থিতি! পৃথাদের বাড়ি বাস স্টপ থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ। বাবা-কাকার অফিস থেকে ফিরতে বেশি রাত হলে মা-কাকিমার চোখেমুখে যে উদ্বেগ তা মনে করে পৃথার এখনও কষ্ট হল। একদিন সেই পথে, অন্ধকার ফুঁড়ে পাড়ারই এক আধ-চেনা ছেলে পৃথার কাকার সামনে এসে বলেছিল, ‘মেসোমশাই, দশটা টাকা দেবেন?’ কথা না বাড়িয়ে কাকা টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে নানারকম আতঙ্কের জাল তাদের জীবনকে জড়িয়ে ফেলছিল।

    দূরে কোন রাতচরা পাখির জোরালো ডাকে পৃথার চমক ভাঙল। চা শেষ করে সে উঠে পড়ল। রাহুল টিভি-র সামনে বসে ঝিমোচ্ছিল, তাকে ডেকে দিয়ে পৃথা নিজে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুমোনোর আগে অবধি তার মাথায় ঘুরতে লাগল ছেলেবেলার দিনগুলো।

    অবসরপ্রাপ্ত পৃথার সংসার শুরু হয় ঢিমে তালে। রাহুল তো তার আগেই অবসর নিয়েছে যদিও নানা কাজে তাকে প্রায় প্রতিদিনই বেরোতে হয়। রাহুলের উঠতে দেরি আছে। আজ কোনো তাড়া নেই তাই কাজের মেয়েটি আসা ইস্তক কফির কাপ নিয়ে পৃথা ল্যাপটপ-এ কিছু কাজ করবে ভাবল। য়্যুনিভার্সিটিতে পড়ানোর সূত্রে নানা জায়গার বিভিন্ন কমিটিতে পৃথা আছে আর তাদের মিটিং-টিটিং নিয়ে সে-ও কিছুটা ব্যস্ত থাকে। কিছুটা কাজের পর আবার তার মন ছুটে গেল ফেলে-আসা দিনগুলোতে।

    ক্লাস এইট-এও পৃথা ও পাড়ার অন্যান্য মেয়েরা একসঙ্গে হয়ে বিকেলে ছোটাছুটি করে খেলত। বুড়ি বসন্ত, হাডুডু, গাদি নামগুলো মনে আছে পৃথার কিন্তু তাদের নিয়ম-কানুন কিছু মনে নেই। পৃথা-রঞ্জার কাছে ওদের বিকেলে খেলার গল্প শুনে সোহিনীর মন খারাপ হতো। ওর বাড়ির আশেপাশে কোনো বন্ধু ছিল না। দুই সখী যদি কোন বিকেলে সোহিনীর বাড়িতে যেত ও খুব খুশি হতো। তেমনি একদিন পৃথাদের সঙ্গে অয়নের প্রথম দেখা হয়। সোহিনীর জগৎ তো তার বাবা-মা ও দাদাকে নিয়ে তাই অয়ন যে দার্জিলিং-এর আবাসিক স্কুল থেকে পাশ করে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়ছে ও দাবা খেলায় সে অনেক প্রাইজ পেয়েছে, সেইসব খবর তারা জানত। অয়নকে প্রথম দেখার অনুভূতি পৃথা আজও ভোলেনি। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া অয়ন - মাঝারি লম্বা, রোগা, বড় বড় চশমায় ঢাকা উজ্জ্বল দু’টি চোখ মনে করে পৃথার এই বাষট্টি বছর বয়সেও শিহরন হল। কী ছিল অয়নের সেই দৃষ্টিতে তা বর্ণনা করা কঠিন কিন্তু নিঃসন্দেহে এক কিশোরীকে অভিভূত করতে পারার মতো ম্যাজিক তাতে ছিল। প্রথমদিন অয়ন তাদের বিশেষ গ্রাহ্যের মধ্যে আনেনি কিন্তু পরে সে তাদের সঙ্গে একটা-দুটো কথা বলতে শুরু করল।

    পৃথারা দেখত যে রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমে আরো খারাপ হচ্ছে। যখন তখন বোমাবাজি শুরু হল, পাড়ার অল্পবয়সি ছেলেরা বোমা হাতে নিয়ে ছোটাছুটি করছে, এমনটা ছিল নিত্যিদিনের ছবি। এদিকে ওদিকে দেওয়াল-লিপির আবির্ভাব হতে লাগল যাদের মানে পৃথাদের কেউ বুঝিয়ে দেয়নি। ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ বা ‘বন্দুকের নল থেকেই ক্ষমতা আসে’ ইত্যাদি কালো আলকাতরায় লেখা স্লোগান ওদের স্কুলের দেওয়ালেও দেখা গেল।

    এমন সময় একদিন সোহিনী এসে বলল, ‘বাবা আমার জন্য একজন প্রাইভেট টিউটর ঠিক করেছেন যিনি অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়াবেন। কিন্তু উনি বলছেন আরো দুয়েকটি ছাত্রীকে একসঙ্গে পড়ালে ওঁর সুবিধে হয়। তোরা আসবি পড়তে?’ ‘বাড়িতে জিজ্ঞাসা করতে হবে তো’ – পৃথা ও রঞ্জার সম্মিলিত উত্তর। রঞ্জার বাবা-মা রাজি হলেন না কিন্তু পৃথার বাবা-মা খুশি হয়েই মত দিলেন। পৃথার পড়তে যাওয়া শুরু হল তবে তাকে পইপই করে বলে দেওয়া হল যে সন্ধ্যের আগে বাড়ি ফিরতে হবে।

    সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস চলতে লাগল। যূথিকাদি খুব ভাল পড়াতেন ও খুব হাসিখুশি তাই তাঁর তত্ত্বাবধানে দুই বান্ধবীর পড়াশুনোর উৎসাহ যেন আরো বেড়ে গেল। পৃথার জন্য পড়তে যাওয়ার আরেক আকর্ষণ ছিল অয়নের সঙ্গে দেখা হওয়া। প্রথম দিকে অয়ন পৃথার সঙ্গে একটা দু’টো কথা বলত কিন্তু ক্রমে সে যেন অনেকটা সহজ হয়ে গেল। মাঝে মধ্যে যূথিকাদি চলে যাবার পর সে তাদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করত। একদিন যেমন সে বোঝাতে বসল জলের ধর্ম আর লীন তাপ। যেদিন অয়ন ছবি-টবি এঁকে সূর্যকে ঘিরে থাকা পৃথিবীর গতিপথ ও ঋতুপরিবর্তন বুঝিয়েছিল, খুব আগ্রহ নিয়ে পৃথা তার প্রতিটি কথা বোঝার চেষ্টা করেছিল। সেদিন পৃথা জেনেছিল যে শুক্র তার নিজের অক্ষের চারপাশে পৃথিবীর উল্টোদিকে ঘোরে অর্থাৎ শুক্রের থেকে দেখলে পশ্চিমদিকে সূর্য ওঠে আর পূর্বদিকে অস্ত যায়। অয়ন যখন বলছিল শুক্রগ্রহকে ভোরের আকাশে দেখা গেলে তাকে বলে শুকতারা আর বাকি সময় সে সন্ধেবেলা দেখা দেয় যখন নাম হয় তার সন্ধ্যাতারা, পৃথা কিছুটা মজার ছলে সোহিনীকে বলে, ‘চল, একদিন আমরা দুজনে মিলে শুকতারা দেখি। অয়নদা তুমি আমাদের চিনিয়ে দেবে তো?’

    --‘অত ভোরে তুই কী করে আমাদের বাড়িতে আসবি?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল সোহিনী।

    তাকে থামিয়ে দিয়ে অয়ন বলে, ‘নিশ্চয়ই চেনাব। একদিন রাত্রে এখানে থেকে যাও। সামনের বড়ো মাঠ থেকে আমি তোমাদের শুকতারা চিনিয়ে দেব। রাতের আকাশে কত সুন্দর সুন্দর constellation দেখা যায়--সপ্তর্ষিমণ্ডল, কালপুরুষ, ক্যাসিওপিয়া।’ দুই বান্ধবী পরস্পরের দিকে চেয়ে সেদিন হেসেছিল – দুজনেই জানে পৃথার পক্ষে সোহিনীর বাড়িতে রাত কাটানো অসম্ভব। তবু, অমন আকর্ষণীয় প্রস্তাব - তাও আবার অয়নের কাছ থেকে – পৃথাকে এক অবর্ণনীয় আনন্দে ভরিয়ে তুলেছিল। আরেকদিনের কথা মনে পড়ল পৃথার। যূথিকাদির আসবার সময় পার হয়ে গেছে বলে দুই বান্ধবী বইপত্তর গুটিয়ে গল্পে মত্ত ছিল। অয়ন ঘরে ঢুকে অবস্থাটা বুঝে সোহিনী ও পৃথাকে ছোট ছোট কয়েকটা পাজ্‌ল্‌ করতে দিয়ে নিজে একটা বই নিয়ে ওদের পাশে একটা রকিং চেয়ারে বসে পড়তে লাগল। পৃথা মাথা তুললেই দেখছিল অয়ন তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসছে। মিনিট পনেরো পরে ওদের তাতিয়ে দেওয়ার জন্য সে বলল, ‘একটা চকোলেট এনেছিলাম – তোমাদের মধ্যে যে আগে সঠিকভাবে শেষ করবে, সে পাবে। আরো দশ মিনিট সময় দেব।’ তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর পৃথা তার খাতাটা অয়নের দিকে এগিয়ে দিল, সোহিনীর আরেকটু সময় লাগল কিন্তু দুজনেই সঠিক উত্তর দিতে পারল। ‘ভেরি গুড’ বলে পৃথার হাতে চকোলেট-টা দিয়ে অয়ন ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। পৃথার ইচ্ছে করছিল অয়নের উপহারটা না খেয়ে যত্ন করে রেখে দেবে কিন্তু প্রিয় বান্ধবীকে না দিয়ে চকোলেটটা ব্যাগে পুরলে কেমন যেন হয় তাই দু’জনে ভাগাভাগি করে সেটা শেষ করেছিল। অবশ্য মোড়কটা সে ফেলতে পারেনি – তার কাশ্মীরি কাঠের বাক্সে, যেখানে স্কুলে-পাওয়া মেডেল, বাবা-মার দেওয়া জন্মদিনের কার্ড বা ঠাকুমার হাতে তৈরি রুমাল রাখা থাকে তাতে যত্ন করে সেটিকে রেখে দিয়েছিল।

    আস্তে আস্তে রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে লাগল। সেই সঙ্গে শুরু হল পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে নকশাল ছেলেদের আব্দারের আধিক্য। প্রথমে ছিল তারা এসে বলে “অন্য পাড়ার দশজন আমাদের পাড়ায় ‘শেল্টার’ নিয়েছে, তাদের জন্য আজ রাতে রুটি-তরকারি চাই, মাসিমা”, পরে তার সঙ্গে যুক্ত হল অপরিচিত বা স্বল্প-পরিচিত দু’তিনটি ছেলের অনেক রাত্রে এসে তাদের বাড়িতে ঘুমোনো। পরিবারের ছেলেদের বা ছোটদের ধারেকাছে আসতে না দিয়ে সেই ছেলেদের বাবা-বাছা করে কথা বলে সমস্ত ব্যাপারগুলো সামলাতেন পৃথার মা। ‘খিদের খাবার চেয়েছে ছেলেগুলো’ বলে যত্ন করে তিনি খাবার গুছিয়ে দিলেও পৃথা জানত যে তার অভিভাবকরা কেউ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের পক্ষে ‘না’ যেমন বলা সম্ভব ছিল না তেমনি এহেন কাজের বিপদ কতখানি তাও তাঁরা বুঝতেন বলে বাড়ির বড়রা খুব অশান্তিতে থাকতেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অবস্থা সামলানোর জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ বা CRPF-এ শহর ছেয়ে গেল – পৃথাদের বাড়ির কাছে এক বিরাট বাগানবাড়িতে তাদের একটি ক্যাম্প-ও হল। তারা যে কত ক্ষমতাসম্পন্ন ও কী নিষ্ঠুর তা নিয়ে নানা গল্প ছড়াতে লাগল চারদিকে। হঠাৎ পাড়া ঘিরে ফেলে বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে নকশালদের খোঁজা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়াল। পৃথাদের বাড়িতেও দু’তিন দিন অমন তল্লাশি হয়েছিল কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি।

    পৃথাদের স্কুল খুব অনিয়মিত, তার সোহিনীর বাড়িতে পড়তে যাওয়াও অনিয়মিত তবে রঞ্জার সঙ্গে গল্প আর বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়া চলছিল। দেখতে দেখতে ক্লাস এইটের ফাইন্যাল পরীক্ষা এসে গেল। তার আগে একদিন যূথিকাদির কাছে পড়তে গিয়ে দিদির জন্য অপেক্ষা করতে করতে দুই বান্ধবী একসঙ্গে বসে পড়ছিল The Hound of the Baskervilles-এর বাংলা অনুবাদ। বইটা ধরে ছিল পৃথা। হঠাৎ কোথা থেকে অয়ন এসে পৃথার মাথায় হালকা টোকা মেরে তার হাত থেকে বইটা নিয়ে বেশ জোরে বকুনি দিল তাদের:

    --পরীক্ষার আগে গল্পের বই! আর বাংলায় কেন - এই বই তো তোমাদের ইংরিজিতেই পড়া উচিত। তা নাহলে ইংরিজি ভাষা শিখবে কী করে?

    তারপর দুই বান্ধবীর করুণ মুখ দেখে বোধহয় মায়া হওয়ায় সে বলে, ‘ঠিক আছে, তোমাদের পরীক্ষার পর আমি ইংরিজি বইটা এনে দেব। এখন কয়েকটা অঙ্ক করোতো দেখি…।’ অয়ন যখন বইটা তার হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছিল, তার আঙ্গুলের ছোঁয়া লেগেছিল পৃথার হাতে – ঐ সামান্য স্পর্শটুকু তার শরীরে যেন বিদ্যুৎ স্পর্শের মতো মনে হয়েছিল। অয়নেরও কি তেমন কোনো অনুভূতি হয়েছিল! পৃথা সেকথা জানবার সুযোগ পায়নি আর সেই বইও অয়নের এনে দেওয়া হয়নি।

    এই ঘটনার পর পর একদিন পড়াশুনোর জন্য পৃথা খুব ভোরে উঠেছিল। জানলা খুলে দোতলার ঘর থেকে যে দৃশ্য সে দেখে তাতে তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঠাকুমা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ তখনও জাগেনি। বাবা-মায়ের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে সে ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘দেখো, আমাদের বাড়ির চারপাশ CRPF-এ ঘেরা। একজন এদিকে বন্দুক তুলে রয়েছে।’ তার আগেরদিন তিনটি ছেলে যে তাদের বাড়ির বসার ঘরে ঘুমোতে এসেছে, পৃথা তা জানত। পৃথার মা সাহসী মহিলা – তিনি ছেলেদের ডেকে তুললেন কিন্তু তারা নির্বিকারভাবে বলল, ‘এখন কী করে বেরোব মাসিমা? বেরোলেই তো গুলি খাব…।’ পৃথার মা কী করে বলেন যে ওরা ওঁর বাড়ি থেকে ধরা পড়লে তাঁদের পুরো পরিবারের কী দশা হবে? উনি কাজের লোককে না ডেকে নিজেই ওদের বিছানা-পত্র তুলে বসার ঘর সাজিয়ে ফেললেন যাতে সেই ছেলেদের রাত্রিবাসের চিহ্ন না থাকে; যদিও ঘরে রয়ে গেল শস্তা সিগারেটের কটু গন্ধ। তাদের মধ্যে একটি ছেলে, যাকে পৃথারা পাড়ার স্কুলের মাধব স্যারের ছেলে বলে চিনত, হাতের ঘড়িটা খুলে পৃথার মায়ের হাতে দিয়ে বলল, ‘মাসিমা, আমার কিছু হয়ে গেলে এই ঘড়িটা বাবাকে দিয়ে দেবেন।’ কাঁপা হাতে নিঃশব্দে ঘড়িটা নিয়ে উনি শোবার ঘরে গিয়ে উদ্বিগ্ন স্বামীকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলেন; তিনি তখন বিছানায় বসে থরথর করে কাঁপছেন। তার বাবার সেই অসহায় অবস্থা দেখে পৃথার কান্না পাচ্ছিল। ছেলে তিনটি দোতলার সিঁড়ির তলায় গিয়ে বসে রইল।

    অসহনীয় দুশ্চিন্তায় ভরা কিছু সময়ের পর এক পুলিশ অফিসর ও দুজন CRPF তল্লাশির জন্য তাদের বাড়িতে ঢুকল। তখন ছেলে তিনটি পাঁচিল টপকে পাশের বাড়ির বাগানে ঢুকে দেওয়ালে সেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পৃথার মা রইলেন তাঁদের সঙ্গে আর বৃদ্ধা ঠাকুমা ও পাঁচবছরের খুড়তুতো বোন যাতে বেফাঁস কথা না বলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে লাগলেন কাকিমা। একতলা-দোতলা ভালো করে দেখে তারা বেরিয়ে গেল আর ছেলেরা আবার পৃথাদের বাড়িতে এসে বসে রইল যতক্ষণ অবধি পাড়ার কর্ডনিং না ওঠে। সেদিন পৃথার পরিবার অল্পের জন্য এক বিরাট বিপদ থেকে বেঁচে গেল। কিন্তু পৃথাদের পরীক্ষা সেবছর হল না।

    সেদিন ছিল পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন। সদ্য-পড়াতে আসা কৃষ্ণাদি পৃথাদের ক্লাসের দায়িত্বে ছিলেন। খাতা ও প্রশ্নপত্র পেয়ে সবে তারা খাতায় কলম ঠেকিয়েছে, হঠাৎ বাইরে তুমুল গোলমালের আওয়াজ। ব্যাপারটা দেখতে কৃষ্ণাদি দরজা খুলতেই ব্যাপারটা বোঝা গেল: কিছু ছেলে পরীক্ষা ভণ্ডুল করতে স্কুলে ঢুকে নানারকম স্লোগান দিতে দিতে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভাঙছে; চেয়ার-টেবিল, জলের কুঁজো, কাচের বাসন সব সামনের উঠোনে এসে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। নাম-ডাকার রেজিস্টার, ছাত্রীদের খাতাপত্র কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলছে – হাওয়ায় ভর দিয়ে তারা পুষ্পবৃষ্টির মতো এসে মাঝের উঠোনে জমা হচ্ছে। ঐ স্কুলেই শনি-রবিবার একটি নাচ-গানের স্কুল হতো। একসময় দোতলা থেকে পড়ে তবলা-হারমনিয়াম-সেতারেরও একই গতি হতে লাগল। এইসব তাণ্ডব দেখে শিক্ষিকা-ছাত্রী সকলেই হতভম্ব, কোনো কোনো মেয়ে কাঁদতে শুরু করল। হট্টগোল একটু কমতে বড় দিদিমণি এসে কৃষ্ণাদিকে বললেন, ‘মেয়েদের লাইন করে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দাও।’ ততক্ষণ অবধি পৃথা সোহিনী ও রঞ্জার সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে বসে ছিল কিন্তু স্কুলের বাইরে এসে ও আর রঞ্জা কোনোদিকে না তাকিয়ে এক ছুটে বাড়িতে এসে পৌঁছোয়। সোহিনীকে তার পর ওরা আর দেখেনি।

    বাড়িতে বসে মা-কাকিমা স্কুলে ঠিক কী হচ্ছে তা বোঝেননি। কিন্তু কী বিপদ থেকে মেয়ে বেঁচে বাড়ি এসেছে তা শুনে ঠাকুমা তাঁর গোপালের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে বললেন, ‘ঠাকুর, তুমি য়্যাগো দেইখ্যা রাইখ্যো’ আর মা-কাকিমা কেমন যেন বাক্যহারা হয়ে গেলেন। তারপর হঠাৎই স্কুলবাড়ির দিকে চোখ পড়তে পৃথা দেখল যে তার তিনতলার দুটো জানলা থেকে গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ‘মা, ঐ ঘর দুটোতে যে আমাদের ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির ল্যাবরেটরি’ – চিৎকার করে এইটুকু বলে পৃথা সাহস করে প্রতিবেশী ডাক্তার-দাদুর বাড়ি থেকে পুলিশে ফোন করেছিল আর কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল যে তাদের স্কুলে ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়েছে। পুলিশ সেদিন এসেছিল বা এসে কী করেছিল সেসব কথা পৃথা জানে না।

    বয়স কম ছিল বলে তখনি ভবিষ্যতের ভাবনা তার মাথায় আসেনি কিন্তু অচেনা এক বিষন্নতায় ক’টা দিন কেটেছিল যে তা মনে আছে। সেদিন থেকে তার অভিভাবকদের নিশ্চয়ই নানাকারণে দুশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে বিনা পরীক্ষায় তারা ক্লাস নাইনে উত্তীর্ণ হয়ে যায়।

    রাজনৈতিক খুন সেসময়ে জলভাত – তার বলি হচ্ছে কখনো নেতা, কখনো সাধারণ মানুষ, কখনো পুলিশ, কখনো বা নকশাল বলে চিহ্নিত মানুষ। শহরে ও গ্রামে ছড়িয়ে গেছে অশান্তির বীজ যার প্রমাণ থাকে খবরের কাগজে, থাকে রেডিওর খবরে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় কঠিন হাতে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষের জীবন তখন অশান্তিতে ভরা। পৃথাদের পাড়া তখন এক কথায় অগ্নিগর্ভ; রাজনৈতিক দলাদলির ফলস্বরূপ যখন তখন বোমাবাজি ও পুলিশের হানা তখন যেন জলভাত। সন্ধের পর বাড়ি থেকে বেরোতে ভয়। যদি কোনো পুরুষ আত্মীয়-বন্ধু পাড়ায় কারো বাড়িতে আসে, তাকে সঙ্গে করে বাড়ির মহিলারা বাসস্টপ-এ পৌঁছে দেবে, এই ছিল রেওয়াজ। নাহলে, তাকে পুলিশের চর বলে রাজনীতির ছেলেরা মারতে পারে বা রাজনীতির ছেলে বলে পুলিশ হেনস্থা করতে পারে।

    নতুন ক্লাসে তিন বান্ধবী বিজ্ঞান বিভাগে পড়বে ঠিক করেছিল। ক্লাস শুরু হল দেরিতে। প্রথম যেদিন পৃথা ও রঞ্জা স্কুলে গেল, স্কুল-বাড়ির অবস্থা দেখে তাদের মন খারাপ হয়ে গেল; চারদিকে যেন তার আঘাতের চিহ্ন। ক্লাসে গিয়েই তারা সোহিনীর খোঁজ করে - তারও তো বিজ্ঞান নিয়ে পড়বার কথা কিন্তু সে তো ওদের ক্লাসে কোনো বিভাগেই নেই। সোহিনীকে না দেখে দুই বান্ধবী উদ্বিগ্ন কিন্তু কী তারা করতে পারে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। পাড়ার যা অবস্থা তাতে সোহিনীদের বাড়িতে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। পৃথা বলে ‘কী হল বলত ওর?’ রঞ্জা উত্তর দেয়, ‘বোধহয় ওর শরীরটরীর খারাপ’।

    দিন দশেক পরে একদিন ওদের ক্লাসের শম্পা এসে খবর দিল যে সোহিনীরা নাকি পাড়া ছেড়ে চলে গেছে। সেই প্রথম পৃথারা জানল যে সোহিনীর বাবা এক অ্যামেরিকান কম্পানিতে কাজ করেন। রঞ্জার ছোটকাকা, যে তখন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ফিজিক্স নিয়ে সদ্য পাশ করেছ, যে খবর শোনালো তাতে পৃথা-রঞ্জার আর মুখ দিয়ে কথা সরল না। অয়নের সঙ্গে তাদের কলেজের নকশাল নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা পুলিশ জানতে পারায় সোহিনীর বাবাকে ছেলের কার্যকলাপ নিয়ে তারা সাবধান করে। আবার, ওঁর উচ্চপদে চাকরির কারণে পাড়ার ছেলেদের টাকার চাহিদা সমানেই বেড়ে যাচ্ছিল। অবশেষে, উনি পুলিশের সাহায্য নিয়ে সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু কোথায় গেছেন তা কেউ জানে না। অন্যদিকে, অয়নের কোনো খবর নেই। তার বাবা তাকে কলকাতা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন নাকি সে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তা ঠিক করে কেউ জানে না।

    এই খবর জেনে পৃথা যে কী কষ্ট পেয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। অয়নের প্রতি তার যে ভালো লাগা তার খবর তো আর কেউ জানে না – এমন কি রঞ্জাও না। কারো কাছে মনের কথা বলে নিজেকে হালকা করবে তার উপায় ছিল না, তাকে সান্ত্বনা দেবারও কেউ ছিল না। চাপা দুঃখ বুকে নিয়ে কিশোরীর বুদ্ধিতে যতখানি সম্ভব যুক্তি দিয়ে নিজেকে সে বোঝাত যে অয়ন নিশ্চয়ই নিরাপদে আছে। কখনো কখনো সে ভাবত যে রাজনৈতিক সমস্যা মিটে গেলে সোহিনীরা আবার ওদের পাড়ায় ফিরে আসবে, ওরা একসঙ্গে পড়বে আর অয়নের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গাঢ় হবে। কখনো ভাবত ভালো লাগাটা হয়তো তার দিক থেকে তাই অয়ন আর যোগাযোগ করবে না। সোহিনীকে নিয়ে পৃথা ও রঞ্জার মধ্যে কথা হতো না যে তা নয় কিন্তু আস্তে আস্তে সে প্রসঙ্গটা কমে আসতে লাগল।

    তারপরে তাদের পাড়ায় যা ঘটল তাকে বর্ণনা করা কঠিন। পৃথাদের বাড়ির চারটে বাড়ি পরে ছিল রমেশ কাকুদের বাড়ি। রমেশ কাকুর দুই দাদা ও একভাই, যাকে পৃথারা বাচ্চুকাকু বলত, ছিল পুলিশের উচ্চপদে। পাড়ার হাওয়া ভাল নয় বলে বড় দুই ভাই পুলিশ কোয়ার্টার্সে গিয়ে থাকছিলেন কিন্তু বাচ্চুকাকু জেদ ধরে বাড়িতেই ছিলেন। তাঁর এক কথা ‘যে পাড়ায় জন্মাইছি, বড় হইছি সেই পাড়া ছাইড়্যা ক্যান যামু?’ এক রবিবার সকালে পাড়ার মধ্যে বাচ্চুকাকু খুন হলেন - তার দেহ পড়ে রইল রাস্তার পাশের খোলা নর্দমায়। মধ্যবিত্ত পাড়ায় সকলে সকলকে নিয়ে থাকত। ছ’মাস আগে পাড়ার সকলে বাচ্চুকাকুর বিয়েতে হইচই করে এসেছে। সেই ঘটনায়, একদিকে যেন আত্মীয়-বিয়োগের শোক আর অন্যদিকে ভয় ও আতঙ্ক সব একসঙ্গে পাড়ার সকলকে চেপে ধরল।

    পুলিশি তৎপরতায় পাড়ায় এবার শুরু হল হল মারণযজ্ঞ; যার মূলে ছিল বাচ্চুকাকুর দুই পুলিশ দাদা। যে সমস্ত ছেলেদের নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে সামান্যতম যোগ ছিল তারা হয় পাড়ার মধ্যেই পুলিশের গুলিতে শেষ হল অথবা জেলে গেল। পাড়ার একমাত্র মেয়ে যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল সে ছিল পৃথাদের তরুণী পড়শি মীরাপিসি। সুন্দরী বলে খ্যাত মীরাপিসি কখন যে ঐ অঞ্চলের আন্দোলনের মাথা কুশলদাকে বিয়ে করেছিল তা পাড়ার খুব বেশি কেউ জানতো না। পিসি তখন সন্তানসম্ভবা - মা-কাকিমার সতকর্তা সত্ত্বেও মীরাপিসির কারাবাস ও সন্তানের জন্ম দেওয়ার যেসব গল্প পৃথাদের কানে এসেছিল তা এককথায় বীভৎস।

    যাহোক, আস্তে আস্তে ঐ রাজনৈতিক অশান্তির আগুন নিভে এল কিন্তু ততদিনে অগুন্তি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ক্ষতি হয়েছে প্রচুর জাতীয় সম্পদের। পশ্চিম পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জায়গায় জন্ম নিল নতুন দেশ ‘বাংলাদেশ’। তাই নিয়ে এই বাংলার মানুষ, যারা সাতচল্লিশের পরে এদিকে চলে এসেছিল, বলাবলি করতে লাগল এই বার দুই বাংলা এক হয়ে যাবে। তাদের তখন আশা যে পাসপোর্ট ছাড়াই নিজেদের গ্রামে আবার তারা যেতে পারবে, দেখতে পাবে ওপারে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের।

    পৃথা বড় হতে লাগল, স্কুল ছেড়ে কলেজ-য়্যুনিভার্সিটি শেষ করে চাকরি শুরু করল। কলেজে তার এক বছরের সিনিয়র রাহুলের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচবছর প্রেম-পর্ব শেষে সে বিয়ে করে। বড় হয়ে পৃথা আকাশ দেখতে শিখেছে শুধু নয় তাকে ভালবাসতেও শিখেছে। কলকাতায় থাকতে কখনো মন খারাপ হলে বা কখনো নিজের সঙ্গে থাকবে ভাবলে ছাদে মাদুর বিছিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকত সে। য়্যুনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পৃথারা ক্লাস-শুদ্ধু ছেলেমেয়ে ত্রিদিবের বাড়ির ছাদে উঠে সূর্যগ্রহণ দেখেছিল। ত্রিদিব এক্স-রে প্লেট দিয়ে অনেকগুলো চশমা বানিয়েছিল। সে কী উদ্দীপনা ওদের! গ্রহণের চূড়ান্ত পর্যায়ে সেবার সূর্যের ৯৫% ঢেকে গিয়েছিল, ভর দুপুরে মনে হয়েছিল সন্ধে নেমে এসেছে। কী অপূর্ব সেই অভিজ্ঞতা! বিয়ের পর রাহুলের সঙ্গে লাদাখ বেড়াতে গিয়ে ছায়াপথ দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছিল। আরো অন্যান্য গ্রহ ও তারাপুঞ্জের সঙ্গে রাহুল তাকে চিনিয়েছিল সপ্তর্ষিমণ্ডলে থাকা ‘বাইনারি স্টার’ অরুন্ধতী ও বশিষ্ঠকে।

    সোহিনীকে পৃথা ভুলে যায়নি কিন্তু তা ছিল এক আবেগহীন অস্তিত্ব। অয়নকে মনে পড়লে প্রথম প্রথম যে বুকে মোচড় দিয়ে কষ্ট হতো সেই অনুভূতিটা কমে গিয়েছিল কিন্তু ঐ নামটির সঙ্গে যে ভালো লাগা জড়িয়ে ছিল তা কখনো বোধহয় পুরোপুরি যায়নি। আকাশ দেখা বা ইংরিজি সাহিত্য পড়া ইত্যাদি সমস্ত অনুষঙ্গে অয়নকে পৃথার মনে পড়ত, মনে পড়লে ভাল লাগত কিন্তু ঐটুকুই। অয়নের স্মৃতি ততদিনে তার কাছে ঐ কাশ্মীরি বাক্সে রাখা প্রিয় জিনিসগুলোর মতো হয়ে গিয়েছে – নেড়েচেড়ে দেখে সযত্নে রেখে দিতে ভাল লাগে। বয়সোচিত বোধ তাকে শিখিয়েছে যে শুধু স্মৃতি তার অস্তিত্বকে সমৃদ্ধ করতে পারে না যেমন পারে শোভিতা বা অস্মিতের বন্ধুত্ব বা রাহুলের প্রেম।

    রাজনীতির ভাষ্যকাররা বলতে পারবেন সত্তরের দশকের রাজনৈতিক উন্মাদনা ইতিহাসে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। সেই উন্মাদনায় পৃথার প্রথম প্রেমের উন্মেষ যে নির্মূল হয়ে গিয়েছিল তা নিয়ে কে ভাবে! সেইসব অনুভূতির ওপর নিঃসন্দেহে সময়ের আস্তরণ পড়েছে কিন্তু একদম যে মিলিয়ে যায়নি তা পুরোনো দিনকে মনে করতে করতে পৃথা টের পেল।

    সারাদিন নানা কাজে কেটে গেল পৃথার। একেকবার রঞ্জাকে ফোন করবে ভেবেছে সে, তারপর তার মনে হয়েছে যে সোহিনী তার কাছে এলে তার সঙ্গে রঞ্জার কথা বলিয়ে ওকে অবাক করে দেবে। রঞ্জা দীর্ঘদিন লন্ডনবাসী। কলকাতা থেকে ডাক্তারি পাশ করে উচ্চশিক্ষার্থে লন্ডনে গিয়ে সে ওখানেই পাকাপাকিভাবে থেকে যায়। তাদের নিজের নিজের ব্যস্ততা থাকলেও পৃথা ও রঞ্জার নিয়মিত ফোনে গল্প হয়। কলকাতা যাবার পথে রঞ্জা ও তার স্বামী অনেকবারই পৃথাদের কাছে ক’দিন করে কাটিয়ে যায়।

    রাতের খাবার শেষ হতে বই হাতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল পৃথা, পাশে আধশোয়া হয়ে রাহুল মন দিয়ে ক্রসওয়ার্ড করছে। মল্লিকার ফোন এল। ফোনটা ধরতেই কন্যা তাড়াহুড়ো করে বলে, ‘মা কাল আসছি। এখানে কথা বলো…’ - পৃথাকে কিছু বলবার সুযোগই দিল না। অন্যদিক দিক থেকে অপরিচিত কণ্ঠ বলে উঠল, ‘পৃথা, আমি সোহিনী বলছি রে। কেমন আছিস?’ তারপর কত যে কথা হল দুজনের - মাঝের সময়টা ভরিয়ে দিতে কথাই তো সম্বল তাদের। বারবার পৃথার মনে হয়েছে তারা কেন পাড়া ছাড়ল সেই কথাটা জানতে চাইবে কিন্তু কী এক সংকোচ তাকে সেই প্রশ্নটা করতে দিল না। সোহিনী নিজের থেকে যতটুকু বলল তাই সে শুনে গেল; যেমন, নতুন স্কুলে ভর্তি হতে তার দেরি হয়েছিল বলে ততদিনে সায়েন্স সেকশনে আর জায়গা ছিল না। অগত্যা সে কমার্স নিয়ে পড়ে ও চার্টার্ড আক্যাউন্টান্ট হয়। সোহিনীও চাকরির থেকে অবসর নিয়েছে বটে কিন্তু এখন সে কনসালট্যান্সি করে। সোহিনীর স্বামী বিজ্ঞাপনের জগতের মানুষ ও সবসময়ই যারপরনাই ব্যস্ত। একটু অনুযোগের সুরেই সোহিনী বলে, ‘দ্যাখনা, এবারেও বললাম যে একসঙ্গে তিনজন পুণা যাই চলো – মধুরাকে গুছিয়ে দিয়ে আমরা একটু বেড়িয়ে আসব কিন্তু তার নাকি নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই। কী আর করি বল – আমি একাই চলে এলাম। একদম কাজ-পাগল মানুষ।’

    নানা কথার পর পৃথা একসময় নিজেকে একটু প্রস্তুত করে স্বাভাবিক গলায় সোহিনীকে জিজ্ঞেস করে, ‘অয়নদা কেমন আছে রে? কোথায় থাকে?’

    --দাদার কথা আর বলিস না। চরম বাউণ্ডুলে জীবন তার। সামনে বসে সেসব গল্প তোকে বলব – ফোনে অত সব কথা বলা যাবে না।

    বোধহয় কথা খুঁজে না পেয়ে পৃথা বলে, ‘আচ্ছা, মধুরা কি তোর মতো গান গাইতে পারে?’

    সোহিনীর উত্তর অবশ্য পৃথার কানে গেল না। সে তখন ভেবে চলেছে, অয়ন তাহলে বেঁচে আছে! তার বেঁচে থাকার খবরটা কি তার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ? সে কি জেলে ছিল নাকি লুকিয়ে ছিল অথবা বিত্তবান বাবার দৌলতে বিদেশে চলে গিয়েছিল - সেইসব কথা সে সোহিনীর থেকে শুনবে কিন্তু বর্তমানে সেইসব কাহিনী কি তার কাছে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ! ভেবে পায় না পৃথা।

    সোহিনীর শেষ কথাটা ভাগ্যিস কানে গেল আর তার খেই ধরে সে বলল ‘আমার মেয়েরও রেওয়াজ করতে গায়ে জ্বর আসে কিন্তু এত সুন্দর ওর নাচের ভঙ্গি!’ আসলে, অয়নের প্রসঙ্গ ওঠা ইস্তক পৃথার বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক করছে, কথা বলতে হচ্ছে চেষ্টা করে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে বুঝল যে তাদের কথোপকথনে এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। নিজেকে গুছিয়ে নিতে আর পরের দিন ভোরে উঠতে হবে বলে সে ‘কাল দেখা হচ্ছে – এখন তাহলে থামি রে’ বলে ফোনটা শেষ করল।

    রাহুল দু’দিন ধরে সোহিনী-সোহিনী প্রচুর শুনছে। এবারে সে পৃথার দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে বলে, ‘সব গল্প তো হয়ে গেল। কাল কী নিয়ে কথা বলবে তোমরা?’ ছদ্মগাম্ভীর্যে মুখ ভরিয়ে পৃথা উত্তর দেয়, ‘ম্যারাথন আড্ডায় আমরা কতখানি পটু তা আপনি কাল দেখতে পাবেন।’

    পরদিন অন্ধকার থাকতে পৃথার ঘুম ভেঙে গেল। অত ভোরে তো কিছু করবার নেই তাই পায়ে পায়ে এসে সে বারান্দায় বসে। চেনা-অচেনা নানা পাখির ডাক কানে আসছে। আস্তে আস্তে প্রকৃতির এই জেগে ওঠা দেখতে ভারি ভাল লাগে তার। তখন আকাশের গায়ে সবে লেগেছে হালকা আলোর আভাস। হঠাৎই পৃথা আবিষ্কার করে আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুকতারা। সেই দৃশ্য এক লহমার জন্য না-পাওয়ার অপূর্ণতাকে ছাপিয়ে প্রথম প্রেমের ভালোলাগাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিল। অয়ন হারিয়ে গিয়েও যে পৃথার জীবন থেকে সম্পূর্ণ হারায়নি সেকথা কি পৃথা এমনভাবে জানত! স্থির হয়ে বসে সে চোখ বন্ধ করল। এভাবে কতক্ষণ কেটে গিয়েছে সে জানে না। একসময় কফির গন্ধে পৃথা তাকিয়ে দেখে দু’কাপ কফি নিয়ে রাহুল নিঃশব্দে তার পাশে এসে বসেছে। নতুন দিনের সূর্যের আলো ততক্ষণে শুকতারাকে আড়াল করেছে।



    অলংকরণ (Artwork) : রাহুল মজুমদার
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments