নিশ্চয়ই জানতে ছটফট করছেন কী ছিল লুমেয়ে’র গবেষণার বিষয়বস্তু-- ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণকারী কয়েক হাজার ডাচ মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড পর্যালোচনা করা। ভাবছেন, এ আবার তেমন কী! হ্যাঁ, শুনতে তেমন কিছু আহামরি না হলেও, গভীর এক রহস্য লুকিয়ে আছে সেই গবেষণার স্থান, কাল, পাত্র নির্বাচনের পিছনে। আর ফলাফল? সে তো আরেক বিরাট চমক!
তাহলে খোলসা করেই বলা যাক সমস্তটা। ১৯৪৪-১৯৪৫ সালের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি, যদিও সেই সময় সেটা কারুরই জানা ছিল না। স্থান: জার্মান-অধিকৃত পূর্ব-ইউরোপের নেদারল্যান্ডস। সেবার শীত পড়েছে জম্পেশ, শরীরের হাড়গুলোকে অবধি জমিয়ে দিচ্ছে, এর আগে কখনো এইরকম মারাত্মক ঠান্ডা পড়েছে বলে ডাচেরা তো কেউ মনেও করতে পারে না। বস্তুত ১৯৪৪ সালের শীতকালে ইউরোপীয় ইতিহাসে সেই সময়ের মধ্যে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা ছিল। প্রায়শই তাপমাত্রা নাগাড়ে কয়েক দিনের জন্য শূন্যের নিচে চলে যেত। মাঝে মাঝেই এমন ভারী তুষারপাত হতো যে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি বরফ জমে যাওয়া কোনো আশ্চর্যের ব্যাপারই ছিল না।
এরই মধ্যে দেশের একটা বড়ো অঞ্চল জুড়ে দুর্ভিক্ষের হাহাকার পড়ে গেছে, না আছে কোনো খাদ্য, না এক ফোঁটা জ্বালানি। অনাহারে মারা গেছে প্রায় বিশ হাজার বেসামরিক লোক আর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ। এই সেই কুখ্যাত ডাচ দুর্ভিক্ষ বা 'ডাচ হাঙ্গার উইন্টার' যা ১৯৪৪ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে, ১৯৪৫ সালের মে মাসের প্রথম দিকে নেদারল্যান্ডসে জার্মান বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ইমোজেন ম্যাথেউস -এর লেখায় ফুটে উঠেছে সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের স্মৃতিচারণ: তখন খাবারের কড়াকড়ি, মাথাপিছু দৈনিক মাত্র ৪০০-৮০০ ক্যালোরির রেশনে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছিল ডাচেরা, যেখানে সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে দিনে যথাক্রমে ২,৫০০ ও ২,০০০ ক্যালোরি সম্বলিত খাদ্য প্রয়োজনীয়। কপাল ভালো থাকলে এক বাটি ট্যালটেলে জলের মতো স্যুপ বা কয়েক টুকরো আলু জোটার কথা। কিন্তু বাস্তবে আলুর কোনো নামগন্ধও কেউ দেখেনি, ওটা আগাগোড়াই ছিল নাৎসিদের একটা ভাঁওতা। দোকানপাটও সব বন্ধ করে দিয়েছিল তারা; যাতে কোথাও থেকে একটুও খাবার না মেলে, সেটা নিশ্চিত করতে তাদের কোনোরকম ভুল হয়নি। খিদের তাড়নায় মানুষ শেষমেশ হাঁচোড়পাঁচোড় করে, হিমায়িত মাটি খুঁড়ে টিউলিপের কন্দ উপড়ে তুলেছে, তারপর তা শুকিয়ে, পিষে ময়দা তৈরি করে রুটি বানিয়ে খেয়েছে। বুঝতেই পারছেন, এই দুর্ভিক্ষ ছিল মানুষের তৈরি, ঠিক যেমনটি হয়েছিল ১৯৪৩-৪৪ সালের সমসাময়িক বৃহত্তর বাংলায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে-লিপ্ত ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত খাদ্য সংগ্রহ করলে, বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। মনে পড়ে যাচ্ছে ‘’অশনি-সংকেত’’ উপন্যাসের কথা, যার পটভূমি ছিল পঞ্চাশের মন্বন্তরের সেই আকাল। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সালতামামির এমন ছবি কি আমরা কোনোদিন ভুলতে পারি?
যাই হোক, চলুন, ফিরে যাই আবার হাঙ্গার উইন্টারের প্রসঙ্গে, কিন্তু, আরেকবার থমকে যাবার পালা: মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আরেক প্রশ্ন: পাশ্চাত্য দুনিয়ার একটি সচ্ছল দেশে কেমন করে হলো এই অঘটন? উত্তর পেতে আবারও ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হয়। ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মে মিত্রবাহিনী ‘’অপারেশন মার্কেট গার্ডেন” নামে এক অভূতপূর্ব পরিকল্পনা করে যার লক্ষ্য ছিল: নেদারল্যান্ডসের মিউস, ওয়াল এবং রাইন নদীর উপর সেতুগুলিকে সুরক্ষিত করা। মিত্রবাহিনীর বিশ্বাস ছিল যে, এই দুঃসাহসী পরিকল্পনাটি সফল হলে, দেশের উত্তরাঞ্চল নাৎসি-মুক্ত হবে; জার্মানির শক্তিশালী সীমান্ত প্রতিরক্ষা, সিগফ্রাইড লাইনের চোখে ধুলো দিয়ে জার্মানির শিল্প কেন্দ্রস্থল রুহরে একটি সাঁজোয়া অভ্যুত্থান চালনা করা সম্ভব করবে; মিত্রবাহিনী বার্লিনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে এবং যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করা যাবে। অপারেশনের দিন ধার্য হয় ১৭-ই সেপ্টেম্বর। এদিকে ‘’অপারেশন মার্কেট গার্ডেন''কে আরও জোরদার করার জন্য লন্ডনে নির্বাসিত ডাচ সরকার সেই সময়েই একটা রেলওয়ে ধর্মঘট ডেকে বসেন এবং তাতে যোগ দেওয়ার জন্য সমস্ত ডাচ রেলওয়ে কর্মীদের আবেদন করেন। সরকার ভেবেছিলেন যে, এতে করে ডাচ অবকাঠামো পঙ্গু হয়ে যাবে এবং মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে সৈন্য ও সরবরাহ পরিবহণে জার্মানরা ঘোরতর সমস্যার সম্মুখীন হবে। ৩০.০০০ শ্রমিক সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ধর্মঘটে চলে যায়। হ্যাঁ, এতে জার্মান সৈন্যদের জন্য লজিস্টিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল বটে, কিন্তু, দেশের পশ্চিম প্রদেশগুলিতে সেপ্টেম্বর মাসেই খাদ্য ঘাটতিও শুরু হয়। আসন্ন বিপর্যয়ের প্রথম সতর্কবার্তা ডাচ সরকারের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ওদিকে ২৭-শে সেপ্টেম্বর অপারেশন মার্কেট গার্ডেন শেষমেশ ব্যর্থ হয়। নাৎসিরা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে নেয় এবং মিত্রশক্তিকে সমর্থনকারী ডাচ সরকারের উপর প্রতিশোধ হিসেবে নেদারল্যান্ডসের ঘনবসতিপূর্ণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য ও জ্বালানি পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। ইতিমধ্যেই বিদ্যমান খাদ্যাভাব সঙ্গীন হয়ে উঠে, দুর্ভিক্ষের আকার নেয়।
ডাচেদের জীবনে হাঙ্গার উইন্টারের তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জানতে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠলেন ডক্টর লুমেয়ে ও তাঁর সহবিজ্ঞানীরা। সর্বপ্রথমে যে ব্যাপারটা তাঁদের নজরে এল তা হল: যে সব মানুষেরা হাঙ্গার উইন্টারের সময় জন্মগ্রহণ করেছেন বা মাতৃগর্ভে ছিলেন তাঁরা দুর্ভিক্ষের আগে বা পরে জন্মগ্রহণকারী মানুষদের তুলনায় বেশি হারে মারা গেছেন। অংক কষে দেখা গেল, ৬৮ বছর বয়সের পর এই প্রথম দলের মানুষদের মৃত্যুর হার দ্বিতীয় দলের মানুষদের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ব্যাপারটা আরও খতিয়ে দেখতে গিয়ে গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করলেন যে, এই সময় যেসব মহিলারা গর্ভবতী হয়েছিলেন, তাঁরা স্বভাবতই অনন্যভাবে দুর্বল ছিলেন, এবং ওই ক্ষুধার্ত মায়েরা যে শিশুদের জন্ম দেন, জন্মের সময় সেই শিশুরা তুলনামূলকভাবে রোগাভোগা ছিলেন। ছোট্ট করে দু-একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক: দুর্ভিক্ষের সময় শিশুর জন্মের ওজন ও প্লাসেন্টাল ওজন যথাক্রমে ৯% এবং ১৫% হ্রাস পায এবং দুর্ভিক্ষের পরে সেগুলো ক্রমান্বয়ে ৯% এবং ১৪% বৃদ্ধি পায়। লক্ষ করার ব্যাপার যে, দুর্ভিক্ষের সময় জন্মানো এই শিশুরাই যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেন, তখন তাঁরা গড় মানুষদের তুলনায় ওজনে কয়েক পাউন্ড বেশি ভারী ছিলেন। মধ্যবয়সে, তাঁদের ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেশি ছিল। তাঁদের মধ্যে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের রোগ এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো অবস্থার উচ্চ হারও পরিলক্ষিত হয়েছিল। নড়েচড়ে বসলেন এবার বিজ্ঞানীরা। তাঁরা অনুধাবন করলেন যে, হাঙ্গার উইন্টারের সময় মাতৃগর্ভে থাকা লোকেরা ওই দুর্ভিক্ষের আগে বা পরে প্রসূত মানুষদের থেকে জৈবিকভাবে আলাদা। ডাচ হাঙ্গার উইন্টার থেকে বেঁচে থাকা এই সব ব্যক্তিরা জীবনে ঠিক একই সময়ে এক বার-ই মাত্র অপুষ্টির শিকার হয়েছিলেন। এই সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীভুক্ত, বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপযোগী জনসংখ্যা চিহ্নিত হলো “ডাচ হাঙ্গার উইন্টার কোহর্ট” নামে। ডাচ দুর্ভিক্ষের আশপাশের সময়ে (১৯৪৩ - ১৯৪৭), পূর্ণ মেয়াদকালে জন্মগ্রহণকারী এবং জীবিত, একক-প্রসূত ২৪১৪ জন মানুষ এই কোহর্ট-এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এঁদের জন্ম-রেকর্ড সযত্নে রাখা আছে আমস্টারডামের উইলহেলমিনা গাস্তুইসে।
প্রসবপূর্ব প্রতিকূলতা ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতিকূল বিপাকীয় ফেনোটাইপের (পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য, যেমন শরীরের ওজন, বডি মাস ইনডেক্স, ইত্যাদি) বৃদ্ধি--এই দুয়ের মধ্যকার গূঢ় সম্পর্কটা বিজ্ঞানীদের কাছে এখন সুস্পষ্ট। কিন্তু এটা সাধিত হলো কীভাবে? স্বভাবতই বিজ্ঞানীরা এবার ফেনোটিপিক বৈশিষ্ট্য ছাড়িয়ে ‘ডাচ কোহর্ট'-এর জেনেটিক মেকআপ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। হাঙ্গার উইন্টার শিশুদের ডিএনএ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা প্রকাশ করল যে তাদের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত জিনের নিয়ন্ত্রক সিস্টেমগুলি পরিবর্তিত হয়েছিল, এবং সেটা-ই ব্যাখ্যা করতে পারে কেন তারা পরবর্তী জীবনে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো বিপাকীয় রোগের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থেকে গেছিল। হেইজম্যানস, লুমেয়ে এবং তাঁদের সহকর্মীরা এবার একটি সম্ভাব্য উত্তর নিয়ে এগিয়ে এলেন। এই সেই তত্ত্ব যা ২০১৮ সালের সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশ পায়। তাঁরা মনে করেন, ডাচ হাঙ্গার উইন্টার সন্তান-সম্ভবা ক্ষুধার্ত মায়েদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন অপুষ্টির কারণে কিছু জিনের মিথাইলেশনের (মিথাইল গ্রুপ যুক্ত হওয়া) মতো এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এর ফলে সেই জিনগুলো কম সক্রিয় হয়ে গিয়েছে এবং অনাগত শিশুদের মধ্যেও সেই অবদমিত জিনগুলো চলে গেছে, আর তখন থেকেই সেগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়ে গিয়েছে। গবেষকরা একথাও মনে করছেন, ডাচ হাঙ্গার উইন্টার কোহর্টের ক্ষেত্রে এই মিথাইলেশন কখনোই সম্পূর্ণরূপে মুছে যায়নি, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সেই মায়েদের নাতি-নাতনিদের মধ্যেও উত্তরাধিকার সূত্রে সঞ্চালিত হয়েছে। এই রকমই একটি জিন হলো পিআইএম৩, যা বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং সেটির মিথাইলেশনের ফলেই সম্ভবত গর্ভস্থ ভ্রূণকোষের বৃদ্ধি-বিকাশ এবং শক্তি, বিপাকক্রিয়া শ্লথ হয়ে গিয়েছে। আইজিএফ২ (ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর ২)-এর ক্ষেত্রেও এপিজেনেটিক পরিবর্তন লক্ষিত হয়েছে-- ডাচ হাঙ্গার উইন্টারে যাঁরা জন্মের আগে ১৯৪৪-৪৫ সালে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিলেন, ৬ দশক পরে, তাঁদের ভাইবোন যাঁরা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হননি, তাঁদের তুলনায় অঙ্কিত জিনের ডিএনএ মিথাইলেশন কম ছিল।
যদিও একজন ব্যক্তির শরীরের সমস্ত কোষে একটা নির্দিষ্ট জিনের তথ্য একই থাকে, কিন্তু বিভিন্ন কোষে বিভিন্ন জিন সক্রিয় বা নীরব থাকে এবং সেই প্রোগ্রামটি মূলত জন্মের আগেই নির্দিষ্ট করা থাকে। একটা নির্দিষ্ট জিন কীভাবে এবং কখন চালু বা বন্ধ হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে এপিজেনেটিক্স। আমরা এখন অবগত যে, অনেক রোগের সূচনা এবং অগ্রগতি মূলত জীবনের প্রথম দিকে পরিবেশগত প্রতিকূলতার কারণে স্থায়ী এপিজেনেটিক ডিসরেগুলেশনের উপর নির্ভরশীল। জিন এবং পরিবেশ কীভাবে হাত ধরাধরি করে কাজ করে সে সম্পর্কে আমাদের পুরোনো ধ্যান-ধারণার আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিল হাঙ্গার উইন্টার-এর অভিজ্ঞতা। গর্ভাবস্থার সীমিত সময়কালে খাদ্যের অভাবজনিত অপুষ্টি কীভাবে পরবর্তী জীবনে সন্তানদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, স্বাস্থ্য ও রোগের ক্রমবিকাশী উৎস হয়ে দাঁড়ায়, সে সম্পর্কে আমাদের চোখ খুলে দেয় ডাচ হাঙ্গার উইন্টার নিয়ে গবেষণা, তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
এই লেখাটি লিখতে লিখতে একটা কথাই বারে বারে মনে আসছিল। অবিভক্ত বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তরে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিল ৫০ লাখ মানুষ-- হাঙ্গার উইন্টারের থেকে অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তা নিয়ে সেই সময় তেমন গবেষণা হয়নি। পরবর্তীকালে যদিও আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভাবের সাথে ডায়াবেটিস-এর মতো বিপাকীয় রোগের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু ‘হাঙ্গার উইন্টার কোহর্ট'-এর মতো কোনো অনন্য জেনেটিক গোষ্ঠীর সনাক্তকরণ করা হয়নি; সুশৃঙ্খল রেকর্ডও সংগৃহীত বা রক্ষিত হয়নি। জরায়ুর পরিবেশগত পরিস্থিতি যে মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম--তা পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করার উপযুক্ত প্রাকৃতিক মালমশলা হাতে থাকতেও আমরা তা হেলায় হারিয়েছি।
তথ্যসূত্র:
The Dutch famine and its long-term consequences for adult health. Roseboom et. al. Early Hum Dev. 2006. 82, 485–491.
Cohort Profile: The Dutch Hunger Winter Families Study. Lumey et. al. International Journal of Epidemiology, 2007. Vol. 36, Issue 6, 1196–1204.
Persistent epigenetic differences associated with prenatal exposure to famine in humans. Heijmans et. al., PNAS. 2008. 105(44): 17046–17049.
The Elevated Susceptibility to Diabetes in India: Evolutionary Perspective. Wells, et. al., Front Public Health. 2016. 4: 145.
DNA methylation as a mediator of the association between prenatal adversity and risk factors for metabolic disease in adulthood. Tobi et. al. Science Advances. 2018 Vol. 4, NO. 1.
Prenatal famine exposure and adult health outcomes: an epigenetic link. Vaiserman & Lushchak. Environmental Epigenetics, 2021 Vol. 7, Issue 1.