• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৯০ | এপ্রিল ২০২৩ | কবিতা
    Share
  • বোর্খেসের কবিতাঃ তিনটি মিলোঙ্গা : খোর্খে লুইস বোর্খেস
    translated from Spanish to Bengali by মূল রচনা থেকে অনুবাদঃ স্বপন ভট্টাচার্য





    ‘পলিম্যাথ’ কথাটার বাংলা বহুবিদ্যাবিশারদ বললে চলে হয়ত, কিন্তু তাতে বোঝান মুশকিল খোর্খে লুইস বোর্খেস (১৮৮৯-১৯৮৬)-কে ঠিক কোন অর্থে পলিম্যাথ বলে থাকে সারা সাহিত্যবিশ্ব। তাঁর পাঠ-পরিধির বিস্তৃতির নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে ছোট গল্প, মেটা-ফিকশন, প্রবন্ধ এবং কবিতায়। পোস্ট মডার্নিস্ট সাহিত্যধারার একটি জঁরকে তিনি এককভাবে পুষ্ট করে গেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে যেভাবে তিনি প্রভাবিত করেছেন তার তুলনা বিরল। বলবার কথা এই যে, বোর্খেসের ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং কবিতাকে একে অন্যের পরিপূরক বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পাঠক জানেন, তাঁর প্রবন্ধ ফিকশনের মত, ফিকশন কবিতার মত এবং কবিতা কখনও ছোটগল্প, কখনও প্রবন্ধের আত্মাকে ধারণ করেছে। কিন্তু, পাঠক জানেন কিনা জানি না, আমি অন্তত জানতাম না, বোর্খেস কিছু জনপ্রিয় গান লিখে গেছেন। নাচের গান। মিলোঙ্গা নামে পরিচিত এই গীতিকাব্যকে ফ্লামেঙ্কোর পূর্বসূরি বলা যায়। এখনো বোর্খেস রচিত এই গান স্পেনীয় বৃত্তে খুবই জনপ্রিয়। রচনা তিনটি কবির ১৯৬৫-র একটি ছোট্ট প্রকাশিত পুস্তিকা Para las seis cuerdas ( ছয়টি তারের জন্য)-তে স্থান পেয়েছিল।


    উত্তরদিকের ফলা

    ওইখানে ওই মালদোনাদোর পথে
    আজকে সে পথ গোপন ও হীননেত্র,
    সেখানে ধূসর কোন এক জনপদে
    দীন কারিয়েখো গান লিখে সুরে বাঁধত,

    আধো বুজে থাকা একটি দরজা পেরিয়ে
    আঙুরলতার বাগানটি চোখে পড়ত,
    দীর্ঘ সন্ধ্যা বিজনের পথ পেরিয়ে
    একাকী বাদক গিটারেতে সুর তুলত,

    তোরঙ্গ এক সেখানে থাকার কথা,
    মসৃণ নয় মলিন যাবে না বলা,
    সময় যাদের ভুলে যেতে শিখেছিল
    সেসবের মাঝে ঘুমিয়ে থাকবে, ফলা।

    এককালে এক সাবেরিও সুয়ারেজ,
    চিলেনো নামে যে বিখ্যাত হয়ে যায়,
    ফলা ছিল তার, সে সর্বদাই সেরা
    নির্বাচন বা ক্যাসিনোয় মামলায়,

    বাচ্চা ছেলেরা, শয়তান বটে তারা,
    নজর আড়ালে খুঁজে ফেরে তা কোথায়
    ডিমের কুসুম মাখিয়ে সেটার ধার
    যেখানে ক্ষয়েছে ফিরিয়ে আনতে চায়।

    কতবার বল আমূল সেঁধিয়ে গেছে
    খ্রিষ্টপ্রেমিক মরণশীলের বুকে
    এবং এখন অনাদরে, সাথীহীন,
    খুঁজে ফেরে এক মরিয়া মুষ্টিকে,

    যা আসলে ধুলো কাচের আড়াল হতে
    ধার দিল এক সোনালী দ্যুতির বৃত্ত
    হলুদ সূর্য ঘর ও সময় পেরিয়ে
    ফলা, আমি করি তোমাকে উত্তোলিত।

    Un cuchhilo en el norte

    মালদোনাদো একটি স্পেনীয় পদবী। দন হার্নান্দো মালদোনাদো উইলিয়াম নামের এক রাজপুরুষকে ডুয়েলে হারিয়ে এই পদবীটি বিখ্যাত করে দেন। আর এক বিখ্যাত মালদোনাদো ছিলেন ষষ্ঠদশ শতকের অভিযাত্রী আলনসো দেল ক্যাস্তিও মালদোনাদো।

    এভারিস্তো কারিয়েখো (১৮৮৩-১৯১২) আর্জেন্টিনার কবি। বোর্খেস এঁর জীবনী লিখেছিলেন।


    দন নিকানোর পারেদেস’এর জন্য একটি মিলোঙ্গা

    এইবার বেজে উঠুক বাদ্যযন্ত্র
    সবিনয়ে বলি শুরু করতে পারি
    নিকানোর পারেদেসকে স্মরণ করি
    মহোদয়গন যদি অনুমতি পাই।

    দেখিনি কখনো অনড় এবং মৃত
    দেখিনি কখনো ন্যুব্জ বা সন্তাপে
    আমি দেখি তাকে দৃপ্ত পদক্ষেপে
    বিচরনভূমি পায়েরমো পার হতে

    গোঁফের প্রান্তে ধরেছে ধুসর পাক
    তারুণ্যে ভরা উজ্জ্বল চোখদুটি
    হৃদয়ের কাছে রাখা ছিল পরিপাটি
    ছোট্ট থলিতে মুড়ে রাখা ছোরা এক ।

    রহস্যে ভরা সেই মৃত্যুর শস্ত্র
    বইতো যেমন বইতো সে অপবাদ
    আমল দিত না ভালোবাসতো না বলতে
    হাড়ের জুয়া বা রেসে ঘটা পরমাদ

    বলতেই হয় প্রাঙ্গনটির কথা
    তার সেটা গড় সেখানে ছিল সে বস
    সাহসীর সেটা মরনমথিত কাল
    শতাব্দী ঊনবিংশ-অষ্টাদশ

    কালো আর পুরু বৃষের আচ্ছাদন
    দীর্ঘ চুলের কেশর হাওয়ায় উড়ছে
    ঘাড় বেড় দিয়ে এলায়ে রয়েছে পঞ্চো
    সোনার আংটি দ্যূতি উদ্ভাসে জ্বলছে

    সঙ্গীরা কেউ কম কুখ্যাত নয়
    অচঞ্চল ও সাহসে মূর্ত কায়া
    চিলেনো নামের বিখ্যাত সুয়ারেজ
    আর ছিল সাথী খুয়ান মুরানিয়া

    বদরাগী তারা প্রায়ই অকস্মাৎ
    নিজেদের মাঝে কলহ বাধিয়ে বসতো
    তার এক ঘায়ে অচিরে পড়ত যতি
    কণ্ঠ অথবা চাবুক ঝলসে উঠত

    স্বভাবে ভারসাম্য রাখা সে লোক
    যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন অবস্থায়
    “ সাবান বানানো বাড়িতে পড়ে নি যে
    নাচতে কেবল সে’ই শুধু শিখে যায়।”

    বিউয়েলা আবহে সুরে তালে তার কাছে
    শোনা যেত কথা চোখে যা যা দেখেছিল
    আদেলা বাজারে আচ্ছাদনের নীচে
    এবং খুনিনে পতিতালয়ে যা পেলো

    এখন সে নেই তার সাথে মরে গেছে
    স্মৃতিসম্ভার এবার ঘুমোবে তারা
    হারানো শহর পায়েরমো অন্তরে
    অসুখী মানুষ আর বুকে বেঁধা ছোরা

    মৃত, তাই আমি চিৎকার করে বলি:
    দন নিকানোর, বলুন ঠিক কী পান
    তেমন স্বর্গে যেখানে ছোটে না ঘোড়া
    জুয়া,ভৎর্সনা অথবা সম্ভাষণ?

    Milonga de Don Nicanor Paredes

    দন নিকানোর পারেদেসকে বোর্খেস ছোটবেলায় এবং বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভকালে দেখেছিলেন পায়েরমো অঞ্চলের নামকরা দলপতি বা গোষ্ঠীনায়ক রূপে।
    বিউয়েলা ( Vihuela) স্প্যানিশ গিটারের আদি সংস্করণ।


    ম্যানুয়েল ফ্লোরেসের জন্য একটি মিলোঙ্গা

    ম্যানুয়েল ফ্লোরেস যে মরবেই
    বাজি রেখে সেই কথা বলা যায়
    মরা আর কিছু নয় – অভ্যেস
    সোজা কথা, সকলেই জানে প্রায়।

    তবুও আমার শোক কম নয়
    জীবনকে ‘যাই’ বলা খুবই কঠিন
    পরিচিত সব কিছু এতটা মধুর
    এত যে জড়ানো তার স্মৃতি অমলিন।

    ভোরবেলা রোজ আমি হাতদুটি দেখি,
    হাতের ভিতরে যত শিরা উপশিরা,
    দেখি, তবে বুঝি খুব তেমনটা নয়
    আমার নিজের চোখে অচেনাই তারা।

    চারটে বুলেট কাল এসে যাবে ঠিক
    বুলেট চারটে এনে দেবে বিস্মৃতি
    বলেছেন এই কথা জ্ঞানী মার্লিন:
    মরা মানে জন্মানো, এই হল নীতি।

    রয়েছে পথের পাশে চলে যেতে যেতে
    ছিল কত কিছু চোখ মেলে দেখবার
    আমার বিচার জিশু করবেন যদি
    জানি না কী মিলে যাবে নজরে তাঁহার।

    ম্যানুয়েল ফ্লোরেস যে মরবেই
    বাজি রেখে সেই কথা বলা যায়
    মরা আর কিছু নয় – অভ্যেস
    একথা তো সকলেই জানে প্রায়।

    Milonga de Manuel Flores

    ম্যানুয়েল ফ্লোরেস ( ১৮০১-১৮৬৮) ছিলেন টেক্সাসের স্বাধীনতাকামী এবং গণতন্ত্রকামী যোদ্ধাদের একজন যারা টেক্সান আর্মি’র জন্য স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে লড়াই করেছিলেন।


  • বর্খেসের কবিতা | তিনটি মিলোঙ্গা | জাদুঘর | চরিত্রেরা
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments