অভ্র আর বি আই ছাড়বার সময় বোধহয় বেরোনোর দরজাটা খুলে রেখে গিয়েছিল, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার। সেই দরজা দিয়ে কোনো হারামজাদা বদমাস বেরোল না। বেরোল এক এক করে কিংশুকের যত শুভানুধ্যায়ী আর প্রিয় কর্মীরা! অনুপম, বিনয় যাদব, অভিষেক মূলগাঁওকার , মুরলিধরন, রঘুরাম রেড্ডি – কিংশুকের প্রিয় চার পাঁচ জন সহকর্মী চাকরি ছেড়ে দিলো এক বছরের মধ্যে। এদের কেউ কিংশুকের ব্যাচের, কেউ বা এক দু ব্যাচ আগের বা পরের।
এই বিদায় নেওয়ার পালা শুধু কিংশুকদের মতন জুনিয়র অফিসারদের বেলায় নয়, এল সিনিয়রদের বেলায়ও। সুব্বারাও আর রাজেন্দ্রন রিটায়ার করলেন। এদের দুজনের সাথে কিংশুকের তেমন জানাশুনো ছিল না। কিন্তু গোস্বামী সাহেবের সাথে ছিল।
গোস্বামী সাহেব অবশ্য রিটায়ার করে নয়, চলে গেলেন ভারত সরকারের ইকনমিক অ্যাডভাইজার হয়ে। গোস্বামী সাহেবের বয়েস পঞ্চান্নর উপরে। ভারত সরকারের যে কাজে যাচ্ছেন সেটা পাঁচ বছরের জন্য। এর মানে স্পষ্ট। গোস্বামী সা’ব আর রিজার্ভ ব্যাংকে ফিরে আসবেন না।
গোস্বামী সাহেবের জন্য অফিসে ডিপার্টমেন্টের ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়ে গেল একটা। জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন গোস্বামী সাব। সব্বাইকে চিনতেন, সব্বার খবর রাখতেন। যে কোনো সমস্যা নিয়ে নির্ভয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলে ওনার উপদেশ চাওয়া যেত।
যাবার আগে আলাদা করে ওদের প্রত্যেকের সাথে কথা বললেন গোস্বামী। কিংশুককে বললেন, “Young man, you do not know how talented you are!” উপদেশ দিলেন মন দিয়ে কাজ করতে। কিংশুক জানে এসব হল কথার কথা, বড় অফিসারদের অনেক সময়ই জুনিয়রদের এই সব বলে চাঙ্গা রাখতে হয়, কিন্তু সেটাই বা কজন করে?
গোস্বামীর জায়গায় ডিপার্টমেন্টের নতুন হেড হয়ে এলেন রামা রাও সাহেব। অভ্রর সৌভাগ্য হয়েছিল এই ভদ্রলোকের সাথে কিছুদিন কাজ করার। স্নেহাশিসের ফ্ল্যাটে ওদের চারজনের মেসে রাত্রে খেতে খেতে অভ্র যা বলেছিল শুনে তখন বিপুল হেসেছিল ওরা সকলে, “বকাসুর মাইরি! রোজ একটা না একটা স্টাফ বা অফিসারকে ওর খাবার হিসেবে চাই!”
হাসতে হাসতে আরও কেচ্ছা শুনিয়েছিল অভ্র, “আমাকে গতকাল ডেকে পাঠিয়েছিল ওর পি এ গোপীনাথ। ভাবলাম, ‘খাইসে কম্মো!’। কাঁপতে কাঁপতে গেলাম। আমাকে দেখেই গোপী উল্লাসে চিৎকার করে উঠে কেবিনের দরজা খুলে ওর বসকে জানালো, ‘The doctor has come! The doctor has come!!’ পুরো ট্যান খেয়ে গেলাম মাইরি, আমি আবার ডাক্তার হলাম কবে থেকে ?”
– তোকে ডাক্তার বানিয়ে দিলো গোপী?
– হ্যাঁ, আমারও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তারপর বুঝলাম যে আমি হলাম কম্পিউটারের ডাক্তার। মালটা টাইম সিরিজের একটা প্রোগ্রাম চালিয়েছে। সেই প্রোগ্রামের প্রম্পটে DOS-এর যত কম্যান্ড আছে চালাচ্ছে। ন্যাচারালি, একটাও কাজ করছে না। ঘেঁটে ঘোল হয়ে শেষ পর্যন্ত তাই আমাকে ডেকেছে। ভাঁড় একটা! পাঁচ সেকেন্ড লাগল আমার সব ঠিক করে দিতে।
হো হো করে হেসেছিল ওরা সব শুনে। কিংশুকের মনে আছে যে ও জিজ্ঞাসা করেছিল, “তোকে থ্যাঙ্কস জানাল না?”
– জানালো তো। যখন জানালো, ভাবলাম নিজের ফিল্ডটা তৈরি করে রাখি। গম্ভীর মুখে বললাম, ‘You called me at the most critical time, Sir! Another ten minutes, and the entire PC would have been beyond recovery!’, শুনে বোকার মতন হাসলো, বলল, ‘Thank God that you could solve the problem!’ সেই থেকে মালটা আর আমাকে জ্বালায় না!
কিংশুক জানত গোস্বামী সাবকে ও miss করবে। কিন্তু সেটা যে এত তাড়াতাড়ি ঘটবে ভাবতে পারেনি।
একটা ছোট্ট ডকুমেন্ট তৈরি হবে অ্যানুয়াল রিপোর্টের জন্য। রামা রাও সাহেব সই করে দিলেই সেটা ছাপার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারে কিংশুক। সই-টা করিয়ে নেবার জন্য রামা রাওয়ের অফিসে এল ও। নতুন হেডের পি এ কেমন যেন বাঁকা চোখে কিংশুককে দেখে ইশারা করল, “যাইয়ে, অন্দর যাইয়ে!”
এক মনে কিছু একটা পড়ছিল রামা রাও। ওকে ভিতরে আসতে দেখে নিঃশব্দে ভুরু তুলে প্রশ্ন করল।
সামান্য হেসে মেমো-টা বাড়িয়ে দিলো কিংশুক। পড়তে পড়তে গম্ভীর হয়ে উঠল রামা রাওয়ের মুখ।
--Tell me, why have you come to me for this?
--This needs your signature, Sir.
-- I know, but you can easily send it through the peon of the department to my P.A.
-- Sir, the peon was not there in sit.
-- Then leave this to my PA and issue a memo to the peon. Does it need a meeting with me? So why have you come personally? To oil me? To pamper my ego?
মুখচোখ লাল হয়ে গেল কিংশুকের। একটা সামান্য ব্যাপারকে কেন এত জটিল করে তোলে এরা?
হিসহিস করে রামা রাও বলল,
-- Now listen carefully. Please do not come to me directly. I shall deal with only the directors of our different divisions, not with grade C officers like you. I know that Goswami used to pamper you a lot, but I will not do so! Now do me a favour and get out!”
সেদিন চার্চগেট স্টেশন থেকেই মাথার পিছনে অল্প অল্প ব্যথা করছিল কিংশুকের। অতসীর সাথে ঝগড়ার পর রাত্রে ঘুম না এলে এই ব্যাথাটা হয় মাথার পিছনে।
এবার কি সকাল-বিকেল সব সময় জুড়ে ব্যথাটা আঁকড়ে থাকবে কিংশুককে?
খুব সম্ভবতঃ প্রেসার বেড়েছে।
নাঃ, অফিসের পরে রামা রাওএর কথা ভাবা মানেই ওর মতন একটা জঘন্য অহংকারী লোককে বেশি পাত্তা দেওয়া। ব্যাপারটা ভুলে থাকতে হবে, যেভাবেই হোক।
বাড়ি গিয়ে আধ ঘন্টার মতন চোখ বুঁজে শুয়ে বিশ্রাম করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিংশুক বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এল অতসী।
শমীকের জ্বর। বহুবার ফোন করেছে অতসী, মোবাইল বন্ধ কেন? আর এত দেরি করেই বা ফেরা কেন? অন্য সব ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অন্তত এক ঘণ্টা আগে বাড়ি ঢুকে গেছে, কিংশুকেরই বা রোজ রোজ দেরি হবে কেন?
এখনই ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে তাড়াতাড়ি।
কিভাবে জানি না অফিসে সবাই জেনে গেল কিংশুকের অপমানিত হবার খবরটা।
এমনিতে বকাসুরের কাছে ঝাড় খাওয়াটা কোনো খবর নয়। কিন্তু কিংশুকের ঝাড় খাওয়াটা একটা খবরের মতন খবর বটে। এতদিন বড় বেশি হাওয়ায় উড়ছিল ছেলেটা। যেন সাপের পাঁচ পা দেখেছিল। নে, এবার ঠ্যালা সামলা।
ডিপার্মেন্টের ল্যাপটপটা নিয়ে কাজ করছিল কিংশুক। আজকাল লক্ষ্য করছে কিংশুক যে এমন অনেক কাজ ওর দিকে ঠেলা হচ্ছে যা ওর করার কথা নয়। আজ কাজের চাপ এত বেশি যে মনে হচ্ছে রাতে খাবার পরেও বসতে হবে।
ল্যাপটপে কাজ করতে বেশ অসুবিধে হয় কিংশুকের। ল্যাপটপের মাউস এখনো অবধি ঠিক করে সামলাতে পারে না ও। অফিসের এই ল্যাপটপটার জন্য একটা এক্সটার্নাল মাউস আনালে কেমন হয়? মাত্র তো কয়েকশ টাকা দাম।
তাড়াতাড়ি করে একটা অফিস মেমো লিখে ফেলল কিংশুক। ডিপার্টমেন্টের জন্য যেন একটা এক্সটার্নাল মাউস কেনা হয় কাজের সুবিধার জন্য।
কেন জানি না এক কথাতে রাজি হয়ে গেল দিলীপ সাহু, ওর বস।
সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফেরার ঠিক আগে ওদের ডিভিশনের পিয়ন গুঞ্জাল ওর দেঁতো হাসিটা বের করে টেবিলের উপর একটা মেমো রেখে গেল। ওরই লেখা মেমো। এক্সটার্নাল মাউসের প্রার্থনা পত্র। উপরে বকাসুর কালো জেল কলমে পরিষ্কার করে লিখে দিয়েছে, “All laptops have a mouse attached with it. We should not purchase an external mouse!”
মাথায় রক্ত চড়ে গেল কিংশুকের। এতদিন ধরে অফিসার পোস্টে কাজ করে একটা কয়েকশ টাকার মাউস কেনার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে? ফোর্ট এরিয়াতেই দোকান রয়েছে। আজই যাবার পথে একটা এক্সটার্নাল মাউস কিনে নেবে কিংশুক নিজের পয়সা দিয়ে।
পরের দিন সকালে নিজের টেবিলে বসে সেই এক্সটার্নাল মাউস দিয়ে কাজ করছিল কিংশুক।
-- How did you get an external mouse for your laptop when I did not approve it?
একমনে কাজ করার জন্য বোধ হয় খেয়াল করে নি কিংশুক। ওদের ডিপার্টমেন্টে এসেছে বকাসুর।
সাধারণত নিজের কেবিন থেকে বেরোয় না বকাসুর, তবে দিলীপ সাহু ওকে তেলে চুবিয়ে রাখে বলে ওকে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি পছন্দ করে ও। নির্ঘাত দিলীপকে নিয়ে কোনো মিটিঙে একসাথে যাবে দুজনে।
কিছু ভাবার আগেই কিংশুকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, “I paid for it from my own pocket. You all are very kind enough to pay me a salary, you know!”
মুখচোখ লাল হয়ে গেল রামারাওয়ের। কোনো কথা না বলে দিলীপ সাহু আর রামারাও গটগট করে বেরিয়ে গেল ডিপার্টমেন্ট থেকে।
পাশের টেবিলে ওর জুনিয়র অফিসার দীপঙ্কর ওকে ফিসফিস করে বলল, “কিংশুকদা, দ্বিতীয় সেন্টেন্সটা না বললেই পারতে!”
কথাটা বলেই কিংশুকের মনে হয়েছিল রাগের মাথায় মস্ত বড় একটা ভুল করে ফেলেছে ও।
বকাসুর প্রতিশোধ নেবে।
এখন থেকে প্রতিদিন ওকে খাবার পর বকাসুর ফের ওকে বাঁচিয়ে তুলবে যাতে পরের দিন আবার নতুন করে ওকে খেতে পারে।
সেবার প্রমোশন হল না কিংশুকের।
যার প্রমোশন হয় নি, সবাই জানে সে ফালতু, অফিসে তার কোনো দাম নেই।
এতদিন ওর বর্তমান বস দিলীপ সাহুর সাথে ওর কোনো সমস্যা হয় নি। কিছুদিন আগেও লাঞ্চের পর ওদের সাথে নিচে নেমে একসাথে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেত দিলীপ সাহু। বিভিন্ন ব্যাপারে পরামর্শ নিত কিংশুক আর অভ্রর।
প্রোমোশনের পর এখন অবশ্য আর যায় না।
কিংশুক লক্ষ্য করেছে সিনিয়র অফিসারদের সামনে কিংশুক কিছু বলুক সেটা পছন্দ করে না দিলীপ সাহু। টপ ম্যানেজমেন্ট থাকবে এরকম কোনো মিটিং এলে কোনো না কোনো অজুহাতে কিংশুককে সেদিন অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত রাখবে দিলীপ। একবার দুবার এরকম হবার পর ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হয় নি কিংশুকের। দিলীপ সাহু আর রামা রাও এখন দীপঙ্করকে তুলছে। কিংশুকের তাতে কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু সেজন্য ওকে শুধুশুধু নিচু দেখালে সেটা মেনে নেওয়া শক্ত।
একদিন কথায় কথায় দিলীপ সাহুর সাথে একটা অফিস মেমো নিয়ে আলোচনার সময় কিংশুক বলতে গিয়েছিল, “I think we should change this word!” কিন্তু “I think” বলা হতে না হতে ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে দিলীপ সাহু বলল, “It is not your job to think, Kingshuk. Let your seniors do that. You just do what I say!”
চট করে মুখে কোনো কথা যোগাল না কিংশুকের।
নিজের টেবিলে ফিরে আসার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে রইল কিংশুক। তারপর নিজেরই কেমন একটা হাসি পেল। দিলীপ সাহু যতক্ষণ অবধি না ভাবা শুরু করছে, ভারতবর্ষের অর্থনীতি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু হে ভগবান, দোহাই তোমার, কোনো ভাবনা দিও না দিলীপ সাহুর মাথায়। ও ভাবতে শুরু করলে ভারতবর্ষের যে কি হাঁড়ির হাল হবে কে জানে।
লম্বা হলঘরে সারি সারি বিভিন্ন সাইজের টেবিল। কোনটা পিওনের, কোনটা ক্লার্কের, কোনটা বা স্টাফ অফিসারদের। বি গ্রেড বা তার চেয়ে উঁচু অফিসারদের বিশাল বড় টেবিলগুলো দেয়ালের ধার বরাবর লাইন করে সাজানো। কিংশুকের মনে হল এই টেবিলগুলো যেন এক একটা কবর। একটা কবরখানায় কবরের পাশে বসে আছে ও। প্রত্যেকটা কবরের উপরে একটা করে কাটা মুন্ডু। মুন্ডুগুলোর মুখে মুখোশ, যেন সারাদিন ধরে একটা কবরখানায় কাজ করবার লজ্জাটা ঢাকতে চায়। যেন এভাবে কবরের বাইরে থাকাটাই লজ্জা। যেন যত তাড়াতাড়ি কোনো একটা কবরের মধ্যে ঢুকে পড়া যায় এই নিয়েই শুধু ভাবিত সব্বাই।
চার্চগেট স্টেশনে ৬-২৯ এর বোরিভালি ফাস্ট-এ লাফিয়ে উঠে জানলার সিটটা দখল করার সময় ওর জীবনে অভ্র-র অভাব আবার নিদারুণভাবে অনুভব করল কিংশুক।
একজন বন্ধু যে জীবনের এতখানি জুড়ে থাকতে পারে আগে কে তা জানতো!
আই আই টি।
প্রথম কবে শমীক এই নামটা শোনে তা মনে নেই, তবে খুব ছোটবেলার থেকে মায়ের সাথে কথাবার্তায় এই নামটা প্রায়ই আসত। শমীকের মধ্যে এই আই আই টি-তে পড়বার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছিল মা। সেই সময় সব কথাবার্তাই প্রায় হত শমীক আই আই টি-র হোস্টেলে পড়তে চলে গেলে মা কি কি করবে তাই নিয়ে, যেন ওখানে পড়বার সুযোগ পাওয়াটা একান্তই একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ছোটবেলায় শমীকের তাই ধারণাই ছিল না যে ওখানে পড়তে গেলে প্রতিযোগিতার বাজারে কতখানি উপরে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে।
ক্লাস টেনে বোর্ডের পরীক্ষা প্রথম শমীককে আকাশ থেকে একেবারে পাতালের গহ্বরে ফেলে দেয়। একবার এরকম গহ্বরে ঢুকলে বেরিয়ে আসা খুব সোজা নয়। মাথার মধ্যে অজস্র খারাপ চিন্তা আসে তখন। আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, স্কুলের সহপাঠীদের বাঁকা বাঁকা কথা চিন্তা আরো বাড়িয়ে তোলে। শমীকের স্পষ্ট মনে আছে সেই সময়টাতে কেমন সব আতঙ্কে ভুগতো ও। কখনো ভাবত ঘরের বন্ধ দরজাটা ও খুলতে পারছে না, কখনো বা ভাবত যে ঘুম থেকে উঠতে না পারায় পরীক্ষা দিতে পারছে না আবার কখনো বা লিফটে উঠলে মনে হত একবারে লিফটের দড়ি ছিঁড়ে পাতালে ঢুকে যাবে।
এই সব চিন্তার কোনোটাই যুক্তি মেনে আসে না। কিন্তু যখন বাজে চিন্তা আসে তখন এই চিন্তাগুলো যে কোনো যুক্তি মেনে আসছে না এই যুক্তিবোধটাই লোপ পেয়ে যায়। অনেক সময় অন্য কারুর সামান্য সাহায্যর দরকার হয় এই যুক্তিবোধকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।
বাবার সেদিনের সেই অন্যকে বেশি ক্ষমতা না দেওয়ার কথাটা যেন জাদুমন্ত্রের কাজ করেছিল শমীকের কাছে। পরিচিত কারুর কাছ থেকে কোন আঘাত দেওয়া বা অসম্মানসূচক কথা এলে প্রায় মন্ত্রের মতন এই কথাটার কথা ভাবত শমীক। অনেকখানি কাজ হত এতে, নিজের ভয় কমতো, কিন্তু রাগটা যেত না। বরং কি করে যারা আঘাত দিচ্ছে তাদের উপর প্রতিশোধ নেবে এই চিন্তায় সময় বেরিয়ে যেত অনেকটা।
বাবার কাছে পাওয়া মন্ত্রে অনেকটা কাজ হলেও, গহ্বর থেকে বেরোতে গেলে শমীকের এর সাথে দরকার ছিল কিছু ভালোবাসার। শমীকও তাই গহ্বর থেকে বেরোতে পেরেছিল ওর ভালোবাসার পাখার উপর ভর করে। ধাঁধা বা পাজলের বই পড়তে পড়তে ঠিক কখন যে ও সত্যি সত্যি অংক আর বিজ্ঞানকে ভালোবেসে ফেলেছিল সেটা ও নিজেও জানে না। ক্যালকুলাস, ট্রিগোনোমেট্রি, কোঅর্ডিনেট জিয়োমেট্রি, সেট থিওরি – এর সব কিছুর মধ্যেই যেন এক আশ্চর্য জাদুকাঠি রয়েছে, যেন ভালো করে বুঝতে পারলেই খুলে যাবে প্রকৃতির একের পর এক রহস্যের পর্দা। এমনকি কোনো অংক না পারলেও সেটা নিয়ে ক্রমাগত ভেবে যেতে খুব ভালো লাগত ওর। প্রথম দিকে প্রায়ই ওকে ভাবতে হত বিভিন্ন অংক নিয়ে। ভেবে ভেবে অনেক সময় দু তিন দিন পরে নিজে নিজেই সে সব অংকের সমাধান বের করে ফেলতে পারত শমীক। কিছুদিন পর থেকে অবশ্য আর অতটা ভাবতে হত না। ক্লাস টুয়েলভে ওঠার পর থেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ই তাই ওর আর শক্ত তো লাগতোই না বরং মাঝে মাঝেই সেগুলোকে খুব সোজা বলে মনে হত। এই নিয়ে অবশ্য ক্লাসের কারুর কাছে মুখ খোলে নি শমীক। ও বুঝতে পেরেছিল যে সবাই যখন ওকে খরচের খাতায় লিখে ফেলেছে তখন এসব নিয়ে জাঁক করতে গেলে ব্যঙ্গই কপালে জুটবে শুধু।
আই আই টি পরীক্ষাতে শমীক প্রথম ওর এই ক্রমাগত ভেবে যাওয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা পায়। তিন চারখানা এমন অংক এসেছিল পরীক্ষাতে যেগুলো ওকে আগে প্রচুর ভাবিয়েছে। ভেবে ভেবে নিজে নিজেই সল্ভ করেছিল বলে পরিষ্কার মনে রয়েছে সবকিছু। পরীক্ষার খাতায় ওই অংকগুলো নামাতে ওর সময় লেগেছিল দশ মিনিটের সামান্য বেশি।
তবু আই আই টি পরীক্ষার ফল সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি শমীক। পরীক্ষা দিয়ে এসে বাবাকে বলেছিল কোনো চান্সই নেই। মা টেলিফোনে এই নিয়ে বেশি খোঁচাতে গেলে রেগে ঝগড়া করেছিল মায়ের সাথে। আই আই টি নিয়ে কেন এত চিন্তা মায়ের? আই আই টি-ই কি জীবনের সমস্ত কিছু? এতদিন ধরে এত যে পড়াশুনো করলো শমীক আই আই টি না পেলেই কি সব একেবারে বৃথা হয়ে যাবে?
আই আই টি পরীক্ষার ফল বেরোনাটা অবশ্য তখন অবধি ওর জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। রেজাল্ট দেখে ওর বিশ্বাসই হয় নি যে ও এতটা ভালো rank করতে পেরেছে। ওদের স্কুলের মধ্যে ওর rank-ই সবচেয়ে উপরে। অরবিন্দও আই আই টি পেয়েছে, তবে ওর অনেক নিচে rank। ভালো, নামকরা আই আই টি গুলোতে ওই rank-এ জায়গা হবে না।
স্কুলে মাস্টারমশাইদের বাহবা, বন্ধুদের বিস্ময় মেশানো দৃষ্টি, পাড়া-প্রতিবেশীদের কংগ্রাচুলেশন্স, মা-বাবার হাসিমুখ – সব মিলিয়ে শমীক তাই ভাবছিল সেই দিন যে জীবন কি অদ্ভুত। কখনো কেউ খাদের নিচে, কখনো বা আকাশে।
খাদের থেকে একবার যখন বেরোতে পেরেছে ও তখন আর নিজেকে কখনো এরকম অবস্থায় নিয়ে যাবার কোনো মানে হয় না। এখন থেকে শুধু আকাশেই উড়বে শমীক।
আর উড়তে উড়তে মহাসাগর পেরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে।
স্বপ্ন দেখা শুরু করে শমীক।
একটা বিশাল ল্যাবরেটরিতে একটা কম্পিউটার টার্মিনালের সামনে বসে আছে শমীক। ওর লেখা প্রোগ্রাম ঠিকমতন কাজ করলে ওই কম্পিউটারের সাথে লাগানো একটা বিকারের সবজেটে রঙের একটা তরল থেকে নিচের একটা টেস্ট টিউবের লাল রঙের মিশ্রণে ঠিক দু ফোঁটা এসে পড়বে। এই দুই তরলের মিশ্রনে গাঢ় বেগুনি রং আসার কথা। বেগুনি রং আসতেই উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠছে শমীক, আর্কিমিডিসের মতন।
একটা বিশাল ল্যাবরেটরি দরকার শমীকের।
সেরকম কোন ল্যাবরেটরি পেলে সেখানেই সারাজীবন থেকে যাবে শমীক।
আর ফিরবে না, অন্তত যতদিন না দেশে এরকম কোনো ল্যাবরেটরি হচ্ছে।
– পাজামা কটা নিয়েছিস?
– ছটা
– আর গেঞ্জি-আন্ডারপ্যান্ট?
– ওগুলোও ছটা করে।
– ছটাতে হয়ে যাবে? আরও একটা দুটো বেশি লাগবে না?
– দরকার পড়লে এক দু দিন কাচতে হবে একটা দুটো। খুব যদি দরকার পড়ে, কিনে নেব ওখান থেকে।
দুটো সুটকেস খোলা বেডরুমে। একটা বড় আর একটা ছোট। গোছগাছ চলছে শমীকের আই আই টি কানপুর যাবার।
অনেকদিন পরে দু-দিনের জন্য বোম্বে এসেছে অতসী দিল্লি থেকে, গতকাল রাত্রে। উদ্দেশ্য হোস্টেলে যাবার আগে ছেলের সুটকেস ইত্যাদি গুছিয়ে দেওয়া। হাতে বেশি সময় নেই। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে আবার দিল্লি ফিরে যাবে। তবে শমীকের ভর্তি হবার দিনটাতে আবার সরাসরি দিল্লি থেকে কানপুর চলে যাবে। অজস্র ঝগড়াঝাঁটি চেঁচামেচির পর এইটুকু অন্তত মা-কে করতে দিতে রাজি হয়েছে শমীক।
– কাপড় টানাবার দড়ি নিয়েছিস সাথে? আর ক্লিপ?
– তোমাকে এই নিয়ে অন্তত চার পাঁচবার তো বললাম, প্রায় দিন পনের আগে আমার লিস্ট তৈরী হয়ে গেছে। অরবিন্দ, রাজেশ, মিলিন্দ ওদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ওদের লিস্টগুলো জোগাড় করে, তার সাথে কিছু অ্যাড করে লিস্ট বানিয়েছি। লিস্ট ধরে ধরে সব কিনে সুটকেসে ভরাও হয়ে গেছে। তোমাকে এসব নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না।
তাই দেখছে অতসী। সত্যি সত্যিই খুব একটা কিছু ভাববার নেই অতসীর। শমীক জানে না, গতকাল রাত্রে চুপিচুপি শমীকের লিস্টটা একবার দেখে নিয়েছে অতসী। দেখেছে আর অবাক হয়েছে। বিশাল বড় লিস্ট, প্রায় সবকিছু কভার করা আছে তাতে, কোনকিছুই ওর করবার জন্য বাকি রাখে নি শমীক।
ছেলে বড় হয়ে গেছে, গুছিয়ে নিজের কাজ নিজে করছে, এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে অতসীর? তবু কেন একটুও আনন্দ হচ্ছে না অতসীর?
অতসী না থাকলে আজ একটুও অসুবিধে হবে না আর কারুর। হঠাৎ করে মরে গেলেও নয়।
এমন হওয়াই কি ভালো নয়?
তবু কেউ আর তোমার উপরে নির্ভর করে নেই, এই ভাবনাটা কেন যে এত কষ্টের?
ছোটবেলায় অতসী শমীককে খেপাত এই বলে যে শমীক হোস্টেলে গেলে ও সেই হোস্টেলের কাছের কোনো হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে যাবে। প্রথম প্রথম এতে খুব রেগে যেত শমীক, তীব্র আপত্তি জানাতো, একটু বড় হবার পরে অবশ্য বুঝেছিল যে মা ঠাট্টা করছে।
কানপুর আই আই টি নিজেই একটা ছোটোখাটো শহরের মতন। এক হাজার একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে এক বিশাল বড় ক্যাম্পাস। কিন্তু কানপুর আই আই টি কে কেন যে কানপুরে বলা হয় কে জানে! কানপুর শহর ছাড়িয়ে আরও প্রায় পনের কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুরে এর অবস্থান।
দ্রুত গাড়ির থেকে দুপাশে তাকিয়ে বুঝবার চেষ্টা করছিল শমীক আশেপাশে কোনো হোটেল আছে কিনা। যখন ওর মনে হল নেই, মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার হোস্টেলের পাশে কোনো হোটেলে থাকা আর বোধ হয় তোমার হল না। হোটেল অনেক দূরে এখান থেকে।”
হাসল অতসী। সামনে থেকে কিংশুক-ও যোগ দিলো হাসিতে, বলল, “মা-কে আন্ডার-এস্টিমেট করিস না, তুই কিন্তু ক্যাম্পাসের গেস্ট হাউসের কথা ভুলে যাচ্ছিস!”
অনেক দিন পরে ওরা তিনজনে একসাথে বেরিয়েছে, উদ্দেশ্য শমীককে আই আই টি কানপুরে পৌঁছে দেওয়া। প্রচুর কাজ সামনে। ভর্তির সমস্ত ফর্মালিটি শেষ করা, একটা জয়েন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলা ক্যাম্পাসের ব্যাংকে, কিছু সাধারণ জিনিসপত্তর কিনে দেওয়া শমীককে।
প্রথমে মা বা বাবা, কাউকেই আসতে দিতে রাজি হচ্ছিল না শমীক। অনেক কষ্টে ঠান্ডা মাথায় ওকে বুঝিয়ে একটা দিন সঙ্গে থাকার অনুমতি জোগাড় করতে হয়েছে কিংশুক আর অতসীকে।
সন্ধ্যার ফ্লাইটেই আবার ফিরে যাবে কিংশুক আর অতসী। কিংশুক বোম্বেতে আর অতসী দিল্লিতে।
মা আর বাবার গাড়িটা যখন বেরিয়ে গেল, শমীকের মনটা কেন জানি না একটা অদ্ভুত উল্লাসে ভরে গেল। এখন থেকে প্রকৃত অর্থে একা থাকবে শমীক। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। কোনো কিছুর জন্য অন্য কারুর অনুমতির দরকার নেই। যখন খুশি খাবে, যখন খুশি ঘুমোবে। ইচ্ছে হলে চান করবে, ইচ্ছে না হলে করবে না!
বাড়িতে অনেকটা সময় একা কাটালেও সব সময় নিজের খুশিমতন সব কিছু করা যেত না। বাবা বেরোনোর আগে ব্রেকফাস্ট সেরে নিতে হতো। বাবা এটাও চাইত যে অফিসে বেরোনোর আগে শমীক সেই সাত সকালে চান করে নিক। অনেক লড়াই করে পরে চান করবার দাবি আদায় করে শমীক। এখানে মা-বাবার কোনো খবরদারি আর থাকবে না এখন থেকে। সবই চলবে নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছে অনুযায়ী।
যেমন এই মুহূর্তে শমীকের ইচ্ছে হচ্ছে ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে আসবার। মা-বাবার সাথে এরই মধ্যে কিছুটা ঘুরে দেখেছে শমীক, বিশেষ করে ক্যাম্পাসের কমার্শিয়াল এলাকাটা। ক্যাম্পাসের মধ্যেই বইয়ের দোকান আছে দেখে খুব ইম্প্রেসেড হয়েছিল বাবা। কিন্তু খালি বই আর খাবার সম্বন্ধে জানাটা কোনো কাজের কথা হল না। যে জায়গায় থাকতে হবে সেই জায়গাটাকে পুরো নিজের মতন করে মানিয়ে নিয়ে থাকতে হলে ভালো করে হেঁটে দেখে নেওয়া দরকার কোথায় কি আছে। কোথায় কোন ডিপার্টমেন্ট, কোথায় কোন হোস্টেল, কোথায় কোথায় কি কি সব খেলবার জায়গা সব জেনে নিতে হবে চটপট।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা অবশ্য সেদিন আর হল না শমীকের। হোস্টেল থেকে বেরিয়ে দু মিনিট হাঁটতে না হাঁটে শমীকের চোখ আটকে গেল রাস্তার পাশের বেশ বড় একটা মাঠে। ফুটবল খেলছে কিছু ছেলে। লোভ লোভ চোখে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল শমীক। একটা ফর্সা গোলগাল ছেলে ওকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে –
– শমীক! তু যাঁহা?
প্রবীণ দামলে।
স্কুলে ওর থেকে দু ক্লাস উপরে পড়ত প্রবীণ। শমীকের সাথে ওর ভাব ছিল বেশ, কারণ শমীকের মতন প্রবীণ-ও ফুটবল খেলতে ভালোবাসত। ব্যাকে বেশ ভালো খেলত প্রবীণ।
মিনিট দুয়েক এ ওর খোঁজ নেওয়ার পর ওর হাত ধরে ওকে মাঠে নামালো প্রবীণ।
যে ড্রেসে বেরিয়েছিল সেই ড্রেসেই মাঠে নেমে পড়ল শমীক।
জামাকাপড় নোংরা হবে? হোক!
দরকার পড়লে কাদামাখা জামা পরেই বিছানাতে শুয়ে পড়বে শমীক রোজ যদি ফুটবলটা খেলতে পারে।
লখ্নউ থেকে রাত দশ’টা দশ এর বোম্বের ফ্লাইটে উঠে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল কিংশুক। আই আই টি ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর আগে অতসীর সাথে লিস্ট মিলিয়ে দেখে নিয়েছে দুজনে। যা যা করতে আসা – হাতে সময় খুব অল্প থাকলেও – করে ফেলা গেছে বেশির ভাগ। একটা দুটো ছোটোখাটো যে সব কাজ বাকি আছে তা শমীক নিজেই পরে করে নিতে পারবে।
কানপুর শহরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ছোট অফিস রয়েছে একটা। সেখানকার হেড এখন অমিত কার্ভেকর – কিংশুকের চেনা। একসাথে একটা কমিটিতে কাজ করেছিল ওরা দুজনে। অমিত কিংশুকেরই বয়সী। কাজের সূত্রে সেই সময় থেকেই বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল অমিতের সাথে। অমিতের সাহায্য নিয়েই এখানে একটা গাড়ি বুক করেছে কিংশুক, সারাদিনের মতন।
আজ সারাটা দিন কেমন যেন চুপচাপ ছিল অতসী। শমীকের জন্য একটা প্লাস্টিকের মাদুর, খান তিনেক বিছানার চাদর, দু-সেট তোয়ালে আর কিছু সাধারণ বাসনপত্তর কিনতে হয়েছে। এই ধরনের সব ঘোরতর সাংসারিক বিষয়েও কোনো মতামত দিতে চায় নি অতসী নিজের থেকে, কেমন যেন নিস্পৃহ গলায় শমীককে বলেছে, “তোর পছন্দ তো?” শমীকের হাসি-ঠাট্টার সাথে পাল্লা দিয়ে জোরে জোরে হাসে নি, আগে যেমন হাসতো। কেমন যেন হাসা দরকার, তাই এক টুকরো হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে। আগে কিংশুক এতসব লক্ষ্য করত না, হয়তো আজ নিজের ভিতরে একটা অস্থিরতা রয়েছে বলেই লক্ষ্য করছে সবকিছু। মুশকিল হচ্ছে নিজের ভিতরে অস্থিরতা থাকলে কথা বলতে ইচ্ছে করে না কিংশুকেরও। গাড়িতে ওঠা অবধি সারাটা সময় শমীক সাথে ছিল। এখন থেকে আরও প্রায় তিন ঘন্টা সময় শুধু অতসীর সাথে কাটাতে হবে কিংশুকের।
কানপুর আই আই টি থেকে লখ্নউ এয়ারপোর্ট গাড়িতে প্রায় দু ঘন্টা সময় লেগে যায়। ড্রাইভারটির হাত পাকা বলতে হবে, পৌনে দু’ ঘন্টার মধ্যে গাড়ি এয়ারপোর্টে ঢুকিয়ে দিলো। এই পুরো সময়টা অতসীর সাথে একটা দুটো খাজুরে কথা ছাড়া আর কোনো কথা হয় নি। গাড়ির মধ্যে ড্রাইভারের সামনে কোনো ব্যক্তিগত আলোচনা অবশ্য কিংশুক পছন্দ করে না। বাংলা না জানলেও, হিন্দিভাষীদের পক্ষে অনেক কিছু আন্দাজ করে নেওয়া সোজা। পাছে অতসী কিছু বলা শুরু করে, প্রায় পুরো পথটাই কিংশুক তাই ঘুমের ভান করে চোখ বুঁজে কাটিয়েছে।
এয়ারপোর্টে অসংখ্য লোকের মধ্যে ব্যক্তিগত পরিসর অনেক বেশি। ভয়ে ভয়েই ছিল কিংশুক। হয়তো অতসীর এই নিস্পৃহতা কোনো বড় ঝড়ের পূর্বাভাস, কে জানে অতসী আবার কোথায় ওর কি কি খুঁত তাই নিয়ে বিশাল কোনো আলোচনা জুড়ে দেবে। কিন্তু কেন জানি না সে সবের ধার কাছ দিয়ে গেল না অতসী। বলল, “খিদেয় পেট জ্বলছে। তোমার খিদে পায় নি, নাকি দু’ঘন্টা গাড়িতে মটকা মেরে থাকলে খিদেটিদে সব চলে যায়?”
একথা সত্যি যে কিংশুকের পেটও খিদেতে চুঁইচুঁই করছিল। দুপুরের খাওয়া হয়েছে অনেক আগে। যদিও সাথে গাড়ি ছিল, তবু এর মধ্যে ছোটখাট হাঁটাহাঁটি বা উপর-নিচ করতে হয়েছে অনেকবার। ব্যাংকের কাজটা শুধু পুরোটাই বসে বসে ছিল আর সেই কাজে সময় লেগেছে অনেকটা।
লখ্নউ এয়ারপোর্ট ছোটো এয়ারপোর্ট। ভালো খাবার স্টল নেই বেশি। কফি-স্যান্ডুইচ টাইপের কিছু অবশ্য মুখে দেওয়া যেতে পারে।
অতসীকে নিয়ে খাবারের স্টলের সামনে এসে অর্ডার দেবার আগেই পিছন থেকে কে একটা ডাকল, “কিংশুক না?”
কিংশুকের কলেজের বন্ধু সুনন্দ।
শেষ সুনন্দর সাথে দেখা হয়েছিল কলকাতাতে, প্রায় আট বছর আগে। অমিতাভ উদ্যোগ নিয়ে এক করেছিল সেবার ওদের হোস্টেলের পুরোনো বন্ধুদের।
মজার ছেলে সুনন্দ। কলেজের প্রোগ্রামে কমেডিয়ান হিসেবে ওদের সবাইকে প্রচুর হাসিয়েছে এক সময়ে। অমিতাভর উদ্যোগে করা সেই রিইউনিয়নেও সমান হাসিয়েছিল সবাইকে সুনন্দ, কলেজের অধ্যাপকদের নকল করে।
দিল্লি ফিরছে সুনন্দ, অতসীরই ফ্লাইটে। কথায়বার্তায় জানাল যে পুরোনো চাকরি ছেড়ে এখন দিল্লিরই একটা এনজিও-তে কাজ নিয়েছে সম্প্রতি। এখানে এসেছিল ইউ পি গভর্নমেন্টের মিড্-ডে মিলের একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে কিছু ডাটা কালেক্ট করতে। ওর নিজের ভাষায়, চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছিল অফিসের পয়সায়, ভেবেছিল ওখানে বাঘ-সিংহ-হাতি-গন্ডারদের উপর ফ্রি-তে দাদাগিরি করবে, পৌঁছে দেখে সব হায়না আর খেঁকশিয়াল!
না, সুনন্দর লোক হাসানোর ক্ষমতাটা কমে নি।
কিছু কিছু লোকের একটা আশ্চর্য ক্ষমতা থাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে লোকের মন ভালো করে দেবার।
কিংশুক বা অতসীকে মুখ খুলবার প্রায় কোনো অবকাশ না দিয়ে একটানা বকবক করে চলল সুনন্দ – অমিতাভ আমেরিকায় যাবার পর থেকেই কিভাবে মার্কিন অর্থনীতি ডিপ্রেশনে চলে গেছে, ওর বস আর বসের বৌ ওকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে কিভাবে শুধু রুটি আর বাঁধাকপির ঝোল খাইয়েছিল, ওদের এক বুড়ো খেপচুরিয়াস প্রতিবেশী কিভাবে স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য বাড়িতে টিভি না থাকলেও ছাতে একটা অ্যান্টেনা লাগিয়ে রাখত – একে একে বলে যেতে লাগল সব। দিল্লিতে এখনো অবধি বৌ সাথে নেই সুনন্দর, টেম্পোরারি বৌ জোগাড় করবার বদ মতলবে দিল্লির অফিসে এক রূপসী পাঞ্জাবি যুবতীর সাথে ফ্লার্ট করতে গিয়েছিল সুনন্দ, তা কিছু বলবার আগেই সেই যুবতী নাকি গদগদ গলায় সবার সামনে বলেছে যে সুনন্দকে দেখলে ওর দু’বছর আগে মরে যাওয়া বাবার কথা মনে পড়ে।
“নাকের বদলে নরুনের মতন, বৌয়ের বদলে মেয়ে পেয়ে গেলাম মাইরি! আমার একমাত্র সান্ত্বনা যখন আমাকে কোনো পাঞ্জাবি মেয়ের পাঞ্জাবি পুরুষের মতন দেখতে লেগেছে, তখন এই বয়সেও সেক্স অ্যাপিল নিশ্চয় পুরোপুরি যায় নি, তা সে মেয়ে আমায় বাবাই ভাবুক বা দাদুই ভাবুক!”, হাসতে হাসতে জানাল সুনন্দ।
কিছুক্ষণ বাদেই কিংশুক লক্ষ্য করল ও তো হাসছেই, অতসীও হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে সুনন্দর কথা শুনে।
অত হাসির মধ্যেও অবশ্য অল্প একটু ঈর্ষা হয়েছিল কিংশুকের।
হাসলে এখনো খুব সুন্দর দেখায় অতসীকে। কিংশুক যদি ওরকম হাসাতে পারত অতসীকে, সুনন্দর মতন!
কোনো মানে নেই অবশ্য এমন ঈর্ষার।
কিংশুকের জীবনেও ভালো হাসি কমে আসছে ক্রমশ।
এত হাসির জন্য অতিরিক্ত এক কাপ কফি আর একটা ক্লাব স্যান্ডউইচের খরচ একবার কেন, বারবার দিতেও প্রস্তুত কিংশুক।
এটাই শেষ ফ্লাইট বোম্বের। অতসীর ফ্লাইট আরও এক ঘন্টা আগে ছিল। কিংশুক আর অতসী – দুজনেরই অনেক সৌভাগ্য বলতে হবে যে এত রাতের ফ্লাইট হলেও, কারুর ফ্লাইট-ই লেট নয়।
যদিও মানসিক ক্লান্তি অনেকটা কাটিয়ে দিয়েছে সুনন্দ, তবু একদিনের যাতায়াতে এখন বেশ ধকল পড়ে শরীরে। ইচ্ছে করলেই কানপুর শহরে একটা রাত থেকে যেতে পারত কিংশুক ভিজিটিং অফিসার্স ফ্ল্যাট বুক করে। অমিত অনুরোধ-ও করেছিল ওকে থেকে যেতে, বাইরে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে। কিন্তু একা একা একটা নতুন অচেনা জায়গায় রাত কাটানোর চাইতে নিজের বাড়িতে ফিরে আসাই শেষ পর্যন্ত ভালো বলে মনে হয়েছে ওর।
শরীরে আবার কোত্থেকে এত ক্লান্তি আসছে কে জানে! এবারে আর ঘুমের ভান নয়, বোম্বে আসার পর সত্যিসত্যিই ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হল এয়ার হোস্টেসকে।
রাত পৌনে একটার সময় তালা খুলে বাড়িতে ঢুকল কিংশুক।
ঘামে গা চ্যাটচ্যাট করছে, ধুলোয় কিচকিচ করছে সারা গা। চান করা দরকার একবার ভালোভাবে।
বহুক্ষণ ধরে ঘষে ঘষে গা থেকে ঘাম আর ময়লা তুলল কিংশুক। শরীরের ময়লা যত সহজে বেরোয়, মনের জমে থাকা ময়লাগুলো যে কেন বেরোতে চায় না?
সদ্য কেনা একটা পাজামা আর ফতুয়া পরে ব্যালকনিতে এসে বসল কিংশুক। প্লেনে এত গভীর ঘুমিয়েছে যে ঘুম আসবে না এখন আরও অন্তত দু তিন ঘন্টা।
রান্নাঘরে ঢুকে ফ্রিজে রাখা দুধ ভালো করে ফুটিয়ে বড় এক কাপ কফি তৈরি করে ব্যালকনিতে এসে আবার বসা যেতে পারে এখন।
বাড়িতে থাকলে বাবাকে এরকম অসময়ে কফি খেতে দিত না শমীক। খুব সম্ভবত অতসীর নির্দেশ। শেষের দিকটাতে বেশ কড়া শাসনে ছিল কিংশুক।
এখন থেকে আর কারুর শাসন-টাসন মেনে চলার দরকার নেই। বাবা, মা, আর ছেলে -- তিনজন তিন আলাদা শহরে এখন।
তিনজনেই যে যার মতন স্বাধীন। মুশকিল হল স্বাধীনতার জন্য দাম দিতে হয় অনেক। কে জানে এই স্বাধীনতার জন্য কি দাম এখন থেকে চোকাতে হবে কিংশুককে?
অতিরিক্ত উৎসাহে কফিটা একটু বেশি স্ট্রং হয়ে গেছে। সামান্য তেতো স্বাদ মুখে।
পার্কিং স্পট থেকে বেরোতে বেরোতে সময় লেগে গেল অনেকটা। এত রাতেও বিশাল লাইন সব জায়গায়। রাস্তাতেও জ্যাম। মনে হচ্ছে চাণক্যপুরীর আগে স্পিড নেওয়া যাবে না।
নিজের গাড়ি থাকলে বড় শহরে রাত মানে আলাদা খুব একটা কিছু নয়। কারুর উপর নির্ভর করবার দরকার নেই। নিজের মতন গাড়িতে চাপো, আর পৌঁছে যাও গন্তব্যে। কিংশুকের বন্ধু ভদ্রতা করে জানতে চেয়েছিল কিভাবে বাড়ি ফিরবে অতসী। নিজে গাড়ি চালিয়ে ফিরবে শুনে খুব ইম্প্রেসড, বললেন, “বাপ রে, আমরা ছেলেরাই সাহস করি না মাঝ রাতে গাড়ি নিয়ে বেরোতে, আপনি তো কামাল করে দিয়েছেন!”
একথা সত্যি যে এই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এরকম প্রায় মাঝরাতে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরেছে অতসী। তবে এ’সব কোনোকিছুই রাতারাতি হয় নি। আস্তে আস্তে বাসায় ফেরার সময়টাকে ক্রমশঃ গভীর রাতের দিকে ঠেলে দিতে দিতে পুরো ব্যাপারটা এক সময়ে কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল। মাঝরাতে ফিরতে হবে শুনলে এখন আর খারাপ কোনো ভাবনা চিন্তা মাথায় আসে না।
ছেলের গ্র্যাজুয়েশন শুরু হল আজ।
এই দিনটা অতসীর জীবনে একটা বিশেষ দিন।
বোম্বে থাকতে থাকতে শমীকের সাথে এই দিনটা নিয়ে এর আগে অনেকবার কথা হয়েছে অতসীর। শমীকের মধ্যে আই আই টি-তে পড়বার স্বপ্ন তো অতসীরই ঢোকানো, কিংশুক তখন কতটা সময় দিত ছেলেকে? এখনই বা কতটা দেয়?
আশ্চর্য, সেই সব কথাবার্তার মধ্যে শুধু থাকত কিভাবে, কোথায় আনন্দ করবে ওরা মা-ছেলে দুজন মিলে। কোনোবারই সেই সব কথাবার্তার মধ্যে অতসীর এই রকম একা একা ফিরে আসার ব্যাপারটা ছিল না!
মনটা কেন জানি না এখন অশান্ত লাগছে অতসীর, অথচ খারাপ লাগবার কারণ কী-ই বা থাকতে পারে? শমীক-কে ছেড়ে যখন দিল্লি চলে এসেছে অতসী তার চেয়ে বেশি আর কি খারাপ হতে পারে? নিজেই নিজেকে বোঝাল অতসী, মন খারাপ লাগলে আগে যেমন ছুটি নিয়ে বোম্বে চলে যেতো, এখন সেরকম কানপুর চলে গেলেই চলবে। একই তো ব্যাপার, বরং কানপুর আরো কাছে!
কিন্তু ভিতরের অস্বস্তিটা তবু যাচ্ছে না! সত্যি সত্যিই একই ব্যাপার কি?
শমীকের আই আই টি পাওয়াটা ওর কাছে বিশাল একটা ভাবনার হাতের থেকে মুক্তি পাওয়া। অতসী জানে যে ওর ছেলে লেখাপড়ার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। আই আই টি গিয়ে বিগড়ে যাবে সেই সম্ভবনাও ওর কম। মোটামুটিও যদি ভালো রেজাল্ট করে, তাহলেও অন্তত ভবিষ্যতে না খেয়ে থাকবে না ছেলে। এই নিশ্চিন্তি পৃথিবীর ক’টা মা-বাবার রয়েছে?
কিন্তু অতসী কি করবে এখন?
পড়ানোর কাজটা ভালো লাগলেও ইদানিং যেন একটু একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। ছুটিছাটার দিনগুলোতে আগে প্রায়ই শপিংয়ে যেত অতসী। দিল্লির মতন বড় শহরে প্রায়ই কোথাও না কোথাও মেলা হয়। সাঙ্গপাঙ্গ জুটিয়ে সেইসব মেলায় কত ছুটির দিন ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছে অতসী, সন্ধ্যাবেলা সকলের সাথে হৈ হৈ করতে করতে কত আজেবাজে সিনেমা দেখেছে আর পরে সেই সব নিয়ে হাসাহাসি করেছে। সে’সবও আর ভালো লাগে না আজকাল। মেঘা ফিরে গেছে পুণেতে প্রায় দু’ বছর হল। মীনাক্ষী অবশ্য রয়ে গেছে, তবে সেন্থিলের সাথে সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর বিয়ে করেছে ওদেরই অফিসের অঙ্কিতকে। ম্যাটারনিটি লিভ শেষ করে এই সবে আবার কাজে জয়েন করেছে মীনাক্ষী।
মীনা-র প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত ভয়টা কথা বলে বলে অনেকটাই কমাতে পেরেছিল অতসী। ওর সাথে কথা বলে বুঝেছিল অতসী যে মীনার ভয়টা আসলে লেবার পেইন নিয়ে। এই ভয় কাটিয়ে উঠতে অতসী মিনাকে বলেছিল যে বেশি ভয় থাকলে সিজারিয়ান বাচ্চা করিয়ে নিতে। নিজের বেলায়ও তাই করেছে অতসী। অতসীর নিজের অভিজ্ঞতা শুনবার পর অনেক নিশ্চিন্ত হয়েছিল অতসী। তবু মীনা প্রেগন্যান্ট খবরটা কানে আসার পর প্রথম ভয়ানক চিন্তা হয়েছিল অতসীর। মীনার সাথে কথা বলার পর অবশ্য নিশ্চিন্ত হয়েছিল অতসী। আনন্দে মুখ ঝলমল করছে মীনার, অতসীকে জানালো, “দিদি, ভেবে দেখলাম বাচ্চা যদি সেই করতেই হয়, বেশি দেরি করে লাভ নেই!”
মীনার বাচ্চার এখন ছ মাস মাত্র বয়েস। সময়ে-অসময়ে মেলায় বা শপিং মলে ঘুরবার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই এখন নেই মীনাক্ষীর।
কার কাছে তবে যাবে এখন অতসী?
তবু নতুন কিছু করতে ইচ্ছে করছে, নতুন কিছু নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করছে এখন।
একটা লক্ষ্য দরকার সামনে। নিজের বাবার অনেককিছু পছন্দ না হলেও এই গুণটিকে বরাবর সম্মান দিয়ে এসেছে অতসী।
এম বি এ করলে কেমন হয় এবার?
বছর তিনেক আগে স্মরজিৎদা প্রথম এম বি এ র কথাটা বলেছিলেন ওকে। তখন ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি অতসী। এখন কিন্তু ভালো করে ভাবার সময় এসেছে ব্যাপারটা নিয়ে।
না, কাল থেকেই লেগে পড়তে হবে কাজে। কোথায় ভর্তি হলে সবচেয়ে বেশি প্রসপেক্ট, ভর্তি হতে গেলে কি কি করতে হবে, কত খরচ পড়বে সব জেনে নিতে হবে এক এক করে।
ভাবতে ভাবতে হাসি পেল অতসীর।
মা আর ছেলে দুজনেই একসাথে ছাত্র হবে এবার।
দেখা যাক কার রেজাল্ট বেশি ভালো হয়!