• পরবাস : সংখ্যা ৮৬ : মন্তব্য / Comments
  • এই সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য জমা দিন / Make a comment about this issue
  • (?)
  • Older Comments - পুরোনো মন্তব্য/চিঠি
  • সংখ্যা : ৮৬
    ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত : ইউএসএ : 2022-06-28
    সংখ্যা ৮৬ র লেখাগুলোর বিষয়ে এক সঙ্গে মতামত জানাব ঠিক করেছিলাম। শুধু দারুণ লেগেছে বলে আর ছেড়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সম্পাদকের অনুরোধ মন্তব্য দায়সারা না হোক। অতি বিস্তার এড়িয়ে তাকে দৃঢ করমর্দনের মতো হ্রস্ব কিন্তু আন্তরিক একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা যাক।

    সমরেন্দ্র রায়-এর লেখায় রস ও রসিকতার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে বিষাদ। এবারের সে নামের লেখাটাতে নাম চরিত্রটির পরিচয় খুব সামান্যই পাওয়া যায়। সে মেয়ে না ছেলে এটাও খুলে বলা হয়নি। কিন্তু পাঠক তার মধ্যে নিজের ছেলেবেলার একটি হারানো সুখের অনুভূতি খুঁজে পেয়ে যায়। প্রবাসে যারা বড়ো হয়েছে তাদের কাছে এই গল্পের আবহ ও চরিত্ররা গালিবের সেই নকশ্‌-এ-কদম-এর মতোই দামী, যার উল্লেখ এই লেখার প্রথম পাতায় রয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের স্বদেশ পালটেছে প্রচুর, কিন্তু আমাদের প্রবাসের আশ্রয়গুলো শুধু মিলিয়ে যায়নি, ইতিহাসের পাতা থেকেও মুছে গিয়েছে প্রায়। এই কয়েকটা গল্প সেই বিলুপ্ত সভ্যতার অমূল্য নিদর্শন। স্থান, কাল, পাত্র, আঙ্গিক সব মিলিয়ে দেখলে সমরেন্দ্র রায়ের লেখা বাংলা সাহিত্যের একটি অদ্বিতীয়, স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতা।

    বাংলা সাহিত্যের প্রধান উপহারগুলি সমস্যা ও দুর্দশার প্রতিষেধকামী প্রতিবাদী শিল্প, যা এই চিরদুস্থ মাটির স্বাভাবিক ফসল। একটি দুটি পরশুরাম কী শিব্রাম শতবার পাঠ করার পরেও এটা বলা যায় যে বাংলায় হাসির গল্প বিরল, কমিক উপন্যাস অতিশয় বিরল। সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় এই স্রোতের উলটোদিকে হেঁটে যে গল্পটি সৃষ্টি করেছেন তা প্রহসন হয়েও বাস্তবনিষ্ঠ। শোকসভা একটি সুলিখিত, বুদ্ধিদীপ্ত, সম্পূর্ণ কল্পিত মজার গল্প যা বাঙালি লেখকরা সাধারণত এড়িয়ে চললেও পাঠকরা পড়তে অসম্ভব ভালোবাসে। এই গল্পের চরিত্রগুলি নিপুণভাবে আঁকা, কিন্তু গল্পের মূল উদ্দেশ্য মনোরঞ্জন। হাসির কাল্পনিক গল্প বা ফিকশন বাংলায় লেখা এখনো সহজ নয়, নইলে তা এত দুর্লভ হত না। এরকম গল্প পরবাসের প্রতি সংখ্যায় অন্তত একটি কি দেখতে পাব বলে আশা করা যায়?

    রঞ্জন রায়ের ধারাবাহিক আত্মজৈবনিক রম্যরচনার অনুরাগী পাঠক আমি। এর পনেরোতম অধ্যায়টি ফুটবল, ক্রিকেট, গান, কবিতা, দুষ্টুমি, ফাজলামি, সব নিয়ে পঞ্চাশের দশকের বোর্ডিং স্কুলের এক স্মরণীয় প্যানোরামিক ছবি। রাহুল মজুমদারের অলঙ্করণ এই লেখাটাকে আরো আকর্ষণীয় করেছে।

    অলঙ্করণের প্রসঙ্গে ফাল্গুনের গান উপন্যাসের জন্য করা অনন্যা দাশের ছবি, এবং সে রচনার জন্য দীপঙ্কর ঘোষের করা ছবির উল্লেখ অনিবার্য। দেখার মতো ছবি এ দুটি। নিজের গুণেই স্বয়ংসিদ্ধ।

    পরবাসের পুরোনো সদস্য সম্বিত বসু এক যুগ পরে ফিরে এসেছেন একের পর এক রমণীয় প্রবন্ধ নিয়ে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের উপর সম্বিতের রচনা পড়ে অনেক মজার ঘটনা জানতে পারলাম। সাহিত্যের যে নতুন দিকটা আমি আন্তর্জালের মাধ্যমে গত তিন দশক ধরে উপভোগ করি সেটাকে তথ্য সাহিত্য বলা যায়। তথ্য সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠকদের তথ্যকীট, সংবাদ-নেশুড়ে যাই বলা হোক না কেন, সঙ্খ্যায় তারা কবিতা বা গল্পের পাঠকদের চেয়ে অনেক বেশি বলে আমার ধারণা। হেমন্তের উপর লেখা প্রবন্ধ আমি একাধিক পরিচিতকে পাঠিয়েছি। পরবাসের এই ধরণের রম্য নিবন্ধ আরেকটু প্রচার, আরেকটু দৃষ্টিগোচরতার দাবী করে।

    সব শেষে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মায়াকানন গল্পের উল্লেখ করব। পরবাসের নতুন গল্পকারদের মধ্যে পীযূষ বা গোগোল মুখোপাধ্যায়ের লেখা সহজ নয়। পরিশ্রমের ফসল এই সব গল্প। প্রায় সমপরিমাণ শ্রম ও মনোযোগ নিয়োগ না করলে শব্দের ব্যুহের ভিতর সুরক্ষিত এই কাহিনীর মর্মে পৌঁছোনো যাবে না। বাংলা সাহিত্যের পাঠক সঙ্খ্যা এমনিতেই কম। কঠিন গল্পের পাঠক তো মুষ্টিমেয়। তা সত্ত্বেও প্রতিটি প্রজন্মের লেখক নিজেদের ও নিজেদের পাঠকদের মাঝে মাঝে চ্যালেঞ্জ করেন নতুন ভাবে দেখতে ও ভাবতে। মায়াকানন গল্পের প্রথম কয়েকটা অনুচ্ছেদ পড়লেই তার সাবলীল ভাষা এবং স্পষ্টভাবে আঁকা চরিত্রগুলো থেকে পীযূষের ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যাবে। আশা করি অন্তত কিছু পাঠক ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ে এই শক্তিশালী কিন্তু খানিকটা বিষাদগ্রস্ত আখ্যানের রস গ্রহণ করবেন।
  • সম্পাদকীয় | | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    স্বপন ভট্টাচার্য : কলকাতা : 2022-06-26
    সব ওয়েবজিনের ক্ষেত্রে এটা বলা যাচ্ছে না। লেখকগোষ্ঠীর লোক পড়েন কম, মন্তব্য করেন আরো কম। নিজেকে ধরেই একথা বলতে পারি। বিশেষ লেখার খবর অবশ্য স্বতই পৌঁছে যায় এ সূত্র ও সূত্র মারফৎ । আমিও চিঠিপত্রে লোরকা নিয়ে প্রতিক্রিয়া কিছু আছে কিনা খুঁজেছিলাম। তার মানে কাজটা পরিচিতির বেড়া অতিক্রম করতে পারছে না, এটা ভাবায়, কিন্তু বিচলিত করে না। কাজটা করাই আমার কাজ, তাই প্রতিক্রিয়া পেলে ভাল, না পেলে কি আর করা! এখানে বড় পাঠকগোষ্ঠী যে সব ব্লগ বা ওয়েব্জিনের, তারা কিন্তু পাঠক ধরে রাখতে পারছেন, বাড়াতে পারছেন। প্রতিক্রিয়া অবশ্য নিরপেক্ষ সূত্র থেকে কমই আসে। নামকরা ওয়েব পত্রিকার সম্পাদকের সংগে কথা বলে জানতে চেয়েছি পড়ছে কারা? পড়ছে কি? উত্তরে তিনি তার algorithm ব্যবহার করা ডেটা ফেলে জানালেন হিট হচ্ছে প্রচুর, কিন্তু ৮০-৮৫ শতাংশ ৫ মিনিটে বেরিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, এই ফেবু হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মত ধরে রাখার রসদ নেই ওয়েবজিনে। আমার মতে সেটাই পত্রিকার পক্ষে সুবার্তা। যাঁরা এর পরেও পড়ছেন পত্রিকার কাজ তাঁদের ধরে রাখা এবং তাদের সংখ্যা বাড়ানো। এর জন্য personalised কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখতে পারেন। যেমন,লেখাগুলি স্বতন্ত্র লিংক হিসেবে পাঠকদের মেইলে পৌঁছে যেতে পারে প্রতিটি একক লেখারূপে। সেখান থেকে গোটা পত্রিকায় যাবার অপশন তো রইলোই,চাইলে পাঠক কেবল বেছে বেছে লেখায় রইলেন।
  • প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন | আর্যা ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    কৌশিক সেন : র‍্যালে, নর্থ ক্যারোলিনা : 2022-06-10
    প্রথমেই বলে রাখি যে লেখিকা আর্যা ভট্টাচার্যর লেখাটি সময়োপযোগী এবং খুবই প্রাসঙ্গিক। আমি লেখিকার মূল বক্তব্য ও বিশ্লেষণের সাথে পুরোপুরি একমত। সামান্য হলেও এই পত্রলেখক গত ২৫ বছর যাবৎ প্রবাসী বাঙালির মননচর্চার সঙ্গে নানান ভাবে জড়িত। পরবাস, কৌরব, বাংলালাইভ, ঊড়ালপুল এবং অন্যান্য আরো অনেক ওয়েব ম্যাগাজিনের পাশাপাশি বাংলাদেশী ওয়েব পত্রিকাগুলিতেও যাতায়াত ছিল অনেকদিন যাবৎ। অতঃপর নানান তালেগোলে, কলকাতার প্রতিষ্ঠিত বাংলা প্রকাশনী জগতে প্রবেশ করার ভাগ্যও আমার হয়েছে। তার সঙ্গে থেকে গেছে বিদেশে বাংলা নাটক লেখা এবং পরিচালনা করার উদ্ভট আসক্তি। সেই বাবদে জমা হওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে দু-চারটি বক্তব্য রাখলাম। লেখিকা যেমন করেছেন ঠিক সেইভাবেই আমরা আলোচনার বিষয়গুলি ভাগ করে নেবো-

    ১) পাঠকের দিক থেকে- প্রজন্মগত ফারাক থাকলেও বৃহত্তর পাঠক সমাজের অধিকাংশই এখন প্রিন্ট এবং ডিজিট্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সমান দক্ষ। সমস্যা রয়েছে আমাদের পাঠকসত্ত্বার এক মূলগত পরিবর্তনে। প্রাদেশিক ভাষায় সাহিত্য কিংবা মননশীল প্রবন্ধলেখকরা পাঠকের অভাবে অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন, এই সত্যটি স্বীকার করে নেওয়াই বোধহয় ভালো। যেসব পত্রপত্রিকারা তথাকথিত লাইফস্টাইল বা আধুনিক জীবনচর্চার সঙ্গী, তাদের বাজার ভালোই চলছে, তা সে প্রিন্ট মিডিয়া হোক কিংবা ডিজিট্যাল। তার ওপরে হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার অন্তহীন চুটকি, অজস্র ব্লগ এবং সবার ওপরে টেলিভিশন সিরিয়ালের মহামিছিল। এই জমজমাট বাজারে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা, সবাই যে যার বিপন্ন অস্তিত্বটুকু নিয়ে কানামাছি খেলতে লেগেছে। কিন্তু সব সত্ত্বেও সিরিয়াস পাঠক সমাজ বলে যদি কিছু থাকে তার মৌলিক পরিবর্তন সম্ভবতঃ হয়নি এবং কখনোই তা মিডিয়ার ওপরে নির্ভরশীল নয়।

    ২) লেখকের দিক থেকে- কবি, লেখক বা শিল্পীর অভিপ্রায় যে কি, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর চর্চা হয়ে গেছে। লেখিকা ঠিকই বলেছেন যে ছাপার অক্ষরে নিজের নামটি দেখে আনন্দ পাওয়া মানুষের এক প্রাচীন ছেলেমানুষি। তার সঙ্গে রয়েছে আরো একটা ভুল বিশ্বাস যে দুই মলাটের মধ্যে যে স্থায়িত্ব এবং প্রামাণিকতা রয়েছে আন্তর্জালের হিজিবিজির মধ্যে তা নেই। অতিশয় দুঃখের সঙ্গে কবুল করতেই হয় যে আসলে এর উল্টোটাই সত্যি। বাংলা সাহিত্য পত্রিকা একদা ঠোঙা হয়ে যেত, এখন রিসাইকল হয়ে সে যে কোথায় যায়, মা সরস্বতীই জানেন। কিন্তু পাশে পাশে এটাও মনে রাখতে হবে যে দেশে প্রতিষ্ঠিত লেখকরা গপ্পো লিখে ভালোই রোজগার করেন, বিশেষত সেই গপ্পো থেকে সিরিয়াল বা সিনেমা হয়। দক্ষিণার উৎস বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপনের উৎস জনগণের স্বভাব ও সংস্কৃতি। ব্লগার এবং ইউটিউবারবৃন্দ সেই স্বভাব-সংস্কৃতির অনেকটাই দখল করে বসে আছেন, তাই লেখকের স্বভাবও আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। অর্থের পরেই শিল্পী চান পরিচিতি। বাংলা সাহিত্যকীর্তি ভাইরাল হবার সম্ভাবনা কম, কিন্তু যদি বা হয় তা নেটমাধ্যম থেকেই হবে হয়তো। লেখক যদি শুধু ভালো লেখা লিখে আনন্দ পান, তবে তাঁর কাছে কাগজ কিংবা পর্দা, দুই মাধ্যমই সমান চিত্তাকর্ষক হওয়া উচিৎ।

    ৩) প্রকাশকের দিক থেকে- সাবেক যুগ থেকে প্রকাশকের মূল কাজ ছিল লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মধ্যে সেতুবন্ধন কিন্তু অন্যরকম প্রকাশকও আছেন, ব্যবসার বদলে সাহিত্যের পরীক্ষানিরীক্ষাই যাঁদের উদ্দেশ্য। নেটমাধ্যম চালু হবার আগে তাঁরা লিটল ম্যাগাজিনের অনবদ্য লেখাগুলি প্রকাশ করতেন, কিন্তু অর্থাভাবে মাত্র কয়েকটিই টিঁকে থাকতে পেরেছিল। বলাবাহুল্য সেদিক থেকে নেটমাধ্যমের বিরাট সুবিধা আছে। কৌরব ম্যাগাজিন এই জাতীয় প্রকাশনার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ কিন্তু তাঁরাও শুধুমাত্র বাংলায় আটকে থাকতে পারেননি, পর্যাপ্ত পাঠক জোটানোর জন্য অন্যান্য ভাষায় কবিতাচর্চা তাঁদের করতে হয়েছে। অনেকে মধ্যপথ ধরেছেন অর্থাৎ সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে একটি অনলাইন বিপণি জুড়ে দিয়েছেন, যার উদাহরণ বাংলালাইভ। এখানে সমস্যা হচ্ছে যে জিনিসপত্র বিক্রি করতে হলে শুধু সাহিত্যে পেট ভরবে না, লোক টানতে চুটকি, মশলার্ব আমদানি করতে হবে। পরবাসের সঙ্গে কাজ করার সুখ এই যে লেখক, পাঠক আর শিল্পী বাদে এই এলাকায় বিশেষ কারো যাতায়াত নেই এবং আমাদের প্রিয় বইয়ের দোকানটিও একই জায়গায় মজুদ আছে।

    শেষের কথাটি চুপি চুপি বলি। আমরা যারা কালি-কাগজের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে আমাদের অতি সাধারণ শৈশব-যৌবনের দিনগুলো কাটিয়েছি, তাদের পক্ষে অভ্যাস পালটানো মুশকিল। কিন্তু দিন অবশ্যই বদলেছে এবং ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত বাঙালি প্রকাশক সংস্থাগুলি তাঁদের প্রকাশিত বইপত্রের ইলেকট্রনিক এবং অডিবল অবতার তৈরি করার কাজে ব্যস্ত আছেন। ডিজিট্যাল মিডিয়ার প্রতাপ বাড়তেই থাকবে এবিষয়ে সন্দেহ নেই কিন্তু পুরনো ছবি আর গানের মতন পুরনো বইও হয়তো থেকে যাবে পাশাপাশি, আমাদের স্মৃতি, সত্ত্বা, ভবিষ্যতের সঙ্গী হয়ে
  • প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন | আর্যা ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    গান্ধর্বিকা ভট্টাচার্য : কলকাতা : 2022-05-24
    আর্যা ভট্টাচার্যের 'প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন' নামক প্রবন্ধটি পড়লাম। খুবই ইন্টারেস্টিং বিষয় এবং তথ্যবহুল আলোচনা। পড়ে ভালো লাগল। লেখিকার কিছু বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।

    তবে ব্যক্তিগত ভাবে বলতে গেলে আমি কাগজের ম্যাগাজিন আর ইলেকট্রনিক ম্যাগাজিনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য পাই না। ভালো লেখা যে কোন মাধ্যমে পড়েই সমান আনন্দ পাই। লেখার সময়েও এটা ভেবে লিখি না যে কাগজের ম্যাগাজিনের জন্য লিখছি না ওয়েব-জিনের জন্য।

    তবে হ্যাঁ, দুয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য। কাগজের ম্যাগাজিনে লেখা জমা দেওয়ার ঝামেলা অনেক। লেখার প্রিন্ট আউট বার করে পত্রিকার অফিসে নিয়ে যাওয়া, প্রায় দেড় দু’বছর উত্তরের অপেক্ষা করা, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে 'চেনা মুখ' না হলে লেখা ছাপা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তুলনায় ইলেকট্রনিক ম্যাগাজিন অনেক বেশী নিরপেক্ষ বলে আমার মনে হয়। ই-মেইলে লেখা জমা দেওয়ার পদ্ধতিও অনেক বেশী ঝাড়া ঝাপটা। যাঁরা অন্য পেশায় আছেন, কিন্তু লেখালেখির শখ আছে, তাঁদের পক্ষে ইলেকট্রনিক ম্যাগাজিনই বেশী সুবিধাজনক মাধ্যম বলে আমার মনে হয়।
  • প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন | আর্যা ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    শুভময় রায় : কলকাতা : 2022-05-20
    আর্যা ভট্টাচার্যের ‘প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন’ পড়তে পড়তে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত মার্কিন ঔপন্যাসিক ফিলিপ রথ এর একটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে গেল। লেখক লিখবেন, পাঠক পড়বেন এটা ধরে নিয়েই আমাদের এই ‘প্রিন্টেড না ডিজিটাল’ এই আলোচনা তো?কিন্তু আশপাশের পরিবেশ দেখে অনেক দিন ধরেই কেন মনে হচ্ছে যে লেখালেখি কিছু হলেও পড়ার ইচ্ছে, হয়তবা অবকাশও, মানুষের ক্রমশই কমে আসছে? শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-দর্শন কি পণ্ডিতদের গণ্ডির বাইরে ভুলক্রমেও সাধারণ মানুষের কথোপকথনের বিষয় হয়ে উঠছে? তেমনটা তো কই চোখে পড়ছে না। আমার অভিজ্ঞতা বলছে পঞ্চাশ বছর আগেও কিন্তু সেটা হত। প্রায়শই না হলেও ক্বচ্চিৎ-কদাচিৎ তো হতই। এখন কি সেই স্থান দখল করল গাড়ি-বাড়ি (পরিভাষায় ‘রিয়েল এস্টেট’, তাতে ‘রিয়েল’ এর ভাগ যতই কম থাকুক না কেন), খাওয়া-দাওয়া, ভ্রমণ-পর্যটন আর ছবি তোলা? মূল বিষয়টি বোধহয় পড়ার আগ্রহ ধরে রাখা। আরপাঠকসুলভ জিজ্ঞাসু মন ও মনননির্ভর জীবন। সাহিত্যপিপাসু পাঠকের কাছে কোন্‌ মাধ্যমে ভর করে সাহিত্য এসে পৌঁছল তা বোধহয় ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনুসন্ধিৎসু পাঠক মালমশলা জোগাড়ে পিছিয়ে থাকবেন না। ফুটপাতের পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে অনলাইন লাইব্রেরি, ছাপা পত্রপত্রিকা থেকে আমাদের এই ওয়েবজিন – সর্বত্রই রইবে তাঁর অবাধ বিচরণ।বৃহত্তর পাঠক সমাজ একটা পিরামিডের মত যার নিচের অংশটার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিরামিডের চূড়াটি। আমার আশঙ্কা পিরামিডের নিচের ভিতটি ক্রমশই ক্ষয়ে আসছে। ওপরে থেকে যাচ্ছেন মুষ্টিমেয় জ্ঞানীগুণী মানুষ।

    ভুল ভাবছি মনে করে চিন্তাটা উড়িয়ে দিতেই পারতাম। যদি না ফিলিপ রথের মত নামকরা এক লেখক সহমর্মী হতেন। যদি না তিনি এই পূর্বাভাস দিয়ে ফেলতেন যে আর বছর পঁচিশের মধ্যেই উপন্যাসের মত একটি জ়ঁর মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘু পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে যাবে। যাঁদের হয়ত সিরিয়াস সাহিত্য পড়ার প্রবল ঝোঁক, শুধু সেই ‘কাল্টিক মাইনরিটি’-র সদস্যরা ছাড়া আর খুব বেশি মানুষ বই পড়া নিয়ে মাথা ঘামাবেন না, যদি না তা তাঁদের পেশাগত উন্নতিতে কাজে লাগে! রথের আশঙ্কা সাহিত্য পাঠের জন্য যে নিবিড় মনোযোগের প্রয়োজন, তা এই স্ক্রিন-সর্বস্ব জীবনের চাপে গড়পড়তা মানুষ ক্রমশই হারিয়ে ফেলবেন। পঞ্চাশ বছর আগের পাড়ার লাইব্রেরিগুলোর সঙ্গে বর্তমানের বিস্মৃতপ্রায় স্থানীয় গ্রন্থাগারগুলোর তুলনা করলেই (বিদেশে পরিস্থিতি হয়তবা অন্যরকম) ফিলিপ রথের যুক্তিকে অকাট্য বলে মনে হয়, বইমেলায় হুজুগে দর্শক যতই ভিড় করুন না কেন।

    রথ বলছেন, ‘যদি একটা উপন্যাস পড়ে ফেলতে পনের দিনের বেশি সময় লাগে, তা হলে আপনি কিন্তু সেটা পড়েননি।’ অর্থাৎ আপনি যা পড়ছেন তা নিরবচ্ছিন্নভাবে আপনার মনঃসংযোগ আকৃষ্ট করতে পেরেছে তো? নাকি এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ানোর অবসরে খুঁটে খাওয়ার মত কখনও-সখনও কোনও বইয়ের দুয়েক পাতা উল্টে দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যা জাহির করেই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়? স্ক্রিনের সঙ্গে বইয়ের প্রতিযোগিতায় বই ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে। সিনেমার পর্দা, টেলিভিশনের পর্দা, কমপিউটার এবং অধুনা মোবাইল ফোনের দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমের জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছাপার অক্ষর, তা কাগজে ছাপা বই অথবা ই-বুক যাই হোক না কেন, গোহারান হেরেই চলেছে।

    বুলেট ট্রেনের যুগে আমি কি ঘোড়ার গাড়ির যাত্রী হতে বলছি? বেশ কয়েক বছর আগে এই দ্রুতগতির যুগে শ্লথগতির লেখাপড়া নিয়ে সুলিখিত একটি বই (Slow Reading in a Hurried Age – David Mikics) পড়েছিলাম মনে পড়ে| সে বইতে পাশে অভিধান খুলে রেখে ধ্রুপদী সাহিত্য পড়ার পরামর্শ (বোকা-বোকা লাগছে কি?) দেওয়া ছিল। কী আশ্চর্য ফিলিপ রথের উপন্যাস পড়ার কথাও বলা হয়েছিল! সাহিত্য পাঠ এক ধরনের মানসিক ভ্রমণ যার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। ট্যুরে বেরোনোর আগেলেখকের জীবন, তাঁর সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের খবরাখবর রাখতে হয়, অনেকটা পুরোনো প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক তারকনাথ সেন অথবা তাঁর সুযোগ্য শিষ্য আমাদের অধ্যাপক অরুণ কুমার দাশগুপ্ত যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাহিত্য পাঠের জন্য প্রস্তুত হতে বলতেন, তেমনি আর কী।

    মাননীয় সম্পাদক মহোদয় বেশ কিছুদিন ধরেই পত্রিকার ‘চিঠিপত্র’ বিভাগটির গুণগত মান নিয়ে মর্মবেদনা প্রকাশ করে আসছেন। তিনি হয়ত ভাবছেন ছাপা পত্রিকায় এই দৈন্য তেমন প্রকট নয়। এই একটি ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। এই দীনতা ইতিমধ্যেই গেড়ে-বসা একটি সামাজিক প্রবণতার প্রতিফলন।এই দৈন্য দ্রুতগতির, বাণিজ্য-নির্ভর, স্বার্থান্বেষী এক সমাজের চিন্তার দৈন্য। ব্যতিক্রমী লেখক-পাঠক অবশ্যই আছেন। তাঁরা হয়ত নিরালা পরিবেশের আকাঙ্ক্ষায় মার্সেল প্রুস্তের মত ঘরের দরজা-জানলায় কর্ক সেঁটে আশা করছেন বাইরের আওয়াজ একেবারেই ভেতরে প্রবেশ করবে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই প্রখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিকও বারংবার তাঁর প্রতিবেশিনীকে চিঠি লিখে মনে করাতেন যে ওপরের ফ্ল্যাট থেকে আসা শব্দ তাঁর কাজে কেমন বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ পৃথিবীতে সাহিত্যচর্চার জন্য প্রুস্তের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব হারানো সময়ের সন্ধানে, আ লা মার্সেল প্রুস্ত।
  • প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন | আর্যা ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    Rumjhum Bhattacharya : pune : 2022-05-17
    খুব প্রাসঙ্গিক বিষয়। আরও আলোচনা ও গবেষণা প্রয়োজন।
  • প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বনাম ওয়েবজিন | আর্যা ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    Chhanda Bewtra : Omaha, USA : 2022-05-04
    (Apology for not being able to work Avro due to some technical glich) Another big advantage of digital media is saving millions of trees. It is important for the environmentally conscious current generation. Except for some sentimental and nostalgic values, digital will always win over printed media. As the alien Borg said in Star Trek, "You will be assimilated. Resistance is Futile."
  • বাদাম জমি | অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    Kankana Mayur : Howrah : 2022-04-25
    Excellent story and very much realistic. The characters are sketched pretty well.
  • স্বর্ণ জয়ন্তীতে ফিরে দেখা – ‘ওডেসা ফাইল’ | ভাস্কর বসু | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    Aniruddha Ganguly : Bengaluru : 2022-04-23
    সুন্দর, সুঠাম, নিপুণভাবে গবেষণা ভিত্তিক ও দক্ষ বিশ্লেষণাত্মক রচনা।
  • স্বর্ণ জয়ন্তীতে ফিরে দেখা – ‘ওডেসা ফাইল’ | ভাস্কর বসু | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    শিবাংশু দে : কলকাতা : 2022-04-19
    বিন্যস্ত রচনা। চেনা তথ্যগুলি সাজানোর গুণে সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে।
  • অল কোয়ায়েট : মার্চ ২০২২ | নিরুপম চক্রবর্তী | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    স্বপন রায় : ব্যাঙ্গালোর : 2022-04-18
    এই সময়ের কবিতা।যুদ্ধ নীরবতা নিয়ে আসে,মৃত্যুর নীরবতা।কবি নিরুপম চক্রবর্তী এই নীরবতার শব্দগুলোই লিখেছেন।
  • স্বর্ণ জয়ন্তীতে ফিরে দেখা – ‘ওডেসা ফাইল’ | ভাস্কর বসু | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় : সোনারপুর : 2022-04-17
    চমৎকার লাগল এই প্রতিবেদন। আমি প্রথমে ছায়াছবিটা দেখে পরে উপন্যাসটা পড়েছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে লেখা এই উপন্যাসের আলো আঁধারি ন্যারেটিভের পথচলায় ঠান্ডা যুদ্ধের আমলের এক থ্রিলারের নান্দীমুখ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এই প্রতিবেদনের অলিন্দে সেই প্রেক্ষাপটের চুলচেরা বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। এই ধারার সাহিত্যে চরিত্রের গ্রে-শ্যেড যেভাবে জ্যান্ত ইতিহাসের গ্রিনরুম থেকে উঠে আসে, রাজনীতির আবর্তে যেভাবে রহস্য দানা বাঁধে সেই দিকটা যথাযথভাবে প্রাণ পেয়েছে এই প্রবন্ধের বিন্যাসে।
  • সাইরাস | অনিন্দ্য বসু | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    chhanda bewtra : omaha USA : 2022-04-16
    বাঃ বেশ চমৎকার sci-fi লেখা। শেষের মোড়টা গল্পটাকে অন্য সারিতে তুলে দেয়।
  • অশোকযাত্রা | দিবাকর ভট্টাচার্য | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    পাঠক : কলকাতা : 2022-04-15
    অনুগ্রহ করে লেখকের অন্যান্য রচনার সাথে এটিকেও যোগ করার লেখকনামের হাইপারলিংকটি আপডেট করে দিন।

    সম্পাদকের উত্তর: অনেক ধন্যবাদ ত্রুটিটি জানানোর জন্যে। এখন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
  • সম্পাদকীয় | | সংখ্যা : ৮৬ | April 2022
    দীপঙ্কর চৌধুরী : কলকাতা : 2022-04-15
    একটি সত্যিকারের চিন্তাউদ্রেককারী সম্পাদকীয়!
  • Older Comments - পুরোনো মন্তব্য/চিঠি