ঐ ওপারটায় বাংলাদেশ। মাঝে বয়ে চলেছে কূল-ছাপানো ইছামতী। আর এপারে এ বঙ্গের টাকির ঘাটে শঙ্ক্ষিণী ও মোহাব্বতের নৌকো ভিড়ল। চারদিক আশপাশ দেখে শঙ্ক্ষিণী তার প্রেমিকা মোহাব্বতকে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল— “চল এই নরক থেকে আমরা পলায়ে যাই।’ ১৬ মি. মি. অ্যারিফ্লেক্স বি.এল. ক্যামেরা বিবেক ব্যানার্জী ধীর গতিতে প্যান করে শঙ্ক্ষিণী ও মোহাব্বতকে মিড শট কম্পোজিটে ধরে পরিচালক ‘কাট’ বললেন। সেই মুহূর্তে চার দিন চার রাত টানা শুটিং-এর সর্বগ্রাসী ক্লান্তিকে বীর পরাক্রমে দূরে সরিয়ে রাখলেন পরিচালক গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আমরা যারা তাঁর হৃদয়বাহক তাদের কাছে, পরম আদরের ‘মণি-দা’। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া অবিন্যস্ত চুল, না-গোছানো জমে থাকা দাড়ি, বেশ কয়েকদিনের না-পাল্টানো ধূসরিত নীল জিন্স, কাঁধ-ঝোলা ঢলঢলে টি-শার্ট আর ‘দু হাতের ফাঁকে চারমিনার’... মণি-দা তখনও ভরা-শ্রাবণের সদ্যজাত ফুলের মতো... কোন কৃত্রিমতা নেই, ভয়ের ভণিতা নেই। ঝরঝরে তরতাজা সে যুবক মণিদাকে বড় কাছে, নিবিড়ভাবে পেয়েছিলাম সেদিন থেকে। সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ বোধহয় এভাবেই ঘটে। যেখানে ভাবনার শেষ নেই, সেখানে সময়ও সীমাহীন। তাই ক্লান্তি খায় না সময়। দূরে গাছতলার বাহারি সেট-এ বাউল পবন দাস জব্বর জোব্বা গায়ে চাপিয়েছে, পায়ে বেঁধেছে ঘুঙুর, সুরে বেঁধেছে একতারা। রাতের শিডিউলে তার গানের সিকোয়েন্স তোলা হবে-- “দরিয়ায় আইলো তুফান, আয় কে যাবি রে? হেসে হেসে যাব ভেসে মদিনা নগরে। ধর হাল শক্ত হাতে, ভয় কি? নবি সাথে...টলবে না নৌকো ভীষণ ঝড়ে রে...।” এক ইউনিট শিল্পী- কলাকুশলী-কর্মীবৃন্দ। যেন এক সুরে গাঁথা এক প্রাণখোলা পরিবার, যার কর্তামশাই স্বয়ং শ্রী গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
১৯৮২-তে প্রফুল্ল রায়ের ‘নাগমতী’ উপন্যাসটির সান্নিধ্যে আসার পর দক্ষিণ বঙ্গের বেদে বেদেনীদের জীবনকাহিনী আর তাদের সমাজভিত্তিক উপস্থিতি সম্পর্কে লিখিত মনের মতো একটা গল্প পেয়েছিলেন গৌতম। মোহাব্বত এক চুক্তিভুক্ত শ্রমিক। বন্দী জীবনের রোজনামচা থেকে মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন-সন্ধানে কাতর এক যুবক চরিত্র। দেশের এই দিকটা জল বাংলা। সুন্দরবনের গ্রাম বাংলা। গ্রামে গ্রামে জড়িবুটি ফেরি করে বেদে বেদেনীদের দল। মোহাব্বতের কাছে ওদের ঐ জীবন ধরা দেয় সেই মুক্তমনের রূপক হিসেবে। শঙ্ক্ষিণী ঐ দলের যুবতী বেদেনী। ঘটনাচক্রে প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে শঙ্ক্ষিণী ও মোহাব্বত। বেদেনীদের জীবন স্বাধীন মননের। সেখানে প্রেম, বিয়ে, পরিণতি — এক অনতিক্রমে প্রবাহ। তাদের প্রেমে প্রধান বাধা দেয় বেদেজীবনের সম্প্রদায়-প্রধান আসমানী। বৃদ্ধা ধরে ফেলে শঙ্ক্ষিণীর মনের আয়না। মোহাব্বত বোঝে শঙ্ক্ষিণীও তারই মতো সমাজবন্দী আরেক চরিত্র। মোহাব্বত ও শঙ্ক্ষিণী পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু বড় কষ্টের সে মুক্তির পথ। মোহাব্বত ও শঙ্খিনীর নিজের সম্প্রদায়গোষ্ঠীর বাধাসৃষ্টিকারী লোকজন তাদের তাড়া করে। বেদের দলে জুলফিকর আসমানীর কর্তৃত্বকে মেনে নিতে পারে না। সে আসমানীকে হত্যা করে শঙ্খিনীদের মুক্তির পথ পরিষ্কার করে দেয়। বেদেজীবনের দেবী বিষহরিই যেন তাদের মুক্তির সেই সোপান, যে মহিমার স্নেহাচ্ছদনে ঢাকা থাকে বেদেজীবনের অজস্র অধরা স্বপ্নালোক।
কৈশোরকালের সেই সময়টায় কালের নিয়মে আমার জীবনেও এসে পড়ল ১৯৮১-৮২ সাল। টাকির সেই দিনগুলোতে আমার জীবনে প্রথম ক্যামেরা দেখা, প্রথম শুটিং দেখা, সিনেমার সংসারে প্রথম আসা। কলকাতার সিনেমাপট এই প্রজন্মের কল্পনাতীত। ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’র মতো এমন সিনেমা নিবেদিত প্রাণী সংখ্যাগুরু ছিল। আসলে সিনেমা, তখন যেটা সেলুলয়েডে মোড়া রূপকথা ছিল, তার নির্মাণে অনেক সিঁড়ি, অনেক ধাপ, অনেক অনেক যত্ন আর ভালোবাসায় জড়ানো এমন এক মাধ্যম, যার প্রতিটি ফ্রেমে সিনেমাকারদের নিভৃত পদসঞ্চারণ রূপোলী পর্দায় প্রক্ষিপ্ত হত। এর সাথে জড়িয়ে থাকতো নানান প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি, শেষমেষ ছবি ঠিকঠাক দাঁড়াবে কি না, তাই নিয়ে সংশয় আর প্রযোজকদের লগ্নি ফেরত পাইয়ে দেওয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। আজকের মতো ভিডিও বা ডিজিটাল টেকনোলজি তো ছিল না। খুব শক্ত ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণে রপ্ত হওয়া, শক্ত ছিল সুযোগ পাওয়া।
সেলুলয়েড ছবি করার একটা দীর্ঘ পদ্ধতি ছিল। তার ওপরে পিকচার নেগেটিভ স্টকের দাম আকাশ ছোঁওয়া। শুধু কি স্টক? ছবি তৈরির ছিল হাজার হ্যাপা। শুটিং হত ফিল্ম-ক্যামেরায় সেলুলয়েডের রিল ভরে। Sync শব্দ রেকর্ড করা হত নাগরা যন্ত্রের ম্যাগনেটিক টেপের spool-এ। শুটিং-এর পরে তোলা ছবির রিল পরিস্ফূটনের জন্য পাঠানো হত সিনে ল্যাবরেটরিতে। শুটিং-এর আদ্যোপান্ত তোলা শট ল্যাবরেটরিতে পরিস্ফূটনের পর লাইট কারেকশান না করে সেই শোধন করা নেগেটিভ থেকে তৈরি হত ওয়ান লাইট পজিটিভ প্রিন্ট, যেগুলো ক্যানবন্দী হয়ে ফের ফেরত আসত পরিচালকের জিম্মায়। পরিশোধন করা সম্পূর্ণ নেগেটিভটি থাকত ল্যাবরেটরিতে। ল্যাব থেকে আসা এই প্রিন্টটাকে নিয়ে মুভিআলা মেসিনে চলত কাটাছেঁড়া। নাগরায় তোলা ম্যাগনেটিক টেপকে ৩৫ মিমি ম্যাগটেপে ট্র্যান্সফার করে একেকটা ট্র্যাক তৈরি করা হত। সম্পাদিত পজিটিভ প্রিন্টের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো ম্যাচ করে দৃশ্য ও শব্দের সমান্তরাল টেনে মার্কিং করে রাখতে হত। শব্দহীন জায়গাগুলো সাইলেন্ট সাউন্ড স্ট্রিপ বা এস. এস. টি. দিয়ে ম্যানেজ করা হত। শব্দের হয়তো আলাদা আলাদা অনেকগুলো ট্র্যাক থাকতো। ডায়লগ ট্র্যাক, মিউজিক ট্র্যাক, গানের ট্র্যাক, এফেক্ট সাউন্ডের ট্র্যাক (যেমন পাখির ডাক, জলের আওয়াজ, দরজা খোলা বন্ধের আওয়াজ ইত্যাদি)। সে সময়ে সঙ্গীত - সেটা গানই হোক বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক- বেশ তরিবৎ করে, বহু পরিশ্রম করে আর বারবার রিহার্সাল দিয়ে সাউন্ড স্টুডিওতে রেকর্ডিং করতে হত। সেখানেও, বলাই বাহুল্য, অনেকগুলো ট্র্যাকই হত। শব্দ বা ধ্বনির সেই অনেক ট্র্যাক মিলিয়ে রি-রেকর্ডিং বা শব্দ পুনর্যোজনা করা হত, যার মাধ্যমে সব ট্র্যাকের শব্দ মিলিয়ে একটা সিঙ্গল মিক্সড ট্র্যাকে নিয়ে আসা হতো। স্বাভাবিকভাবেই সেই ধ্বনি ট্র্যাকটি হয়ে যেত রাশ প্রিন্ট থেকে সম্পাদিত অবস্থায় তৈরি হওয়া ফাইনাল রাফ কাটের সাথে সমান্তরাল। এবার বসার পালা শুরু হতো ল্যাবরেটরিতে। সম্পাদিত পজিটিভ প্রিন্টের স্প্রকেটগুলোর পাশে edge mark লেখা থাকত, যে নম্বরগুলো হুবহু থাকত সেই ল্যাবেরেটরিতে সযত্নে রেখে দেওয়া নেগেটিভে। সে edge mark দেখে দেখে নেগেটিভ কাটা হতো স্প্লাইসারে, ভারত কোম্পানির লোহার ব্লেড দিয়ে শট জয়নিং-এর অংশে চেঁছে ফিল্ম সিমেন্ট (স্পিরিট মেশানো এক ধরনের আঠা) দিয়ে চিপে আটকে দেওয়া হত। নেগেটিভে যাতে আঙুলের ছাপ বা ধুলোময়লা না থাকে, সেজন্য গ্লাভস পরে অত্যন্ত সতর্কভাবে তা কাটতে হতো। সেই নেগেটিভ নিয়ে ক্যামেরাম্যান বসে শট দেখে দেখে লাইটের নানান রকমফের বলে দিত ল্যাবরেটরি ইন-চার্জকে, ফাইনাল প্রিন্ট বের করা সাউন্ডের ম্যাগনেটিক টেপের রি-রেকর্ডিং ট্র্যাকটি একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সাউন্ড নেগেটিভে ট্র্যান্সফার করে সেটা পরিশোধন করে সম্পাদিত সম্পূর্ণ পিকচার নেগেটিভের সাথে মার্ক করে প্যারালাল টানা হতো। সব শেষে পিকচার নেগেটিভ আর সাউন্ড নেগেটিভ দিয়ে ফাইনাল প্রিন্ট বের করা হতো। ল্যাবরেটরি থেকে নির্গত প্রথম প্রিন্টটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতো সেন্সর প্রিন্ট। মোটামুটি এটাই ছিল সিনেমা তৈরির নেপথ্যে টেকনিক্যাল দিকের গোছানো সংসার। এর বাইরে, আরেকটা বৃহত্তর পৃথিবী ছিল, আর তা হলো ছবির খুঁটিনাটি--পরিচালনার সব দিক মাথায় নিয়ে কতটা নান্দনিকভাবে পরিবেশন করা যায়। চরিত্র নির্বাচন থেকে শুরু করে, মেক আপ, কস্টিউম, সেট, শট নির্বাচনের জন্য ক্যামেরা অ্যাঙ্গল, সিকোয়েন্স কনটিনিউটি, সম্পাদনা, শব্দ নির্বাচন, মিউজিক ডিজাইনিং--এমন অজস্র বিষয়কে সংঘবদ্ধ করে তাঁর পছন্দের কাহিনী আর চিত্রনাট্যকে নিজের মনের মতো উপস্থাপনা করে পরিচালক তাঁর মনে ধরা সিনেমার ক্যানভাসকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করাটাই ছবির পরিচালকের বিশেষত্ব। সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে বিষয়টি জটিল ও ধোঁয়াশার ঢাকা অচেনা কোন জগৎ মনে হতে পারে। কিন্তু সিনেমা নিয়ে যাঁরা দিনরাত ভাবিত, যাঁরা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে নিজের সঙ্গে, নিজের মনের সাথে চর্চা করে থাকেন, তাঁদের কাছে এই মাধ্যমটির সমস্ত দিকগুলোই সামগ্রিকভাবে ও স্বাভাবিকভাবে ধরা দেয়। পরিচালকের মনের মাঝে গড়ে ওঠে সিনেমাটি, তার প্রকাশ ঘটে বাস্তব প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে তার যথার্থ রূপদান পর্বের ভিত্তিতে।
বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই নিভু নিভু সেলুলয়েডের অস্তিত্ব আজ সম্পূর্ণ নির্বাপিত। আমরা যারা, আশির দশকের ছবি করিয়ের দল, এই সেলুলয়েডের সাথেই নিজেদের গাঁটছড়া বেঁধেছিলাম। অনেক সিনিয়ার, অনেক মাঝবয়সি, যাঁরা সিনেমার স্বর্ণযুগের কাণ্ডারি, তাঁদের দেখেছি, সেলুলয়েড থেকে ভিডিও ট্রানজিশনের এই সময়টায় একটা অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতেন। অজানা টেকনোলজিকে সঠিকভাবে সিনেমার কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা যাবে তো? কারণ, সিনেমার সাথে, সিনেমার ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত হাজার লক্ষ কুশীলবের কাছে সিনেমা শুধু তো নেশা নয়, পেশাও। কত জানা-অজানা কলাকুশলীদের ঘর-কুটো দেখেছি, দরমা ডিঙানো দালান-আছড়ে পড়া নীল চাঁদের রুপোলি মায়া দেখে স্বপ্ন-সন্ধানী এক বুক আশার জোয়ারে ভাসতেন- ঐ বুঝি অমুক পরিচালক অমুক ছবি শুরু করবে বলে! ঐ বুঝি অমুক স্টুডিওয়ে অমুক ছবির সেট লেগেছে, কাজে ডাকলো বলে! আসলে আমার মনে হয়, সারা দেশময় সত্তর ও আশির দশক জুড়ে দীর্ঘ চলচ্চিত্র আন্দোলনের ফলে, দেশ জুড়ে উঠে আসা এক ঝাঁক বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ, সিনেমার পুরনো কিছু সংস্কার পরিহার বা পরিমার্জন করে নতুন ধারার চলচ্চিত্র তৈরি করার লক্ষ্যে সচেষ্ট ছিলেন।
কলকাতা। কলকাতা সিনেমার চিত্রাবলী। স্বচক্ষে পরখ করা ঘটনাবলী। লড়াই করে বেড়ে ওঠা সিনেমাকারদের স্বপ্ন-সম্পূর্ণতা আর লড়াই করে হারিয়ে যাওয়া তেমনই কত তরুণ স্বপ্নের অসম্পূর্ণতা--দুইয়ে মিলে মেলবন্ধনেই আমাদের সিনেমাজগৎ। কেউ জয়ী না হতে পারলেও আমাদের সিনেমা সংসার সমব্যথী হতো। রেষারেষি থাকলেও তা অতি প্রচ্ছন্ন ছিল, ঢাকা কৌটোর মধ্যেই। আসলে বাংলা বা আঞ্চলিক বা ভারতীয় সিনেমার চারিত্রিক বা বৈশিষ্টগত একটা ট্রানজিশান হচ্ছিল এর আগের বেশ কিছুকাল ধরেই। ঋত্বিক কুমার ঘটককে ১৯৭৬ সালের বেশি বাঁচিয়ে রাখতে পারে নি এ দুর্ভাগা দেশ। সত্যজিৎ রায় ভারতীয় ছবির নান্দনিক উৎকর্ষতার উচ্চতর পর্যায়কে মেলে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। মৃণাল সেন তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক সাহসী ইস্যুগুলোকে তাঁর সত্তর দশকের প্রারম্ভে নির্মিত ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন। নব্য চলচ্চিত্রকারদের উদ্দীপ্ত করেছেন তাঁর র্যাডিকাল সিনেমা সত্তার মধ্যে দিয়ে। মুম্বাইতে বসে শ্যাম বেনেগাল ততদিনে করে ফেলেছেন অন্য ধারার মুক্তমনের ছবি ‘অঙ্কুর’ (১৯৭৩), ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫), ‘মন্থন’ (১৯৭৬) আর ‘ভূমিকা’ (১৯৭৭)-র মতো কালজয়ী সৃষ্টি। পুনের ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে এক ঝাঁক সিনেমা উৎসাহী তরুণদল নতুন ধারা, নতুন ফর্ম, নতুন বাস্তবভিত্তিক কনসেপ্ট আর কনটেন্টকে সঙ্গী করে নিজেদের আঞ্চলিক ছবিগুলোকে আরো উৎকর্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাচ্ছেন। কলকাতা তো ব্যতিক্রমী! পুনের ফিল্ম ইন্সটিটিউটের পাশ না করা বৃত্তের বাইরে বসেও শুধু নিজেদের ভালো কাজ কষ্ট করে তৈরি করে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন আন্তর্জাতিক স্তরে। গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, রাজা মিত্র, সৈকত ভট্টাচার্য, সনৎ দাশগুপ্ত বা নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো ভারতীয় নতুন সিনেমার ডায়েরী লিখতে বসেছিলেন মণি-দা (গৌতম চট্টোপাধ্যায়)। ১৯৮২। শুটিং শুরু ‘নাগমতী’র। আর আমার জীবনে প্রথম সিনেমার সান্নিধ্যে আসা। বয়স আমার তখন সবে আঠারোর শেষ, উনিশে প্রবেশ।
(ক্রমশ)