বাড়িওয়ালা শেষমেষ অতি দয়া পরবশ হয়ে খালি জমির ছোট্ট অংশে দরমার বেড়া দেওয়া এক কুঠুরির ঘর বানিয়ে দিতে রাজি হলেন। সময়টা ১৯৭৯র শেষ ভাগ। নাকতলার দ্বিতীয় স্কিমে সেই ঘরে প্রথম তৈরী হলো সিনে সাউথ। আমরা, যারা তখন তরুণ, বড় বেশি দায়বদ্ধ হয়ে পড়লাম মানুষকে ভালো সিনেমা দেখানোর জন্য। বান্টি সিনেমা হলের দোতলার পূব দিকে মিনি বান্টি। দর্শকদের জন্য আসন, প্রোজেকশান রুম, কাচ ঢাকা বাহারি পর্দা — সবই ছিল। কিন্তু প্রোজেক্টর ছিল না। তাই, সিনে সাউথের সদস্যদের ছবি দেখানোর জন্য আমাদের প্রোজেক্টর ভাড়া করে আনতে হত।
তখন এই ধরনের ছোট ছোট হলে ছবি দেখানোর জন্য ১৬ মি. মি. প্রোজেক্টরই ভাড়া করে আনা সুবিধে ছিল। ভবানীপুরে বলরাম বসু ঘাট রোডে মান্নাদা ছিলেন সিনেমা প্রোজেক্টর সাপ্লাই দেবার এক কারবারি। আর ৬নং ম্যাডান স্ট্রীটের দোতলার একটি ঘরে ছিল দীপক দত্তের Mini Movies-এর অফিস। দীপকবাবু আবার, প্রোজেক্টারের সাথে সিনে ক্লাবগুলোতে প্রদর্শনের জন্য ব্যতিক্রমী বেশ কিছু ছবির প্রিন্টও সস্তায় ভাড়া দিতেন। এই দীপকবাবুর ম্যাডান স্ট্রীটের দপ্তরেই আমরা পেয়েছিলাম ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ আর ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, তপন সিংহের ‘ক্ষণিকের অতিথি’, মৃণাল সেনের স্বল্প দৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্র ‘ইচ্ছাপূরণ’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাহিনী অবলম্বনে)। অতি লোভনীয় ছিল ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্র যা ঐ সময় সিনে ক্লাবগুলোর সার্কিটে ঘুরতো। এর মধ্যে ছিল হরিসাধন দাশগুপ্তর ‘পাঁচথুপি’, ‘কোনারক’, শান্তি চৌধুরীর ‘Folk music of Punjab’ আর অবশ্যই, ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত সেন্সর-বোর্ড আক্রান্ত ব্যান্ড ছবি — ‘আমার লেনিন’। ওই সময়টা কলকাতা শহর অনেকটাই বামপন্থী মেজাজের ছিল। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে সমকালীন রাজনৈতিক ভাবধারা মিশে গেছিল।
‘আমার লেনিন’ তথ্যচিত্রটি ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে খানিকটা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ঋত্বিকবাবু তৈরী করেছিলেন। ছবিটির মুখ্য বিষয়বস্তু ছিল জোতদারদের শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকদের প্রতিবাদ। যে কৃষকরা জানে না-- লেনিন কে? যারা আদৌ অক্টোবর বিপ্লবের সাথে পরিচিত নয়। অথচ দূর বাংলার প্রান্তিক কৃষকেরা সেই লেনিনের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক প্রতিবাদী আন্দোলনে শরিক হল, যার ঢেউ আছড়ে পড়েছিলো কলকাতা শহরের বৃহত্তর বুকে। একটা মিছিল যা ছিল লেনিনের স্মরণে, সেই মিছিলে পায়ে পা মেলালো বিদ্রোহী কৃষকেরা। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের সুরারোপিত এই তথ্যচিত্রে ব্যবহৃত গণসংগীতগুলো এখন তো দুষ্প্রাপ্যও বটে, একটা সম্পদও বটে।
ফলে যা হবার তাই হল। ঋত্বিকবাবুর এই ছবিটি নিয়ে ১৯৭০ সাল জুড়ে সেন্সর বোর্ড ময়না তদন্ত করেই ছাড়লো। সেন্সরের ছাড়পত্র মিলল না। ওদিকে সোভিয়েত দেশ ও হাঙ্গেরী থেকে ছবিটি ওদেশে প্রদর্শনের জন্য বারবার অনুরোধ আসছিলো। অর্থকষ্টে আর মানসিকভাবে ঋত্বিকবাবু তখন জেরবার। অবশেষে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপে অবশেষে সেই তথ্যচিত্রটি সেন্সরের ছাড়পত্র পায়, কিন্তু মুক্তি পায়নি। এখন অনেকেই এই ছবিটি দেখতে চান, হদিশ জানতে চান, কিন্তু দীপকবাবুর মৃত্যু হয়েছে, ম্যাডান স্ট্রীটের অফিস উঠে গেছে, সিনেমার ল্যাবরেটরি বন্ধ হয়ে গেছে, নিঃশব্দে বিদায় নিয়েছে সেলুলয়েডের যুগ।
সেক্ষেত্রে সেই সময়ে আমরা যারা সিনেমা ক্লাবগুলোর আন্দোলনের সাথে যুক্ত, তারা তো নিতান্তই সৌভাগ্যবান যে অনেক হারিয়ে যাওয়া ছবি হারিয়ে যাবার আগে আমরা দেখেছিলাম। দেখতে পেরেছিলাম।
সিনে ক্লাব আন্দোলনে যেটা সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল, তা হল ভালো আন্তর্জাতিক মানের ছবি জোগাড় করা। একটা পেরেন্ট বডি ছিল, ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (FFSI). সে সময়ে জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন অজয় দে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে কাজ করতেন, আর সারা দিন-রাত সিনেমা চর্চা। বিদেশী ছবিগুলো মূলত তাদের কাছ থেকেই পাওয়া যেত। আভাঁ গার্দে ও নিওরিয়্যালিস্ট যুগের বেশ কিছু ফরাসী, ইতালীয় ও জাপানী ছবি কলকাতায় আসতো পুনায় ন্যাশানাল ফিল্ম আর্কাইভ থেকে। অর্থাৎ, জাঁ ককতোর Orpheus, মার্সেল কার্নের The children of Paradise, জাঁ রেনোয়াঁর The Rules of the Game, ভিত্তোরিও ডি সিকার Bicycle Thief, কুরোসাওয়ার Rashoman--এ সব তো প্রদর্শনীতে ঘুরে ফিরে আসতো। কিন্তু নব-তরঙ্গের ফরাসী সিনেমা অর্থাৎ গদার, ত্রুফো, রোমার, রিভেট, শ্যাব্রল বা রেনের ছবির জন্য আমাদের দৌড়তে হতো ২৪ নম্বর পার্ক ম্যানসনে (পার্ক স্ট্রীট-এ)। তখন অ্যালিয়াঁস ফ্রাঁস-এর অফিস ওখানেই ছিল। কলকাতার চেকোস্লোভাকিয়ার কনস্যুলেট বা গোর্কি সদন বা ম্যাক্সম্যুলার ভবন, সবাই সক্রিয় ছিল কিভাবে সিনে ক্লাবের হাতে তুলে দেবেন তাঁদের দেশের তৈরী বিখ্যাত ছবিগুলো।
এই সব বিদেশী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতেন সিনেমাপ্রেমী ও উৎসাহী বেশ কিছু অতি প্রিয় মানুষজন। চেক কনস্যুলেটে হরেন চট্টোপাধ্যায় বড় রসিক মানুষ ছিলেন। তখন তাঁর অনেক বয়স। তবু কাচের গ্লাস ভরতি লাল চা ছিল তাঁর বড় আদরের সঙ্গী। ম্যাক্সম্যুলার ভবনের রাজু রমন বা গোর্কি সদনের গৌতম ঘোষ (পরিচালক গৌতম ঘোষ নন) — এঁরা সবসময়েই নব্যপ্রজন্মকে নানা ব্যাপারে সাহায্য করে এসেছেন, ছবি দেখা ও দেখানোর সাথী ও সারথি — এঁরা দুজনেই।
সিনে ক্লাব আন্দোলন কলকাতায় শুরু হয়েছিল দেশের স্বাধীনতার বছরেই। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে পরেই সত্যজিৎ রায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিল দেশের দ্বিতীয় আর শহরের প্রথম ফিল্ম ক্লাব — ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি। সঙ্গে সে সময়ের আরো অনেক চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক কিংবদন্তী — চিদানন্দ দাশগুপ্ত, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, হরিসাধন দাশগুপ্ত, আরো অনেকে। ১৯২৫ সালের আইজেনস্টাইন পরিচালিত সোভিয়েত নির্বাক ছবি Battleship Potemkim-এর প্রদর্শন দিয়ে সে ক্লাবের সূচনা হয়েছিল। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি পরবর্তীকালে বিদগ্ধ মহলের সমীহ আদায় করে নেয়, শুধু এজন্য নয় যে ভালো ছবি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রণী ভূমিকার জন্য। কিন্তু সিনেমা চর্চার পরিকাঠামো তৈরী করার ক্ষেত্রে এক সাথে এত অভিজাত সিনেমা-পণ্ডিতের এমন সক্রিয় এবং সুসংগঠিত প্রয়াস আগে কখনও ভারতবর্ষে দেখা যায়নি। যদিও প্রথম দিনে খুব বেশিদিন এই ফিল্ম সোসাইটি কাজ করতে পারেনি, কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী তৈরী ও সাফল্যের পরে তাঁরই উদ্যোগে এবং চিদানন্দ বাবু, বিজয়া মূলে, দীপ্তেন্দু প্রামাণিকদের সক্রিয় সহযোগিতায় ১৯৫৬ সালে আবার নতুন ভাবে তৈরী হয়েছিল ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি।
‘চলচ্চিত্র’ বলে মহামূল্যবান পত্রিকা বের হত এই ফিল্ম সোসাইটি থেকে। প্রচ্ছদ অলংকরণ, ভেতরে ব্যবহৃত বিখ্যাত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকারদের মুখাবয়বের স্কেচ থেকে শুরু করে ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ সংক্রান্ত লেখা ও সম্পাদনার খুঁটিনাটি সামলাতেন সত্যজিৎবাবু নিজেই। ফলে, এই ‘চলচ্চিত্র’ পত্রিকাটি ‘অন্য’ সিনেমার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছিল, তা বলাই বাহুল্য।
পরবর্তীকালে, সিনে ক্লাবগুলোর ভূমিকা চলচ্চিত্র আন্দোলনে একটা গভীর ছাপ ফেলেছিল। প্রচুর সিনে ক্লাব হয়েছিল, তার মধ্যে সিনে ক্লাব অফ ক্যালকাটা, সিনে সেন্ট্রাল, ক্যালকাটা ফিল্ম ইন্সটিটিউট, নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি, সিনে কমিউন (যাদবপুর), ইস্ট ক্যালকাটা সিনে ক্লাব, ঋত্বিক সিনে সোসাইটি, সিনে সাউথ (নাকতলা)— এগুলো খুবই উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আর সিনে ক্লাবগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন করতেন মূলত সিনেমার সাথে জড়িত পরিচালকেরা, চিত্রনাট্যকারেরা, সাংবাদিকরা আর কিছু সংখ্যক শিল্পী ও কলাকুশলীরা। কলাকুশলীদের মধ্যেও অধিকাংশই ছিলেন শিল্পমনস্ক, যাঁরা সমান্তরাল সিনেমায় বিভিন্ন খ্যাতনামা পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে, সিনেমায় কিভাবে নতুন টেকনিক্যালিটির প্রয়োগ হচ্ছে, তা জানার জন্য উৎসাহী ব্যাখাকারেরা।
শিল্পীদের মধ্যে সিনে ক্লাব-উৎসাহী অনেককেই দেখেছি ভালো সিনেমা দেখতে উদ্গ্রীব এবং সেই সিনেমা নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো সিনেমার চোখ তৈরী করে দেবার মনন সৃষ্টি করতে।
ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটিস অফ ইন্ডিয়া বা FFSI ১৯৫৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির অফিস ছিল কলকাতায়, চিত্তরঞ্জন এভিনিউর ওপর। প্রাথমিকভাবে, ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি ছাড়াও দিল্লী, বোম্বে, মাদ্রাজ, পাটনা ও রুড়কির ফিল্ম সোসাইটি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করেছিল। এই FFSI তৈরীর পেছনেও ছিলেন সত্যজিৎ রায়, যিনি তাঁর ছবিগুলোর আন্তর্জাতিক বিস্তৃতির প্রেক্ষাপটে অনুভব করেছিলেন ভারতের নব্য প্রজন্মকে কিভাবে আন্তর্জাতিক ছবিগুলো সম্পর্কে সচেতন করানো যায় আর ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার ভালো ছবিগুলোকেও কিভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আন্তর্জাতিক সিনেমা বলতে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ বুঝতেন হলিউডের সিনেমা, যেগুলো দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তি পেত। কিন্তু হলিউডের সিনেমার বাইরেও তো আরেকটা পৃথিবী ছিল। সোভিয়েত যুগের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলো তখন ইতিহাস, ফরাসী আর ইতালীয় নব্য-বাস্তবতাধর্মী (Neorealist) ছবিগুলো তখন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রমহলে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। এই ছবিগুলো দেখানোর দুর্লভ সুযোগ এনে দিল FFSI. এমন কি, হলিউডে ব্রাত্য চার্লি চ্যাপলিনের বেশ কিছু ছবিও সেই লিস্টে ছিল, ছিল জাপানী ও পূর্ব ইউরোপীয় একগুচ্ছ ছবির ডালি।
FFSI এর প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ছিলেন সত্যজিৎ রায়, সহ-সভাপতি ছিলেন তিনজন — মাদ্রাজ থেকে ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী শ্রীমতি আম্মু স্বামীনাথন, বোম্বে থেকে ছিলেন রবার্ট হকিন্স আর দিল্লীর প্রতিনিধি ছিলেন এস. গোপালন। আর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শ্রীমতী বিজয়া মূলে এবং চিদানন্দ দাশগুপ্ত। এমন কি, ঐ সময়ে ফেডারেশানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল আমাদের দেশের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রীরও — শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও শ্রী ইন্দ্রকুমার গুজরালেরও। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়, নিমাই ঘোষ (‘ছিন্নমূল’-খ্যাত), দীপ্তেন্দু প্রামাণিক, অরুণা আসফ আলি বা শ্যাম বেনেগালের মতো ব্যক্তিত্বদের সর্বাঙ্গীন উপস্থিতি ফেডারেশানের কার্যক্রমকে শোভিত করেছিল — সন্দেহ নেই।
কলকাতার সিনে ক্লাবগুলো স্বভাবতই ফেডারেশানের সদস্যভুক্ত হত। যতদিন না এই সদস্যপদ পাওয়া যেত, ক্লাবগুলোকে তাদের নিজস্ব দর্শকদের আন্তর্জাতিক ছবি দেখানোর জন্য অবশ্যই নির্ভর করে থাকতে হত বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট, এমব্যাসী বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর ওপর।
তখন তো ডিভিডি বা সিডির যুগ নয়। একেকটা ছবি থাকতো ৩৫ মি. মি. বা ১৬ মি. মি. ১২-১৪ টা রীলের ক্যানবন্দী। খুবই ভারি হত। আর সিনে ক্লাবগুলোর আর্থিক দুর্গতির জন্য ঐ ভারি রীলের ক্যান বয়ে নিয়ে আদান-প্রদান খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। অনেক সময়ে ট্যাক্সি ভাড়াও জুটতো না। নিজেদের গাঁট থেকে টাকা খরচ করে মিনিবাস বা বাসে চাপিয়ে সিনে ক্লাব প্রাঙ্গণে সেই ক্যান-বন্দী বস্তা হাজির করতে হত।
কিন্তু সে সব কষ্ট বা ক্লান্তি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যেত যখন ছবির প্রদর্শনীর পরে দর্শকরা তৃপ্ত হয়ে সিনেমা হল থেকে বেরতেন। আমাদের মন ভরে যেতো। যাক্, তা হলে সাধারণ মানুষকে আন্তর্জাতিক ভালো ছবি দেখানোর প্রয়াস সার্থক হল তবে। সে অর্থে, সিনে ক্লাব আন্দোলন ভারতীয় সিনেমার নতুন প্রজন্মকে নতুন ধারার ছবির ভাবনাকে উসকে দিয়েছিল, একটা প্রেক্ষিত রচনা করতে সাহায্য করেছিল।
(ক্রমশ)