• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | রম্যরচনা
    Share
  • সে (২) : সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়
    | ২ | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২



    আমাদের ওদিকে টমুদ্র কিছু ছিলো বটে, কিন্তু সমুদ্র একেবারেই ছিলো না। তার ফলে এদিক ওদিক তাল খেজুর অনেক দেখা গেলেও কোনো নারকোল গাছ ছিলো না। ডাব পাওয়া যেতো না, নারকোল ছিলো দুর্মূল্য।

    তাই মা যখন ওখানে আসতেন তখন নানা জনের জন্য নানা জিনিসের মধ্যে কয়েকটা নারকোলও থাকতো। দিদাও ক'দিন মনের সুখে হরেক রকম নারকোলের মিষ্টি বানাতেন।

    পরিষ্কার করে বঁটির মাথার কুরুনিতে কুরলে নারকোলের অন্ততঃ একটা মালা অনেক লোকের নানা রকম কাজে লেগে যেতো। প্রায়ই নুন রাখা হতো। এমন কি আমাদের বাড়ির কাজের লোক চম্পার মার শওহর চম্পার বাবা হরিয়া ওরকম একটা মালায় চা খেতো - বলতো ভারী আরাম, মালাটা গরম হয় না আর চা-টাও ভালো গরম থাকে। খেয়ে দেখিনি।

    একটা নারকোল বেশীদিন পড়ে থেকে ঝুনো হয়ে গিয়েছিলো। ফলে শাঁসটা ঢিলে হয়ে খসে এসেছিলো আর মালাটা বেরিয়েছিলো একদম ঝকঝকে। মানে তেল পর্য্যন্ত রাখা যায় আর কি। তা সেই লোভনীয় মালাটি গেলো হারিয়ে। ভালো।

    আচার জিনিসটা তখনকার দিনে বাড়িতে তৈরী হতো। তাই সেগুলো ছিলো খুব কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রিত। মানে স্ট্রিক্ট রেশনিং আর কি। চার পাঁচ রকম আচার (তেল আম, গুড় আম, কুল, জলপাই, জারক লেবু) মজুদ থাকতো বটে, কিন্তু সপ্তাহে দিন দুয়েকের বেশী সেসব বোয়েম খোলাই হতো না। লোভ দুর্দমনীয় হওয়া সত্বেও ঐ শৃংখলাটুকু আমরা ছোটরা মানতাম।

    এরই মধ্যে কিন্তু মাঝে মাঝে দিদার কাছে এসে একজন বেলার দিকে বলতো - ও দিদা, আজ আমাদের শুধু মকাই, ডাল তরকারি কিচ্ছু নেই, তেন্নিসা আচার দেবে গো?

    একটা চটা চায়ের পিরিচে বেশ খানিকটা আচার দিদার কাছ থেকে ম্যানেজ করে চলে যেতে যেতে আড়চোখে আমাকে দেখে নেওয়া হতো। আর আমি গজগজ করতাম - ওর বেলাতেই যত...

    কিছুদিন পর। ফেব্রুয়ারি পড়েছে। বড়দিনের ছুটিতে কলকাতার লোকেরা বেড়িয়ে ফিরে গেছে। শীত কেটে গেছে। দীঘির পাড়ের একমাত্র হলদে পলাশের গাছটার দিকে তাকিয়ে রোজ সকালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুড়ী মাঝিনরা বাজারের দিকে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে উপোসী সাপ খোপ বেরোচ্ছে, আর তাই দাদুদের বিকেলের আসর সন্ধ্যার আগেই ভাঙছে। দু একটা আমে বোল এসেছে।

    পুটুশ ঝাড়ের আড়াল থেকে ফিশ ফিশ করে ডাক - এই, আচার খাবি?

    সঙ্গে ছিলো ভীতু গণশা। বলে ফেললো - শুনলি ডাকটা? নির্ঘাৎ ডাইনী! আমায় একটু বাড়ি পৌঁছে দিবি ভাই? - হতভাগার বাড়ি ওখানটা থেকে হাত পঞ্চাশেক হবে।

    - গণেশ তুইও আয় না? - যেই না শোনা, গণশা দে দৌড়!

    গলাটা চিনেছিলাম। এগিয়ে গিয়ে বললাম - কি হয়েছে? অমন ভয় দেখাচ্ছিস কেন?

    - তুইও ভয় পেলি? এই আমাকে? দেবো নাকি কামড়ে?

    - দে না?

    - বাজে কথা রাখ। এই নে।

    দেখলাম হাতে এক ফালি তেল আম পড়লো।

    - কোত্থেকে পেলি?

    - এই দ্যাখ

    ওই আলো আঁধারিতেও স্পষ্ট চিনতে পারলাম সেই "হারিয়ে যাওয়া" ঝুনো মালাটা, ভর্তি সেটায় আচার! দিদার তেল আম!


    অলংকরণ (Artwork) : দীপঙ্কর ঘোষ
  • | ২ | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments